আসাম-সহ সর্বত্র এনআরসি প্রক্রিয়া ফের লাগু হবে এবং ধর্ম নিরপেক্ষভাবেই ভারতের সব নাগরিক ওই তালিকায় স্থান পাবেন, বুধবার সংসদে এমনটাই জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। যদিও মোদী সরকারের এই এনআরসি সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছে বিরোধীরা। রাজ্যসভায় অমিত শাহের ঘোষণার পরই মুর্শিদাবাদের সাগরদিঘিতে মুখ্য়মন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জোরের সঙ্গে ফের জানিয়ে দিলেন, ‘এ রাজ্যে এনআরসি হবে না, হবে না, হবে না।’ মমতা এদিন কার্যত শপথ নেওয়ার ভঙ্গিতে ‘অভয়’ দিয়ে বলেন, “আমরা বাংলায় এনআরসি করতে দেব না, দেব না, দেব না।"
মমতা বলেন, "কারও একটা রেশন কার্ড আছে, স্কুল সার্টফিকেট আছে, খাদ্যসাথী আছে, জমি আছে, বাড়ির ঠিকানা আছে। তাঁদেরকে অবৈধ নাগরিক ঘোষণা করতে দেব না।" তিনি জানান, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধীর আমলে আসাম চুক্তিতে আসামের নির্দিষ্ট কয়েকটি এলাকার জন্য এনআরসি স্বাক্ষরিত হয়। তবে তা কখনই পুরো ভারত জুড়ে কার্যকর করা যায় না। বুধবার অমিত শাহের নাম না করেই তৃণমূল সুপ্রিমো বলেন, "কিছু লোক বাংলায় এনআরসি করার নামে ঝামেলা করতে চাইছে বাংলায়। আমি খুব স্পষ্ট করে বলে দিতে চাই, আমরা বাংলায় এনআরসি করতে দেব না। ধর্মের ভিত্তিতে মানুষকে ভাগ করতে দেব না।"
মুর্শিদাবাদের বৈঠক থেকে মোদী সরকারের নাম না করে মমতার সাফ জবাব, রাষ্ট্রকে ধর্মের ভিত্তিতে আলাদা করার 'ষড়যন্ত্র' করা হচ্ছে। তিনি বলেন, "কেউ যদি মনে করেন সাম্প্রদায়িক ভিত্তিতে বাংলাকে ভাগ করবেন, তবে তিনি 'মূর্খের স্বর্গে' বসবাস করছেন।" তৃণমূল সুপ্রিমো আরও বলেন, "আসামের এনআরসি তালিকা থেকে মোট ১৯ লক্ষ মানুষকে বাদ দেওয়া হয়েছে। যাদের মধ্যে রয়েছে হিন্দু, বাঙালি, মুসলমান, গোর্খা এবং বৌদ্ধ ধর্মের নাগরিকরাও। ইচ্ছাকৃতভাবে তাঁদের আটক করা হয়েছে। তৃণমূল বাংলায় কোনও আটক কেন্দ্র তৈরি করতে দেবে না।"
একই সুর শোনা গেল কেরালার সংখ্যালঘু ও উচ্চশিক্ষার কল্যাণ বিভাগের মন্ত্রী কে টি জলীল। অমিত শাহের এনআরসি মন্তব্যের বিরোধিতা করে তিনি বলেন, " যেখানে আসামে এনসিআর প্রক্রিয়া প্রত্যাহারের দাবি উঠছে, সেখানে কীভাবে দেশব্যাপী এনআরসি চালু করার কথা বলছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী? মুসলমানদেরকে বাদ দেওয়ার পক্ষে যে পদ্ধতি অবলম্বন করা হচ্ছে তা ভারতের মতো ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রের পক্ষে উপযুক্ত নয়।" তবে শুধু দক্ষিণ নয়, ভারতের মধ্য ভাগের রাজ্যের গলাতেও শোনা গেল নাগরিকপঞ্জি বিরোধী সুর। মধ্যপ্রদেশের মন্ত্রী আরিফ আকিল বলেন, "এনআরসির মূল উদ্দেশ্য হল সংখ্যালঘুদের হয়রানি করা।" অন্যদিকে, আসাম কংগ্রেসের সভাপতি তথা সাংসদ রিপুন বোরা বলেন, "অমিত শাহের বক্তব্যকে কখনই সমর্থন করে না কংগ্রেস। শুধু আসাম নয়, সারা দেশে এনআরসি চালু করার কথা বলেছে। আসামের বিষয়টি আলাদা। বিশেষ কারণে এখানে নাগরিকপঞ্জি তৈরি কতা হয়েছে। কিন্তু এনআরসির নামে দেশের নাগরিকদের অবৈধ ঘোষণা করতে চাইছে মোদী সরকার। ফের যদি আসামে এনআরসি হয় সেক্ষেত্রে আবার অশান্তি তৈরি হতে পারে আসামে।"