লোকসভা ভোটের দিন-ক্ষণ কিছুই এখনও ঘোষণা হয়নি। ফলে, আক্ষরিক অর্থে 'ভোটের ঢাকে কাঠি' বলতে যা বোঝায়, তা এখনও দূরস্ত। বড় জোর বলা যায়, একটা ভোটের আবহ তৈরি হচ্ছে দেশ জুড়ে। এই মুহূর্তে জোট বা আসন সমঝোতা নিয়ে জল মেপে চলেছেন রাজনীতির কারবারিরা। এরই মধ্যে তাই প্রার্থী তালিকা ঘোষণার তো কোনও কথাই নেই। অথচ, আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে প্রার্থীর নাম উল্লেখ করে 'প্রচার' শুরু করে দিলেন তৃণমূলের এক সাংসদ। তিনি অনুমপ হাজরা। অনুপমের এই টুইট ঘিরেই এই মুহূর্তে তোলপাড় তৃণমূলের অন্দরমহল।
সোমবার রাতে অনুপম একটি টুইট করেন। সেখানে তিনি লিখেছেন, "আসন্ন ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনে শ্রী অসিত মাল মহাশয়কে বোলপুর লোকসভা কেন্দ্র থেকে বিপুল ভোটে জয়ী করুন !!!" কিন্তু, পেশায় অধ্যাপক অনুপম হাজরা নিজেই তো ওই কেন্দ্রের সাংসদ, তাহলে তিনি হঠাৎ কেন অন্যের জন্য প্রচার করছেন? তাছাড়া, এই অসিত মালই বা কে? এই প্রশ্নের মধ্যেই রয়েছে আসল বিতর্ক।
আরও পড়ুন- রথযাত্রার টেম্পো তুলতে রাজ্যে আসছেন প্রধানমন্ত্রী
আসন্ন ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনে শ্রী অসিত মাল মহাশয় কে বোলপুর লোকসভা কেন্দ্র থেকে বিপুল ভোটে জয়ী করুন !!!
— Anupam Hazra (@tweetanupam) November 26, 2018
২০১৪ সালে বীরভূম জেলার বোলপুর লোকসভা আসন থেকে তৃণমূল কংগ্রেসের টিকিটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে জয়ী হয়েছিলেন 'কেষ্ট কাকুর স্নেহের ভাইপো' অনুমপ। বর্তমানে তিনি সাংসদ। অথচ ভোটে জেতার পর বিভিন্ন ইস্যুতে 'কেষ্ট কাকু' অর্থাৎ তৃণমূলের অন্যতম 'বাহুবলী নেতা' তথা বীরভূমের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডেলর সঙ্গে ক্রমশ দূরত্ব বেড়েছে বছর সাইত্রিশের অনুপম হাজরার। বেশ কয়েকবার সোশাল মিডিয়ায় মুখ খুলেও 'বকুনি' খেতে হয়েছে তাঁকে। সব মিলিয়ে পরিস্থিতি এই মুহূর্তে এমন জায়গায় পৌঁছেছে যে অনুমপকে তৃণমূল আর প্রার্থী করবে না বলেই মনে করছে দলেরই একটা বড় অংশ। তবে, আগামী লোকসভা নির্বাচনে অনুমপ-সহ তৃণমূলের মোট নয় সাংসদের টিকিট যে অনিশ্চিত সে কথা আগেই বলেছিল দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা। পড়ুন, সেই প্রতিবেদন- ২০১৯-এর লোকসভায় টিকিট অনিশ্চিত তৃণমূলের ৯ বর্তমান সাংসদের!
অসিত মাল কে?
বীরভূমের হাসান কেন্দ্র থেকে ২০১৬ সালে জাতীয় কংগ্রেসের টিকিটে বিধায়ক হয়েছিলেন অসিত মাল। এরপরই দল বদল করে তিনি তৃণমূলে যোগ দেন এবং এই মুহূর্তে জেলা ও রাজ্য নেতৃত্বের কাছে বেশ 'ভরসার পাত্র' অসিতবাবু। সূত্রের খবর, এই অসিত মালই এবার বোলপুর কেন্দ্র থেকে তৃণমূলের সম্ভাব্য প্রার্থী।
আরও পড়ুন- রাম রাজনীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে মমতার ‘নেতা’ মা দুর্গা
অসিত মাল তৃণমূলের সম্ভাব্য প্রার্থী হলেও, তৃণমূল তো এখনও প্রার্থী তালিকা বা তাঁর নাম ঘোষণা করেনি। তাহলে হঠাৎ কেন একাজ করতে গেলেন অনুপম হাজরা? এই প্রশ্লের উত্তরে দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা-কে অনুপম বলেন, "মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে তৃণমূলে এসেছিলাম। দলের কর্মী হিসাবে প্রচার আগেই শুরু করে দিলাম"। কিন্তু, অসিত মাল কি আদৌ প্রার্থী হবেন? অনুপমের তাৎপর্যপূর্ণ উত্তর, "সময় এলেই বুঝতে পারবেন, আমি ঠিক বলছি কি না"। তবে যদি ধরেই নেওয়া হয় যে অসিত মালই বোলপুর থেকে তৃণমূলের প্রার্থী হবেন। তবুও কি দল ঘোষমা করার আগে তিনি এ কাজ করতে পারেন? এটা তো দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ। এ ক্ষেত্রে তরুণ সাংসদের দাবি, আগে থেকে প্রচার করলে কখনও শৃঙ্খলা ভঙ্গ হয় না। দল যদি জানতে চায়, তাহলে তিনি এই জবাবই দেবেন বলেও জানিয়েছেন অনুমপ। কিন্তু, টুইট বা ফেসবুক পোস্ট করে পরে সেগুলি মুছে দেওয়ার অতীতও তো রয়েছে অনুপমের। প্রশ্ন শেষ করতে না দিয়েই সাংসদের দৃপ্ত জবাব, "এই টুইট ডিলিট করছি না"।
অনুপম কেন এ কাজ করলেন?
তৃণমূল সূত্রের দাবি, দলকে অস্বস্তিতে ফেলবে বলেই অনুমপ হাজরা টুইট করে অসিত মালের নাম প্রকাশ করেছেন। তাহলে মুকুল রায়ের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলা অনুপম কি দল ছাড়তে চাইছেন? সে প্রশ্নের সরাসরি কোনও উত্তর না দিলেও মুকুলের সঙ্গে যোগাযোগের বিষয়ে মুখ খুলেছেন অনুপম। তাঁর দাবি, মুকুল রায় তৃণমূলের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। ফলে, তৃণমূলের একদা দু'নম্বর এই নেতার সঙ্গে কমবেশি সবারই যোগাযোগ রয়েছে। তবে, তাঁর সঙ্গে মুকুলের বিশেষ যোগাযোগের কথা প্রচার করে যা বলা হচ্ছে, সেগুলি আসলে বিভ্রান্তি ছড়ানোর উদ্দেশ্যে বলে দাবি করেছেন অনুপম।
আরও পড়ুন-কেন রাম মন্দির, যুব সমাজকে বোঝাতে এরাজ্যে আদাজল খেয়ে নামবে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ
এই ঘটনা দেখে অনেকেই রসিকতা করে বলছেন, নিজের নামের প্রতি সুবিচার করেছেন অনুপম হাজরা। কারণ, অনুপম শব্দের অর্থ 'যার কোনও উপমা নেই'। তৃণমূলেও তো এর আগে এমন ঘটনা ঘটেনি। তার মানে, উপমা নেই। ফলে, অনুপমের নামকরণ সার্থক।