গত দু’বছরের রক্তক্ষয়ী আন্দোলনের সমাপ্তি ঘোষণা হয়েছে সরকারের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের সমঝোতা চুক্তির মধ্য দিয়ে। খুলেছে বিদ্যুৎ প্রকল্পের গেট, শুরু হয়েছে কাজ।
এদিকে পরিত্যক্ত বিদ্যুৎ প্রকল্পের কাজ পুনরায় শুরু হতেই ক্ষোভে ফুঁসছেন আন্দোলনকারীরদের একাংশ।হাতের কাছে কমিটির এক নেতাকে পেয়ে তার উপরেই ক্ষোভ উগরে দিয়ে মেরে মাথা ফাটিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে আন্দোলনকারীদের অন্য একটি অংশের বিরুদ্ধে ।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, বুধবার রাতে মাছিভাঙা গ্রামে জমি কমিটির কোষাধ্যক্ষ তথা আন্দোলনের প্রথম সারির নেতা সাজারুল ইসলাম মোল্লা কে ঘিরে ধরে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেন গ্রামের কয়েক জন আন্দোলনকারী। তাঁরা সাজারুলকে ঘিরে ধরেন। বলতে থাকেন, ‘‘কত টাকা নিয়ে এই আন্দোলন বিক্রি করে দিয়েছিস?’’ সাজারুল তাঁদের প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার আগেই তাঁর মুখে এসে পড়ে কিল চড় ঘুসি। মারের চোটে তাঁর মাথা ফেটে যায়।
এ নিয়ে বুধবার রাতেই কাশীপুর থানায় ৭ জনের নামে অভিযোগ দায়ের করেন সাজারুল। এর পাশাপাশি বৃহস্পতিবার সকাল এগারোটা নাগাদ প্রহৃত সাজারুলকে নিয়ে কাশীপুর থানায় আসেন জমি কমিটির কয়েকজন নেতা। এ নিয়ে জমি কমিটির অন্যতম নেত্রী শর্মিষ্ঠা চৌধুরী বলেন, "আন্দোলন বিরোধী শক্তিরা সাজারুল এর উপরে অতর্কিতে আক্রমণ করেছে। সালাউদ্দিন, আব্দুল সহ ৭ জনের নামে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।" তিনি আরো বলেন, "আপাতত এরা এখন গ্রাম ছেড়ে পালিয়েছে।"
জানা গিয়েছে এই আব্দুল সহ অন্যান্য যাঁদের বিরুদ্ধে সাজারুল-শর্মিষ্ঠার আক্রমণ করার অভিযোগ তুলছেন, তাঁরাই এক সময়ে পাওয়ার গ্রিডের বিরুদ্ধে সামনে থেকে দাঁতে দাঁত চেপে লড়াই করেছেন। এখন তাঁদেরই বিরুদ্ধে থানায় গিয়ে অভিযোগ দায়ের করছেন বর্তমান জমি কমিটির নেতৃত্বরা। এ বিষয়ে বারুইপুর পুলিশ জেলার সুপার অরিজিৎ সিনাহা বলেন, "যারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে তাদের চিহ্নিত করে গ্রেপ্তার করা হবে।"
আরও পড়ুন, ভাঙড়ে আন্দোলন শেষ, প্রশাসনের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর অলীকদের
অলীক চক্রবর্তী ও শর্মিষ্ঠা চৌধুরী সহ জমি কমিটির প্রথম সারির গ্রামের নেতাদের কথায় এতোদিন আন্দোলনের কর্মসূচি ও রূপরেখা তৈরি হয়ে এসেছে। তাঁদের কথাতেই পুলিশেকে রুখে দেওয়া থেকে শুরু করে পুলিশের উপরে আক্রমণ সহ বিদ্যুৎ প্রকল্পের কাজ বন্ধ করে দিয়েছিলেন গ্রামের মানুষ। এর পর প্রশাসনের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরের মধ্যে দিয়ে আঞ্চলিক সাব স্টেশন তৈরির কাজ ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গিয়েছে। আর এ নিয়েই অলীক চক্রবর্তীদের উপর ক্ষুব্ধ আন্দোলনকারীদের একাংশ। তাঁদের বক্তব্য এই বিদ্যুৎ প্রকল্পের বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে গিয়ে তিনটি তরতাজা প্রাণ চলে গিয়েছে, বহু মানুষ আক্রান্ত, ঘর বাড়ি ভাঙ্গচুর করা হয়েছে, দোকানে আগুন লাগিয়ে দিয়েছিল শাসক দলের দুষ্কৃতী বাহিনী। আর এখন টাকা দিয়ে আন্দোলন বন্ধ করে দিতে চাইছে সরকার। তাঁদের অভিযোগ, সরকারের সঙ্গে হাত মিলিয়েছেন কমিটির কয়েক জন নেতা।
আন্দোলনকারীদের একাংশের বক্তব্য, খুব শীঘ্রই জমি জীবিকা বাস্তুতন্ত ও পরিবেশ রক্ষা কমিটির পুনর্গঠন করা হবে। প্রশ্ন উঠতে শুরু করছে তাহলে কি সরকারের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করা নিয়ে কমিটির একাংশকে অন্ধকারে রাখা হয়েছে। এ বিষয়ে জমি কমিটির এক প্রথম সারির নেতা বলেন, "যারা বিরোধিতা করছে তারা আন্দোলনের নামে একটা রাজনৈতিক দলের ফায়দা তোলার জন্য কাজ করছে। মানুষের স্বার্থে সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে সব কিছু ঠিক হয়েছে। সরকার ১২ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দিচ্ছে। তার উপর এখানে পাওয়ার গ্রিড হচ্ছে না সাব স্টেশন হবে।"
আরও পড়ুন, অলীকরা যেটাকে জয় বলে চালাতে চাইছে, সেটার কোনো মানে নেই
বিশেষ সূত্রের খবর, আন্দোলনে ক্ষতিগ্রস্ত ও এলাকার উন্নয়ন এর জন্য সরকার যে ১২ কোটি টাকা দেওয়ার যে প্রস্তাব দিয়েছে তার বণ্টন নিয়ে কমিটির নেতৃত্বের উপর মানুষের ক্ষোভ পুঞ্জীভূত হতে শুরু করেছে। তার উপর ভিত্তি করেই পুরনো আন্দোলনকারীদের একাংশ সরকারের সঙ্গে রফার বিরোধিতা করে তলে তলে বিদ্যুৎ প্রকল্পের বিরোধিতায় জমি তৈরি করার কাজ শুরু করেছে বলে জানা গিয়েছে ।