শোভন-বৈশাখীকে ‘ডাল-ভাত’ বলে শোরগোল ফেলে দিয়েছিলেন বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। বিজেপির সঙ্গে যখন শোভন-বৈশাখীর ‘মন কষাকষি’ চরমে, ঠিক তখনই বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়কে ‘নতুন বউ’ বলে ফের বিতর্কের জন্ম দিলেন বঙ্গ বিজেপির সভাপতি। দিলীপের এই মন্তব্যের বিষয়ে শোভন চট্টোপাধ্যায়কে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, "উনি ঠিক কী বলেছেন তা আমি জানি না। তবে রাজ্য সভাপতি হিসাবে উনি কীভাবে বিষয়টা সামলাবেন তা তাঁকেই ভাবতে হবে।"
আরও পড়ুন: বৈশাখীই ব্ল্যাকমেল করছেন, শোভনের কোনও হাত নেই: রত্না
এই মুহূর্তে রাজ্য বিজেপি নেতৃত্বের একাংশের সঙ্গে শোভন-বৈশাখীর 'সমস্যা' এমন জায়গায় পৌঁছেছে যে সম্প্রতি বিজেপি ছাড়ার সিদ্ধান্তের কথাও জানিয়ে দিয়েছিল এই জুটি। বিজেপির এই দুই নবাগতের 'সমস্যা' প্রসঙ্গে বলতে গিয়েই দিলীপের ব্যাখ্যা, বাড়িতে নতুন বউ এলে প্রথমে মানিয়ে নিতে একটু অসুবিধা হয়, পরে সেই নতুন বউই পরিবারের সকলের মন জয় করে বাড়ির বউমা হয়ে যায়। এ ক্ষেত্রেও খানিকটা তেমনই। রাজনৈতিক মহলের মতে, শোভন-বৈশাখী বিজেপির সদস্যপদ গ্রহণ করলেও দেবশ্রী ইস্যুতে গোড়া থেকেই অস্বস্তিতে তাঁরা। এ বিষয়ে ইতিমধ্যে একাধিকবার সরব হয়েছেন কলকাতার প্রাক্তন মহানাগরিক এবং তাঁর বান্ধবী তথা অধ্যাপিকা বৈশাখীদেবী। দেবশ্রী রায়ের বিজেপিতে যোগদানের সম্ভবনার প্রেক্ষিতে রাজ্য বিজেপি নেতৃত্বের উপর ক্ষোভও উগরে দিয়েছেন তাঁরা। এমতাবস্থায় দিলীপের 'নতুন বউ' মন্তব্যে যে তাঁরা চটবেন, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
আরও পড়ুন: বৈশাখীকে যৌন হেনস্থার অভিযোগ, পুলিশের দ্বারস্থ শোভন-বান্ধবী
ঠিক কী বলেছেন দিলীপ ঘোষ?
শোভন-বৈশাখীকে নিয়ে বিজেপিতে সমস্যার প্রসঙ্গে দিলীপ বলেন, ‘‘নতুন পরিবেশে কেউ এলে মানিয়ে নিতে সমস্যা হয়’’। এরপরই হেসে দিলীপ বলেন, ‘‘বাড়িতে নতুন বউ এলে, বাড়ি-ঘর, পরিবারের লোকজন চিনতে সময় লাগে। কিন্তু সেই নতুন বউ এক সময় বাড়ির সবার মন জয় করে নেয়। বাড়ির বউমা হয়ে যায়। এটা সে রকমই ব্যাপার’’।
আরও পড়ুন: মুকুলের খেলা? দেবশ্রীকে কে নিয়ে গিয়েছিলেন বিজেপি দফতরে, রহস্যভেদ করলেন বৈশাখী!
আরও পড়ুন: ‘মহুয়া মৈত্রই আমাকে দেবশ্রীর সঙ্গে কথা বলতে বলেছেন’, বিস্ফোরক দিলীপ
কৃষ্ণনগরের মাটিতে দাঁড়িয়ে দিলীপের করা এই মন্তব্য প্রেক্ষিতে কলকাতায় বিমানবন্দরে বৈশাখীকে পাশে নিয়ে শোভন চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘কী বলেছেন উনি (দিলীপ) জানি না। তবে এটা সত্য, নতুন কেউ এলে অনেক সমস্যা হতে পারে। উনি কীভাবে সেই সমস্যা মোকাবিলা করবেন, সেটা ওঁর ব্যাপার। কিন্তু সমাধান করতে গিয়ে যদি ভুল মেসেজ যায়, তাহলে তা নতুনদের পক্ষে অনেক ক্ষেত্রে গ্রহণযোগ্য হয় না, আরও সমস্যা হতে পারে’’।
আরও পড়ুন: মমতা কখনও প্রকাশ্যে খারাপ কথা বলেননি, বৈশাখীর গলায় ‘বোধোদয়ের’ সুর
উল্লেখ্য, এর আগে রাজ্য বিজেপি দফতরে শোভন চট্টোপাধ্যায়ের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বৈশাখীকে প্রথমে আমন্ত্রণ না জানানো ঘিরে জটিলতা প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে দিলীপ বলেছিলেন, ‘‘আমরা জানি যেমন ভাত-ডাল, তেমনই শোভনদা-বৈশাখীদি। আলাদা করে বলার কী আছে!’’ দিলীপের এই 'ডাল-ভাত' মন্তব্যের প্রেক্ষিতে ‘অসন্তুষ্ট’ বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায় সেদিন বলেছিলেন, ‘‘আমি ঠিক বুঝলাম না, দিলীপদা কী বলতে চেয়েছেন। কে ডাল, আর কে ভাত তা আমি জানি না…আমার স্বতন্ত্র পরিচয় আছে’’।
এদিকে, সোমবার রাতেই দিল্লিতে মুকুল রায়ের বাড়িতে সাড়ে ৩ ঘণ্টা কথা হয় শোভন-বৈশাখীর। বৈঠক শেষে সংবাদমাধ্যমে মুকুল রায় দাবি করেন, ‘‘শোভন-বৈশাখী বিজেপিতেই ছিলেন, আছেন’’। কিন্তু এদিন কলকাতা ফিরে শোভন চট্টোপাধ্যায় জানিয়ে দেন, ‘‘মুকুলদাকে সবটা জানিয়েছি। দেখা যাক কী হয়। উনি দায়িত্ব নিয়ে পর্যালোচনা করছেন। তবে যে জটিলতা ছিল, তার সমাধান হয়েছে এরকম কোনও কথা হয়নি’’। ফলে মুকুলের মধ্যস্থতার পরেও শোভন-বৈশাখী বনাম বিজেপি সংঘাত পর্ব যে এখনও অমীমাংসিতই রইল বলেই মনে করছে সংশ্লিষ্ট মহল।