আসানসোল ও বালিগঞ্জে উপনির্বাচনে পরাজয়ের পর ফের জেলায় জেলায় বিজেপির বিদ্রোহ প্রকাশ্যে চলছে। এর আগে রাজ্য কমিটি গঠনের পরও একাংশ ক্ষোভপ্রকাশ করেছিলেন। এরইমধ্যে রাজ্য বিজেপির সাধারণ সম্পাদক(সংগঠন) অমিতাভ চক্রবর্তী তাঁর টুইটার হ্যান্ডেলে আনফলো করেছেন দলের কেন্দ্রীয় সম্পাদক অনুপম হাজরাকে। এমনকী ফেসবুক থেকেও তাঁকে আনফ্রেন্ড করে দিয়েছেন। রাজনৈতিক মহলে প্রশ্ন উঠেছে, তাহলে কী সংঘাত এবার রাজ্য ছেড়ে সর্বভারতীয় স্তরে পৌঁছে গেল। যেখানে সোশাল মিডিয়ায় প্রভাব নিয়ে বিজেপি বড়াই করে সেখানে সর্বভারতীয় নেতাকেই দূরে সরিয়ে দিলেন রাজ্যের সংগঠন মন্ত্রী!
বিধানসভা নির্বাচনের পর থেকেই রাজ্য বিজেপিতে ডামাডোল চলছে। বঙ্গ বিজেপির অশ্বমেধের ঘোরা ৭৭-এ আটকে যাওয়ার পর ঝাঁকে ঝাঁকে নেতারা পদ্মবন থেকে ঘাসবনে ফিরে গিয়েছেন। ঘরে ফিরেই রীতিমতো তাঁরা তৃণমূলের পদাধিকারী হয়েছেন। এরপর রাজ্য কমিটি ঘোষণা হওয়ার সময় থেকে আদি বিজেপির একটা বড় অংশ কখনও গোপনে কখনও জানিয়ে বৈঠক শুরু করে। এমনকী দলের মতুয়ারা সংগঠনে পদ না পাওয়ায় ক্ষোভ ব্যক্ত করেছিলেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শান্তনু ঠাকুর। বিক্ষুব্ধ নেতাদের সঙ্গে তিনি দফায় দফায় শুধু বৈঠক করেননি, সঙ্গে তিনি আছেন বলেও জানিয়েছিলেন। শুধু মতুয়া প্রতিনিধি নয়, তাঁদের বক্তব্য ছিল হেরে যাওয়া নেতারা রাজ্য় সংগঠনে বড় পদ পেয়েছেন অথচ অনেক যোগ্য নেতারা দায়িত্ব পাননি। এককথায় বঙ্গ বিজেপির নেতৃত্বকে পরোয়া করেন না বলেই তাঁরা হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।
এখন জেলা স্তরে ক্ষোভ-বিক্ষোভ চরম আকার নিয়েছে। দলের সাংগঠনিক ক্ষেত্রে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সরাসরি অমিতাভ চক্রবর্তীর কাছে মৌখিক বা চিঠি দিয়ে আবেদন জানিয়েও কোনও সদুত্তর মেলেনি বলেই ক্ষুব্ধ বিজেপি নেতৃত্ব স্পষ্ট জানিয়েছেন। এর আগে আদি বিজেপির একটা বড় অংশ ক্ষোভ উগরে দিয়েছিলেন এরাজ্য়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত অমিত মালব্য ও অমিতাভ চক্রবর্তীর বিরুদ্ধে। বহিষ্কৃতদের মধ্যে তৎকালীন রাজ্য বিজেপির সহ-সভাপতি জয়প্রকাশ মজুমদার তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দিয়েছেন। এবার বিক্ষুদ্ধদের সঙ্গে গলা মিলিয়ে রাজ্য নেতৃত্বকে অপরিণত বলে অভিহিত করেছেন বিষ্ণপুরের দলীয় সাংসদ সৌমিত্র খাঁ।
এরইমধ্যে বিজেপির সর্বভারতীয় সম্পাদক অনুপম হাজরা সোশাল মিডিয়ায় নিশানা করেন বঙ্গ বিজেপিকে। তাঁর ফেসবুকের ওয়ালে লেখেন, 'আসলরহস্যটাকি? কেন এতগুলো ইস্তফা একসঙ্গে, সেটা রাজ্য বিজেপির খুব গুরুত্ব সহকারে বিচার-বিশ্লেষণ করা উচিত !!!' বরং ক্ষুব্ধ গৌরীশংকরবাবুর হয়ে ব্যাট ধরেন প্রাক্তন সাংসদ। রাজ্য বিজেপির কার্যকলাপ নিয়ে এই সর্বভারতীয় সম্পাদক যে অসন্তুষ্ট তা প্রতিটি লাইনে জানান দেন। শেষে অনুপম লেখেন, ….'কিন্তু তবুও রাজ্য বিজেপি থেকে দূরে, দিল্লিতে বা অন্য রাজ্যে পার্টির কাজ করতেই বেশি স্বচ্ছন্দ বোধ করে !!!…. আসল রহস্যটা কি ???!!!'
দেখা যায় এরপরই দলের কেন্দ্রীয় নেতাকেই সোসাল মিডিয়ায় বয়কট করে দিয়েছেন রাজ্য সাধারণ সম্পাদক(সংগঠন)। যা নিয়ে শোরগোল পড়ে গিয়েছে বিজেপি রাজ্য তথা কেন্দ্রীয়স্তরেও। এবিষয়ে অনুপম হাজরা ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলাকে বলেন, 'আমি তো বুঝতেই পারনি এমন কিছু হয়েছে। উনি কেন এমন করলেন জানি না। আমি তো কারও নাম নিয়ে কিছু বলিনি। এতো হাসির বিষয়।' জানা গিয়েছে, বঙ্গ বিজেপির কার্যকলাপ নিয়ে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছেও নানা অভিযোগ জমা পড়েছে। শীঘ্রই দলের শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে রাজ্যের বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে।