মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক অভিযোগ করলেন কলকাতার প্রাক্তন মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়ের বান্ধবী বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর বিরুদ্ধে ‘বৃহত্তর ষড়যন্ত্রে সরাসরি জড়িত মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়’, এমন বিস্ফোরক অভিযোগই করেছেন বৈশাখী। শুধু অভিযোগ করেই ক্ষান্ত হননি পেশায় কলেজের অধ্যক্ষা বৈশাখী, বরং ‘দিদিকে বলো’ কর্মসূচির মাধ্যমে তিনি এবার সরাসরি ‘দিদি’কেই অভিযোগ জানাতে চলেছেন 'দিদি'র বিরুদ্ধে। মঙ্গলবার ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা-কে বৈশাখী বলেন, ‘‘উনি সবার দিদি। আমার সবচেয়ে বেশি ক্ষতি কেউ করে থাকলে সেটা উনিই। ওঁর তত্ত্বাবধানেই আমার সব ক্ষতি বাস্তবায়িত হয়েছে। তাই দিদিকেই বলতে চাই’’। একইসঙ্গে তৃণমূল থেকে তাঁকে হুমকি দেওয়া হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেছেন বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়। এ প্রসঙ্গে তাঁর দাবি, ‘‘আজ পর্যন্ত শ্বাসপ্রশ্বাস নিয়ে কথা বলছি, কাল নাও হতে পারে। তার আগে যাতে মানুষের মধ্যে প্রশ্ন ওঠে, সেকারণেই সব বলব, অনেক কিছু দেখাব’’।
আরও পড়ুন: তৃণমূলে ফেরার প্রশ্নই নেই, ভাল লোকেরাই দল ছাড়ছে: বৈশাখী
মমতার বিরুদ্ধে ঠিক কী অভিযোগ করেছেন বৈশাখী?
উল্লেখ্য, বুধবার সাংবাদিক বৈঠক ডেকেছেন বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়। এ প্রসঙ্গে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা-কে আল আমিন কলেজের অধ্যক্ষা বলেন, ‘‘কালকেই বলব, অনেক কিছু বলব, অনেক কিছু দেখাব। দীর্ঘদিন ধরে আমাকে নিয়ে একটা জিনিস (পড়ুন, ষড়যন্ত্র) চলছে। এবার বোধহয় একটা চূড়ান্ত পর্যায়ে এসে দাঁড়াচ্ছি। হয়তো অনেক কিছু হারাব, তবে অনেক কিছু পাবও’’। এরপরই সরাসরি ষড়যন্ত্রের অভিযোগ করে বৈশাখী বলেন, ‘‘কীভাবে মানুষ বৃহত্তর ষড়যন্ত্র রচনা করেছেন, তাতে প্রশাসন কীভাবে সাহায্য করছে, কী নিপুণ পরিকল্পনায় সবটা করা হচ্ছে, সে বিষয়েই মুখ খুলব। রায়চকে শোভন ও আমার উপর আক্রমণ করা হয়েছে। শোভনের উপর ইতিমধ্যেই একটা আক্রমণ হয়েছে, যার জেরে তিনি চেয়ার ছেড়েছেন। খুব শান্তিতে যে আমাকে থাকতে দেবে, সেরকম কথা তো ছিলও না। এই অশান্তির পরিবেশটা কেউ তৈরি করেছেন। আসলে আমরা যখন ভাবি, আমি ষড়যন্ত্র করছি এবং আমি এত বুদ্ধি রাখি যে বাকিরা কেউ তা বুঝতে পারছে না, তখন কিছু কিছু জায়গায় ধরা পড়ে যাওয়ার সুযোগ থাকে। পশ্চিমবঙ্গে এখন সুষ্ঠু পরিষেবার জন্য সাংবাদিক বৈঠক দরকার’’।
আরও পড়ুন: শোভনকে ফের মেয়রের টিকিট, মন্ত্রী করার প্রস্তাব পার্থর, দাবি বৈশাখীর
বৈশাখী আরও বলেন, ‘‘উনি সবার দিদি। আমার সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করে থাকলে উনিই করেছেন। ওঁর তত্ত্বাবধানেই আমার সব ক্ষতি বাস্তাবায়িত হয়েছে। তাই দিদিকেই বলছি, দিদিকেই বলেতে চাই। ওঁর কাছে ব্যক্তিগতভাবে যাব না। ওঁর সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্পর্ক নেই। উনি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী, আমি মনে করি উনি জননেত্রী। তাই মানুষের কথা শুনতে হবে। উনি যদি আমায় মনুষ্যেতর মনে করেন, সেটা আলাদা কথা। যতক্ষণ মনুষত্ব রয়েছে, ততক্ষণ তো জিজ্ঞাসা করবই। আমার যা যা বিপর্যয় হয়েছে, সেখানে দিদিমণির বক্তব্য রয়েছে। আমার কাছে তেমনই খবর রয়েছে যে ওঁর সরাসরি ভূমিকাও রয়েছে। লোকের জানা দরকার, আজ পর্যম্ত শ্বাসপ্রশ্বাস নিয়ে কথা বলছি, কাল এমনটা নাও হতে পারে। তার আগে যাতে মানুষের মধ্যে প্রশ্ন ওঠে সে কারণেই মুখ খুলব’’।
আরও পড়ুন: ওমর-মেহবুবার খোঁজ পাচ্ছি না, মমতার গলায় উৎকন্ঠা
শোভন চট্টোপাধ্যায়ের বান্ধবীর দাবি, ‘‘প্রশাসনের মাথায় বসে অনেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন। হয়তো মমতার সম্মতিতেই সব হচ্ছে। উনি কি জানেন? এগুলোই জানতে চাই। আর তো কয়েকঘণ্টা! আশা করছি, কয়েকঘণ্টার মধ্যে সরে যাব না। বেঁচে থাকব, যদি বেঁচে থাকি, তাহলে কাল সাংবাদিক বৈঠকে বলব সব’’।
তৃণমূলকে বিঁধে বৈশাখী বলেন, ‘‘তৃণমূল দলটাকে বুঝতে পারি না। কেউ আমার কাছে এসে বলে যান, তোমার মাথায় সবসময় আমার আশীর্বাদ থাকবে। তবু তাঁদের হাত ধরেই আবার কিছু নির্মম জিনিস ঘটে যাচ্ছে। বলতে পারব না, তৃণমূল করছে নাকি তৃণমূলের নামে কেউ করছে। ২০০২ সাল থেকে যবে থেকে পড়ানো শুরু করেছি, অত্যাচারিতদের নাম বদলাতে দেখেছি, অত্যাচার বদলাতে দেখিনি’’। এরপরই বৈশাখীর সংযোজন, ‘‘কেউ হুমকি না দিলে, কেউ জর্জরিত না হলে, সাংবাদিকদের ডেকে কেউ কথা বলত না। আমি না হয় শেষ হয়ে যেতে পারি। বৈশাখী, বৈশাখী... একটা অধ্যায় শেষ হয়ে যাবে। বৈশাখী শেষ হলে চৈতালী হবে, চৈতালী শেষ হলে পৌষালী শুরু হবে...’’।