আগামী ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে দিল্লিতে রাজ্য়ের কংগ্রেস নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করলেন জাতীয় কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী। বৈঠকে হাজির নেতাদের কাছে মতামত চাইলেন। বলা বাহুল্য, রাজ্য়ে কংগ্রেসের বর্তমান দুরবস্থার সময়ও নেতৃত্বের মধ্য়ে অনৈক্য়ের ছবি স্পষ্ট। অবধারিতভাবেই, সেই গোষ্ঠীকলহ পৌঁছে গেছে দিল্লীর দরবারেও। রাহুল গান্ধীর সঙ্গে রাজ্য় নেতাদের বৈঠকে সেই মতানৈক্য় চরমে উঠল। বিজেপিকে ঠেকাতে লোকসভা নির্বাচনে এই রাজ্য়ে তৃণমূলের সঙ্গে হাত মেলানোর পক্ষে জোরালো যুক্তি পেশ করেন রাজ্য় নেতৃত্বের একাংশ। অপর অংশ সরাসরি সিপিএমের সঙ্গে জোট বাঁধার কথা বলেন রাহুলের কাছে। দলের রাজ্য় সভাপতি অধীর চৌধুরী বলেন, "রাহুল গান্ধীর সঙ্গে প্রত্য়েক নেতার কথা হয়েছে। অনেক আলোচনা হয়েছে। সিদ্ধান্ত নেবে হাইকমান্ড।"
বৈঠক থেকে বেরিয়ে সাংসদ আবু হাসেম খান চৌধুরী জানান, তিনি তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে জোট করে লোকসভা নির্বাচন লড়তে চান, এবং সেকথা তিনি রাহুল গান্ধীকে জানিয়েছেন। বিধায়ক মইনুল হকও জানিয়ে দিয়েছেন, তৃণমূলের সঙ্গেই তাঁরা জোট চাইছেন। কংগ্রেসের এই অংশের নেতাদের যুক্তি, বিজেপিকে ঠেকাতে লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূলের সঙ্গেই জোট বেঁধে লড়াই করতে হবে।
আরও পড়ুন: মালদা মুর্শিদাবাদে এবার কি সত্যিই কংগ্রেসের গড় উজাড়?
২০১১ সালে সিপিএমকে সরাতে কংগ্রেসের হাত ধরেছিল তৃণমূল। ওই নির্বাচনে কংগ্রেসের দিল্লী লবি সম্পূর্ণ মদত দিয়েছিল। সিপিএমকে উচিত শিক্ষা দেবেন বলে ঠিক করেছিলেন সনিয়া গান্ধী, যেহেতু কেন্দ্রীয় সরকার থেকে পরমাণু ইস্য়ুতে সমর্থন তুলে নিয়েছিল সিপিএম। কিন্তু অল্পকালের মধ্য়েই রাজ্য়ের রাজনৈতিক পরিস্থিতি বদলে যায়, ঘোষিত হয় কংগ্রেস এবং তৃণমূলের মধুচন্দ্রিমার সমাপ্তি। এরপর থেকে সিপিএমের সঙ্গে সখ্য়তা শুরু কংগ্রেসের, যার ফলস্বরূপ ২০১৬ বিধানসভা ভোটে সিপিএমের সঙ্গে জোট করে তৃণমূলের বিরুদ্ধে লড়াই, এবং বিধানসভায় বিরোধীদলের স্বীকৃতি। কিন্তু তার চেয়েও বড় কথা হলো, তৃণমূলের বিরুদ্ধে লড়াই করে বিধায়ক নির্বাচিত হলেও একের পর এক কংগ্রেস নেতা ঘাসফুলে নাম লেখাতে শুরু করেন, বিধায়ক পদ ধরে রেখেই।
সামনেই ২১ জুলাই তৃণমূল কংগ্রেসের শহিদ দিবস। বেশ কয়েকজন কংগ্রেস সাংসদ এবং বিধায়কের শহিদ মঞ্চে হাজির থাকার কথা। দ্রষ্টব্য থাকবে, লোকসভা নির্বাচনে রাজ্য় কংগ্রেস কার সঙ্গে হাত মেলায়, তৃণমল না সিপিএম। তবে যার সঙ্গেই হাত মেলাক না কেন, রাজ্য় কংগ্রেস থেকে ফের এক ঝাঁক নেতা দল ছাড়বেন। একথা হলপ করে বলাই যায়। গোটা রাজ্য়েই দলের যা অবস্থা, এখনই দূরবীন দিয়ে খুঁজতে হয় কংগ্রেস নেতা। বিশেষ করে পঞ্চায়েত নির্বাচনের পর সেই হতশ্রী চেহারা আরও ফুটে উঠেছে। কাজেই আরও কয়েকজন নেতা দল ছাড়লে আপাতত কফিনে শেষ পেরেকটা পোঁতা হয়ে যাবে ধরে নেওয়া যায়।