সাধারণত লোকসভা নির্বাচনের আগে বিরোধীরা জোট বাধতে তৎপরতা শুরু করে। পাঁচ রাজ্যের নির্বাচনের ফল প্রকাশের পর বিরোধী জোট নিয়ে শুক্রবার অনেকটা হতাশ প্রকাশ করলেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। একদিকে আম আদমি পার্টি বলতে শুরু করেছে তারা দেশে পরিবর্তন আনবে। মোদী বিরোধী মুখ হিসাবে আপ তুলে ধরতে চাইছে অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই দেশে মোদী বিরোধী প্রধান মুখ একথা আগেই ঘোষণা করেছে তৃণমূল কংগ্রেস। পাঁচ রাজ্যের নির্বাচনের ফলাফল জোট রাজনীতিকে অনেকটাই গুলিয়ে দিয়েছে।
গোয়ায় তৃণমূল কংগ্রেস জোট বেধেছিল মহরাষ্ট্রবাদী গোমন্তক পার্টির সঙ্গে। ঘাসফুল শিবির আরবসাগর তীরের ওই রাজ্যে একটিও আসন দখল করতে পারেনি। বরং ফলপ্রকাশের পর বিজেপি দাবি করছে, তৃণমূলের জোটসঙ্গী বিধায়করা তাদের সমর্থন করবে। এবিষয়ে তৃণমূল কংগ্রেস কোনও দায়িত্ব নিতে নারাজ। অর্থাৎ ভিন রাজ্যে বিজেপি বিরোধী জোট ধাক্কা খেতে চলেছে। সেক্ষেত্রে সারা দেশে জোট কতটা ঐক্য়বদ্ধ থাকবে তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে রাজনীতির কারবারিরা।
একদিকে বিজেপির জোট এনডিএ এবং অন্যদিকে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন জোট ইউপিএ। লোকসভা নির্বাচনে মূলত এই দুই জোটই প্রধান প্রতিপক্ষ। কিন্তু সম্প্রতি পাঁচ রাজ্যের নির্বচনী ফলাফলে ধরাশায়ী কংগ্রেস। ৪০৩ আসনের উত্তরপ্রদেশে মাত্র ২টি আসনেই সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে হাত শিবিরকে। পঞ্জাব হাতছাড়া হয়েছে ঝাড়ুর কাছে। সারা দেশে বিজেপি বিরোধী নেতৃত্ব নিয়ে কংগ্রেস নিজেই এখন প্রশ্নের মুখে। রাজনৈতিক মহলের মতে, বিজেপি বিরোধী প্রধান দুই দল তৃণমূল ও আপ কংগ্রেসের নেতৃত্বে বিজেপি বিরোধী জোট মামতে চাইবপ না। আপ তো একাই লড়াই করবে বলে আগেই ঘোষণা করে দিয়েছে।
এদিন বিজেপি বিরোধী জোট নিয়ে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্যে যেন হতাশার সুর। পরস্থিতি এমন জায়গায় পৌছেছে যে জোট নিয়ে তৃণমূল নিজে এই মুহূর্তে কোনও উদ্যোগ নেবে না। তবে কেউ উদ্যোগ নিলে তার পাশে থাকবে। রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচনে বিপুল জয়ের পর মোদী বিরোধী মুখ হিসাবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে তুলে ধরেছিল তৃণমূল কংগ্রেস। ভবানীপুরের উপনির্বাচনে তৃণমূলনেত্রী বলেছিলেন, ভবানীপুর পথ দেখাবে দিল্লিকে। রাজনৈতিক মহলের মতে, পাঁচ রাজ্যের নির্বাচনের ফল অনেকটাই প্রভাব ফেলেছে বিজেপি বিরোধী জোটকে। বিশেষত কংগ্রেসের হতাশাজনক ফলাফল ও পঞ্জাবে আপের জয় সেই প্রথ প্রশস্ত করেছে। সামনেই রয়েছে মোদীর রাজ্য গুজরাটে বিধানসভা নির্বাচন। ওই রাজ্যের ফলাফলও ফের জোট রাজনীতিতে প্রভাব ফেলবে বলেও মনে করছে অভিজ্ঞমহল।
একটা সময় ছিল যখন অকংগ্রেসী মুখ্য়মন্ত্রীরা নিয়মিত বৈঠকে বসত। দেশে কংগ্রেস বিরোধী জোট গড়ে তোলা হত দেশ জুড়ে। বিজেপি ক্ষমতায় আসার পর কংগ্রেসের নেতৃত্বে বিজেপি বিরোধী জোট নির্বাচনী লড়াইতে থাকলেও বিগত কয়েক বছর ধরে সেই সমীকরণ অনেকটাই বদলে গিয়েছে। রাজনৈতিক মহলের মতে, যার দরুন কংগ্রেসের জায়গা অন্য় কোনও বিরোধী দল দখল করলেই মোদী সখ্য়তা তত্ব সামনে চলে আসে। কেউ কেউ কংগ্রেসের নেতৃত্বও মানতে নারাজ। সব মিলিয়ে এটা বলাই যায়, ২০২৪ লোকসভা নির্বাচনে সার্বিক বিজেপি বিরোধী জোট খুব সহজ নয়। পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনের ফল বিজেপি বিরোধী জোটের সমীকরণ অনেকটাই স্পষ্ট করেছে।