বঙ্গ বিজেপিতে নয়া দ্বন্দ্ব! অগ্নিমিত্রাকে চরম আক্রমণ বৈশাখীর, ‘বিরক্ত’ শোভনও

‘‘শোভন আমার মেন্টর, আমি ওঁকে শ্রদ্ধা করি...লকেট, রূপা, ভারতী ঘোষদের পছন্দ করি, যাঁরা আমার মতো একজন ক্ষুদ্র নেতাকে অনুপ্রাণিত করতে পারেন’’।

‘‘শোভন আমার মেন্টর, আমি ওঁকে শ্রদ্ধা করি...লকেট, রূপা, ভারতী ঘোষদের পছন্দ করি, যাঁরা আমার মতো একজন ক্ষুদ্র নেতাকে অনুপ্রাণিত করতে পারেন’’।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
baisakhi banerjee, বৈশাখী বন্দ্য়োপাধ্য়ায়

অগ্নিমিত্রা পাল, বৈশাখী বন্দ্য়োপাধ্য়ায়, শোভন চট্টোপাধ্য়ায়।

বিজেপিতে শোভন-বৈশাখীকে ঘিরে টানাপোড়েন যেন কাটছেই না। সম্প্রতি বঙ্গ বিজেপির বিজয়া সম্মিলনী ঘিরে ‘জটিলতা’ কাটতে না কাটতেই এবার বিজেপির মহিলা মোর্চার সভাপতি অগ্নিমিত্রা পালের মন্তব্য় ঘিরে ফেসবুক পোস্টে ক্ষোভ উগরে দিলেন বৈশাখী বন্দ্য়োপাধ্য়ায়। ‘শোভন চট্টোপাধ্য়ায়ের রাজনৈতিক গুরুত্ব অনেক বেশি। বৈশাখীদি একই গুরুত্ব পাবেন না’, সংবাদমাধ্য়মে অগ্নিমিত্রার এহেন মন্তব্য়ে তোপ দেগেছেন শোভন বান্ধবী। সেইসঙ্গে এই মন্তব্য়ে শোভন চট্টোপাধ্য়ায়ও যে যারপরনাই ক্ষুব্ধ ও বিরক্ত, সেকথাও জানিয়েছেন বৈশাখী।

Advertisment

ঠিক কী বলেছেন বৈশাখী বন্দ্য়োপাধ্য়ায়?

অগ্নিমিত্রা পালকে বিঁধে বৈশাখী বলেছেন, ‘‘অগ্নিমিত্রা পাল যখন বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন, তাঁর একটাই পরিচয় ছিল, তিনি একজন ফ্য়াশন ডিজাইনার। যতদূর আমি জানি, আপনার কোনও রাজনৈতিক পরিচয় ছিল না। কখনও কোনও রাজনৈতিক ভূমিকাও পালন করেননি। তা সত্ত্বেও বিজেপি মহিলা মোর্চার প্রধানের মতো গুরুদায়িত্ব পেয়েছেন’’।

এরপর অধ্য়াপিকা বৈশাখী উল্লেখ করেছেন, ‘‘উনি বোধহয় অবগত নন। আমি ওয়েবকুপার জেনারেল সেক্রেটারি পদে ছিলাম। অনৈতিক, অন্য়ায়ের বিরুদ্ধে লড়াই করেছি। পেজ ৩-তে আমার কখনও নাম আসেনি। পুরুলিয়া থেকে বর্ধমান, গোসাবা থেকে গড়িয়া, ধর্মতলা থেকে যাদবপুর পর্যন্ত ঘুরেছি, ভোটে টিকিট পাওয়ার জন্য় নয়, আমার দলের সদস্য়পদ বাড়ানোর জন্য়। গার্হস্থ্য় হিংসা, শিশু নির্যাতনের বিরুদ্ধে লড়ার চেষ্টা করেছি। কিছু ছবি পোস্ট করে জনসমর্থন পাইনি। মিটিং-মিছিলে অংশ নিয়ে মানুষের ভালবাসা অর্জন করেছি’’

Advertisment

আরও পড়ুন: বিজেপির বিজয়া সম্মিলনীতে আমন্ত্রণ পাননি বৈশাখী, যাচ্ছেন না শোভনও

এতেই থামেননি বৈশাখী। অগ্নিমিত্রার পূর্বসূরী লকেট চট্টোপাধ্য়ায়ের প্রশংসা করে বৈশাখী ফেসবুকে লিখেছেন, ‘‘আপনার পূর্বসূরী লকেট চট্টোপাধ্য়ায় সুহৃদয়ে আমায় বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মসূচিতে আমন্ত্রণ জানাতেন। যার জন্য় ওঁকে শ্রদ্ধা করি। তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষও সে দলে আমার অবস্থান স্বীকৃতি দিয়েছেন’’।

অগ্নিমিত্রার উদ্দেশে বৈশাখী এও লিখেছেন, ‘‘আপনার মন্তব্য়ে আমি ব্য়থিত। কোনও বিরোধী দল নয়, আমার দলের সহকর্মীই আমাকে সমালোচিত করলেন...চোখে আঙুল দাদার মতো যদি সারাক্ষণ কেউ এরকম করতে থাকেন, তাহলে বিরক্ত হই’’।

EXCLUSIVE শোভন: মমতাকে তৈরি করতে সব নষ্ট করে জীবন দিয়েছিলাম, আর উনিই রাজনীতি করলেন

ফেসবুক পোস্টের শেষাংশে বৈশাখীর সংযোজন, ‘‘আমার কোনও গডফাদার নেই। মুকুল রায়, শোভন চট্টোপাধ্য়ায়, পার্থ চট্টোপাধ্য়ায়, কল্য়াণ বন্দ্য়োপাধ্য়ায়ের থেকে রাজনৈতিক মূল্য়বোধ শিখেছি। বিজেপিতে রামলালজি, শিবপ্রকাশজি, মেননজি, অমিতাভদার থেকে অনেক উৎসাহ পেয়েছি...শোভন আমার মেন্টর, আমি ওঁকে শ্রদ্ধা করি...লকেট, রূপা, ভারতী ঘোষদের পছন্দ করি, যাঁরা আমার মতো একজন ক্ষুদ্র নেতাকে অনুপ্রাণিত করতে পারেন’’।

প্রসঙ্গত, গত বছর ১৪ অগাস্ট তৃণমূলের সঙ্গে সব সম্পর্ক চুকিয়ে দিল্লিতে বিজেপির কেন্দ্রীয় দফতরে গিয়ে পদ্ম পতাকা হাতে তোলেন কলকাতার প্রাক্তন মেয়র শোভন চট্টোপাধ্য়ায়। সেদিনই শোভনের সঙ্গে বিজেপিতে যোগ দেন বৈশাখী। কিন্তু ক'দিন যেতে না যেতেই রাজ্য় বিজেপি নেতৃত্বের একাংশের সঙ্গে শোভন-বৈশাখীর মন কষাকষি এমন পর্যায়ে পৌঁছোয় যে গেরুয়া বাহিনী থেকে ইস্তফা দেওয়ার ইচ্ছাপ্রকাশ করেন ঘনিষ্ঠ শিবিরে। এরপর থেকে শোভন-বৈশাখীর রাজনৈতিক অবস্থান ঘিরে তুমুল জলঘোলা হয়েছে। কখনও তাঁদের ভাইফোঁটায় মমতার কালীঘাটের বাড়িতে দেখা গিয়েছে। আবার কখনও নবান্নে গিয়ে মুখ্য়মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করতে দেখা গিয়েছে বৈশাখীকে। সেইসঙ্গে পার্থ চট্টোপাধ্য়ায়ের সঙ্গে বৈশাখীর সাক্ষাৎও জল্পনায় অনেক জল হাওয়া জুগিয়েছে।

প্রায় ১ বছরেরও বেশি সময় ধরে বিজেপিতে যোগদানের পরও সেভাবে সক্রিয় হতে দেখা যায়নি এই জুটিকে। সম্প্রতি কলকাতা সফরে অমিত শাহের সঙ্গে দেখা করেন শোভন-বৈশাখী। অরবিন্দ মেনন, অমিতাভ চক্রবর্তীরা গোলপার্কে শোভন-বৈশাখীর ফ্ল্য়াটে গিয়ে দীর্ঘক্ষণ বৈঠক করেন। শোভন চট্টোপাধ্য়ায়কে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে বলে জোর চর্চাও শুরু হয়। এর মধ্য়েই বিজেপির বিজয়া সম্মিলনীর অনুষ্ঠানে বৈশাখীকে আমন্ত্রণ না করা নিয়ে নতুন করে দোলাচল শুরু হয়। শেষে দিলীপ ঘোষের ফোনে মানভঞ্জন হয় বলে জানা যায়। সেই পর্ব কাটতে না কাটতেই অগ্নিমিত্রার মন্তব্য় ও তার পাল্টা হিসেবে বৈশাখীর ফেসবুক পোস্ট নয়া দোলাচলের ইঙ্গিত দিল বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহলের একাংশ।

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন

bjp