ত্রিপুরা অভিযান চলছে তৃণমূল কংগ্রেসের। বাংলা থেকে তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব নিয়মিত যাতায়াত করছেন আগরতলায়। অভিযোগ, সংগঠন মজবুত করতে ত্রিপুরা যাওয়ায় বেধরক মারধর করা হয়েছে দলের যুব নেতৃত্বকে। জয়া দত্ত ও সুদীপ রাহা এসএসকেএমের উডবার্ন ওয়ার্ডে ভর্তি হয়েছেন। কিন্তু ত্রিপুরায় দলে যোগদান নিয়ে ক্ষোভে ফুটছেন তৃণমূলের একাংশ। এঁদের তৃণমূলে যোগদানের ফলে দলের ক্ষতি হবে বলে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন। যদিও এবিষয়ে ত্রিপুরা তৃণমূলের সভাপতি কোনও মন্তব্য করতে চাননি।
ত্রিপুরা তৃণমূলের বক্তব্য, মাটি তৈরি। দল সঠিক ভাবে পরিচালনা করলে সেখানে ঘাসফুলের ক্ষমতায় আসা কেউ আটকাতে পারবে না। বিজেপির পরাজয় অবধারিত। তবে আগাম ক্ষমতার গন্ধে দলে বেনোজল ঢুকতে শুরু করেছে বলে দলের একাংশের দাবি। তাঁরা মনে করছেন, একাধিকবার দলবদলুরা বিজেপি থেকে তৃণমূলে আসছে। তাঁদের সঙ্গে নিয়ে ঘুরছে কলকাতার নেতারা। এখনই সতর্ক না হলে দলের সমূহ বিপদ বলে তাঁদের দাবি।
তৃণমূল কংগ্রেসের সংখ্যালঘু মোর্চার নেতা জহির উদ্দিন ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলাকে বলেন, "আমাদের দলের সঙ্গে জান-প্রানের সম্পর্ক। নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করছি। মলয়দাকে( মলয় ঘটক) বলেছি যাঁদের নিয়ে ঘোরাফেরা করছেন এঁরা আমাদের দলকে আগেও শেষ করেছে একবার। এর ফলে দলের ক্ষতি হবে। পুরানো কর্মীদের যেন মূল্যায়ন হয়। সরাসরি দলের শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে কথা বলে দলে ঢুকছেন। স্থানীয় নেতৃত্ব জানতেও পারছে না।" ওই সংখ্যালঘু নেতার আক্ষেপ, "যাঁদের হাতে মার খেতে হয়েছে, জেল খাটতে হয়েছে, বাড়ি ছাড়া হতে হয়েছে, তাঁরা এখন তৃণমূলে যোগ দিচ্ছেন। এঁরা পোলো হোটেলে চা, ভাত খাচ্ছেন, আমরা হোটেলের বাইরে দাঁড়িয়ে তামাশা দেখছি। গ্রামের ছেলে বলে মূল্যায়ন হচ্ছে না।"
আরও পড়ুন- ‘‘ত্রিপুরাবাসীকে নতুন রাজনৈতিক স্বাধীনতা দেবে তৃণমূল’’, আগরতলায় বললেন শান্তনু সেন
ধ্রুবলাল চৌধুরী, প্রকাশ,দাস, নরসিংহ দাস, পান্না দে, সওকত উল বাসার-সহ অনেকেই যোগ দিয়েছেন ঘাসফুল শিবিরে। সূত্রের খবর, ২ মের পর থেকে ব্লক, জেলা অর্থাৎ স্থানীয় স্তরে যোগদান চলছিল। এখন পোলো হোটেল বা কেন্দ্রীয় ভাবে যোগদান চলছে। জহির উদ্দিনের দাবি, "যাঁরা তৃণমূলে আসছেন তাদের অনেককে দেখেই ভাল মানুষ দলে আসতে দ্বিধা করছেন।" মানুষ যাঁদের হাত থেকে নিষ্কৃতি পেতে চাইছেন তাঁদের কেউ কেউ তৃণমূলে এসেছে বলে দাবি করেন এই তৃণমূল নেতা।
ইতিমধ্যে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় পর পর দুবার ত্রিপুরা গিয়েছেন। দলের নেতা-কর্মীদের গ্রেফতারের খবর পেয়ে ছুটেছেন খোয়াই থানায়। এর ফলে ত্রিপুরায় আক্রান্ত তৃণমূল কর্মীদের মধ্যেও মনোবল বেড়েছে। দলের সাংসদরাও সেখানে গিয়ে অত্যাচারিত কর্মীদের বাড়ি গিয়েছেন। উচ্চপদস্থ পুলিশ কর্তাদের সঙ্গে কথা বলেছেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ত্রিপুরায় গেলে মানুষের ঢল নামবে বলে মনে করছে সেখানকার তৃণমূল নেতৃত্ব। তারই মধ্যে যোগদান নিয়ে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে তৃণমূলে। এপ্রসঙ্গে ত্রিপুরা তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি আশিসলাল সিং কোনও মন্তব্য করতে চাননি।
এরাজ্যে বিধানসভা নির্বাচনের আগে তৃণমূল কংগ্রেস থেকে একঝাঁক বিধায়ক বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন। তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব তখন বলেছিলেন বিশ্বাসঘাতক তথা গদ্দাররা দল ছাড়ায় রক্ষা পাওয়া গেল। দল বেঁচে গেল। ভোটের ফল ঘোষণার পর দেখা গেল অধিকাংশ দলবদলুরা বিপুল ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হয়েছে। ভোটে পরাজয়ের পর তাঁরা তৃণমূলকে প্রশংসায় ভরিয়ে দিয়েছেন। ত্রিপুরায় ২০২৩-তে বিধানসভা নির্বাচন। তার দেড়বছর আগে তৃণমূলে যোগদান চলছে। কারও কারও যোগদান নিয়েই বিরোধিতা শুরু হয়েছে দলে অন্দরে।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন