ফের স্বমহিমায় বীরভূমের 'কেষ্ট'। এনআরসি ইস্যুতে বিজেপিকে নিশানা করে এবার হাত পা ভেঙে দেওয়ার দাওয়াই দিলেন বীরভূম জেলা তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল। এনআরসি বিরোধিতা করতে গিয়ে বীরভূম জেলা তৃণমূল সভাপতি বলেন, 'বাংলায় ডিটেনশন ক্যাম্প তৈরি করতে এলে হাত-পা ভেঙে দেওয়া হবে।'
ঠিক কী বলেছেন অনুব্রত মণ্ডল?
মন্তশ্বরে এক দলীয় সভায় এদিন বক্তব্য রাখছিলেন বীরভূম জেলা তৃণমূল সভাপতি। এই বক্তৃতার মাঝেই এনআরসি নিয়ে সুর চড়াতে দেখা যায় তাঁকে। তিনি বলেন, 'বাংলায় মুখ্যমন্ত্রীর চেয়ারে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও আমাদের শরীরে যতদিন রক্ত রয়েছে, ততদিন এনআরসি হবে না। এইসব করে ওরা ১১ লক্ষ হিন্দু ও প্রায় ৬ লক্ষ মুসলমানকে জেলে পুড়েছে। বড় বড় জেল তৈরি হচ্ছে শুধু।' এরপরেই চ্যালেঞ্জ জানিয়ে তিনি সাফ জানিয়ে দেন, 'দম থাকলে বাংলায় ডিটেনশন ক্যাম্প করে দেখাক। জেল তৈরি করতে এলে মেরে হাত-পা ভেঙে দেব।'
আরও পড়ুন: বাংলায় একজনও হিন্দু শরণার্থীকে দেশছাড়া করা হবে না: শাহ
এরপরই দিদির (মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়) প্রিয় কেষ্টর মন্তব্য ঘিরে বিতর্ক দানা বাঁধে। বীরভূমের এক বিজেপি নেতা কটাক্ষ করে বলেন, 'হাত-পা ভাঙতে এলে ওঁদেরও তা থাকবে না।' তাঁর সাফ কথা, 'দেশের সুরক্ষার স্বার্থেই এনআরসি হবে। তৃণমূল অনুপ্রবেশকারীদের মদত দিচ্ছে ভোটের জন্য। তাই এই বিরোধিতা। কিন্তু, তা কোনও মতেই মানা হবে না।'
আরও পড়ুন: জীবদ্দশাতেই মমতাকে বাংলায় এনআরসি দেখতে হবে, হুঁশিয়ারি দিলীপের
এর আগে এনআরসি ঘিরে উত্তপ্ত হয়েছে বঙ্গ রাজনীতি। প্রধানমন্ত্রী, অমিত শাহ থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পক্ষে-বিপক্ষে তরজায় জড়িয়েছেন সকলেই। পুজো উদ্বোনে কলকাতয় এসে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছিলেন 'বাংলায় এনআরসি হবেই। আমরা প্রতিটি অবৈধ অনুপ্রবেশকারীকে খুঁজে খুঁজে তাড়িয়ে ছাড়ব।' মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে 'ভূল বোঝানোর' অভিযোগ তুলে তিনি বলেছিলেন, 'এখানে মানুষকে এনআরসি নিয়ে ভুল বোঝাচ্ছে তৃণমূল। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলে বেড়াচ্ছেন, হিন্দু শরণার্থীদের ভারত থেকে তাড়ানো হবে। গুজবে কান দেবেন না। এনআরসির আগে আমরা নাগরিক (সংশোধিত) বিল আনব, যা এই সমস্ত মানুষকে ভারতের নাগরিকত্ব প্রদান সুনিশ্চিত করবে।'
আরও পড়ুন: ‘মমতা-ঘনিষ্ঠ’ পুলিশকর্তার বিরুদ্ধে বিস্ফোরক কুণাল ঘোষ
উল্লেখ্য, এনআরসি বিরোধিতায় প্রথম থেকেই সোচ্চারর তৃণমূল নেত্রী। পুজোর পর বিশেষভাবে এই বিরোধিতার সুর চড়ান তিনি। উত্তরবঙ্গ সফরে গিয়ে রাজ্যের পাহারাদার বলে নিজেকে সম্বোধনও করেন মমতা। শিলিগড়িতে তিনি বলেন, 'পশ্চিমবঙ্গে এনআরসি হতে দেব না। আমি আপনাদের পাহারাদার। একটা মানুষকেও বাংলা থেকে যেতে দেব না। যাঁরাই এ রাজ্যে বসবাস করেন, তাঁরাই বাংলার বাসিন্দা। যাঁদের বয়স ১৮ হয়েছে, তাঁদের এখনই ভোটার তালিকায় নাম নথিভূক্ত করতে হবে। আমরা রাজ্যে কোনও ভেদাভেদ মেনে নেব না। আমি মমতা ব্যানার্জি। যদি বলে শুধু ব্যানার্জি থাকবে আর কেউ থাকবে না, এটা ভাবতেই পারি না। বরং ব্যানার্জি চলে যাক, মানুষ থাকুক। এটাই আমি চাই। আপনারা নিশ্চিন্তে থাকুন। আমাদের সরকার আপনাদের পাশে ছিল, আছে, এবং আগামীতেও থাকবে।'