মুখ্যমন্ত্রিত্ব ছেড়েছেন বিজয় রুপানি। সংগঠনের ভিতর-বাইরে নানা প্রশ্নের সম্মুখীন গেরুয়া শিবির। তাই মোদীর 'মডেল' গুজরাটের সমস্যা সমাধানে কালক্ষেপ করতে রাজি নয় পদ্ম নেতৃত্ব। তড়িঘড়ি গুজরাটের নতুন মুখ্যমন্ত্রী বাছাইয়ের জন্য বিজেপি দুই পর্যবেক্ষক নিয়োগ করেছে। বিশেষ দায়িত্বে দেওয়া হয়েছে কেন্দ্রীয় কৃষি মন্ত্রী নরেন্দ্র সিং তোমর ও হলেন প্রহ্লাদ যোশীকে। তাঁরা আজ সকালেই গুজরাট পৌঁছবেন। বেলা বিজেপি সূত্রে খবর, বিকেল ৩টের সময় বসবে পরিষদীয় দলের বৈঠক। এরপরই ঘোষণা করা হতে পারে গুজরাটের পরবর্তী মুখ্যমন্ত্রীর নাম।
Advertisment
শনিবার রুপানির পদত্যাগের পর পরই মুখ্যমন্ত্রী বাছাই পর্বের সলতে পাকানোর কাজ শুরু করে দিয়েছে পদ্ম বাহিনী। বিজেপির সাধারাণ সম্পাদক বিএন সন্তোষ ও দলের তরফে রাজ্যের ইন-চার্জ ভূপেন্দ্র যাদব গুজরাটেই রয়েছেন। দফায় দফায় বিভিন্ন গোষ্ঠীর নেতাদের সঙ্গে কথা বলে তাঁদের মন বোঝার চেষ্টা করছেন সন্তোষ ও যাদব। শনিবার রুপানির পদত্যাগের আগেও দুজনেই ধারাবাহিক বৈঠক এবং আলোচনা করছিলেন।
গুজরাটে বিজেপির দুই পর্যবেক্ষক, প্রহ্লাদ যোশী ও নরেন্দ্র সিং তোমার।
কে হবেন গুজরাটের পরবর্তী মুখ্যমন্ত্রী? রুপানির মুখ্যমন্ত্রিত্ব ছাড়ার পর এটাই এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন। পদ্ম শিবিরের অন্দরে চার-পাঁচজনের নাম ঘোরাফেরা করছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কেন্দ্রীয় মন্ত্রী পুরুষোত্তম রূপালা, গুজরাটের উপ-মুখ্যমন্ত্রী নীতীন প্যাটেল, কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী মনসুখ মাণ্ডব্য। এছাড়াও দৌড়ে রয়েছেন গুজরাটের কৃষি মন্ত্রী আরসি ফালদুও। তবে কোনও নামের পক্ষেই এখনও পাকাপাকি ভাবে সিলমোহর মোদী, শাহ, নাড্ডাদের সিলমোহর পড়েনি।
Advertisment
গুজরাটের বিধানসভা ভোটের বাকি আর মাত্র এক বছর। এর মধ্যেই মোদী-শাহর রাজ্যে পালা বদলের ঘটনা। আচমকাই পদ ছেড়েছেন বিজয় রুপানি। যা নিয়ে জোর চর্চা। ফলে, যেই রুপানির জায়গায় যেই বসবেন তাঁকেই বড়সড় চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হবে। বিজেপি নেতৃত্বও এমন ব্যক্তিকেই ক্ষমতার শীর্ষে বসাতে চাইবে যাতে রাজ্য রাজনীতি ও প্রশাসনের রাশ দলের হাতের বাইরে না চলে যায়। তাই অনেক কিছু বিবেচনা করেই রূপানির উত্তরসূরি বাছাইয়ের কাজ চলছে বলে বিজেপি সূত্রে খবর।
২০১৬ সালের অগস্টে গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রিত্বের দায়িত্ব নেন রুপানি। ২০১৭ সালে রাজ্যের নির্বাচনে বিজেপির জেতার পর তাঁর উপরই ভরসা রেখেছিল দল। তাহলে এমন কী হল যে চার বছরের মাথায় পদ ছাড়তে হল রুপানিকে? গেরুয়া দলের অন্দরের খবর, কোভিড মোকাবিলায় রুপানি প্রশাসনের কাজে একাধিক অভিযোগ উঠে এসেছে। মানুষের মধ্যে অসন্তোষ রয়েছে। যা ভোটের আগে ধাক্কা দিতে পারে শাসক দলকে। এছাড়াও, পাতিদাররাও তাদের গোষ্ঠী লোককেই মুখ্যমন্ত্রী করার দাবি তুলছে বহুদিন যাবৎ। এসব বিবেচনা করেই এই পালাবদল। কারণ যাই হোক না কেন, রূপানির পদত্যাগ বিজেপির সংগঠন ও রাজনৈতিক গুরুত্বের বিচারের বহু প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।
যদিও ইস্তফার পর বিজয় রুপানি অবশ্য জানিয়েছিলেন যে, 'আমার মতো দলীয় কর্মীকে মুখ্যমন্ত্রী হয়ে মানুষের সেবা করার জন্য দলের কাছে আমি কৃতজ্ঞ। আমার মুখ্যমন্ত্রিত্বের গোটা সময়টা আমি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর পরামর্শ পেয়েছি। তাঁর নেতৃত্বে গুজরাটের উন্নয়ন নতুন শিখর স্পর্শ করেছে। এই রাজ্য এবং রাজ্যের মানুষের সেবা করার সুযোগ দেওয়ায় আমি প্রধানমন্ত্রীর কাছে কৃতজ্ঞ। গুজরাটের উন্নয়ন যাত্রা এ বার নতুন নেতৃত্বের অধীনে যাওয়া উচিত বলে আমি মনে করি। আমি এবার দলের সর্বভারতীয় সভাপতির অধীন কাজ করব।'
এই পালাবদলকে আক্রমণ করেছে বিরধী দল কংগ্রেস। হাত শিবিরের দাবি, 'রুপানি ও রাজ্য সরকার রিমোট কন্ট্রোল সরকার। ব্যর্থতা আড়াল করতে রুপানিকে ক্ষমতা থেকে সরানো হল।'