বিজেপির ঘোষিত সর্বভারতীয় কমিটি নিয়ে দলের অভ্যন্তরেই বিড়ম্বনার শেষ নেই। একাধিক নতুন মুখকে দলের কেন্দ্রীয় কার্যকরী কমিটির সদস্য করা হয়েছে। যদিও রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম নিয়ে বিতর্ক আছে। তবে এরাজ্যের দলীয় পর্যবেক্ষক হিসাবে কৈলাস বিজয়বর্গীয়র নাম থাকায় বিভ্রান্তিতে পড়েছে বিজেপি নেতৃত্বের একাংশ সহ দলীয় কর্মী-সমর্থকরাও। সহপর্যবেক্ষক হিসাবে নাম রয়েছে অরবিন্দ মেনন ও অমিত মালব্যরও।
বিধানসভা নির্বাচনের ফলপ্রকাশের পর তৃণমূলের বিরুদ্ধে বিজেপির অভিযোগ ছিল ভোট পরবর্তী হিংসার। তবুও বিজেপির কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক তথা সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক কৈলাস বিজয়বর্গীয়র মুখ দেখতে পায়নি এই রাজ্যের বিজেপি কর্মী-সমর্থকরা। তাঁর বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলে পোষ্টারও পড়েছিল রাজ্যের দুই কেন্দ্রীয় দফতর সহ কলকাতার অন্যত্র। যা নিয়ে কম বিতর্ক হয়নি। তারপরেও কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক হিসাবে তাঁর নাম থেকে যাওয়ায় হতবাক দলের একাংশ।
আরও পড়ুন- তৃৃণমূলের প্রচারে তারকাদের ছড়াছড়ি, ভোট ময়দানে ঝড় তুলবেন মমতা
এরাজ্যে ২০০ আসনের লক্ষ্যে লড়াই করে বিজেপি দখল করে ৭৭টি আসন। তৃতীয়বারের জন্য ক্ষমতাসীন হয় তৃণমূল কংগ্রেস। যদিও বাংলা দখল করতে না পেরে দলীয় নেতৃত্ব বলতে শুরু করে ৩ থেকে ৭৭, সেটা কম কথা নাকি। যাই হোক ফলপ্রকাশের দেড় মাসের মধ্যেই দলের তৎকালীন সর্বভারতীয় সহসভাপতি ও কৃষ্ণনগরের বিধায়ক মুকুল রায় তৃণমূল ভবনে গিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপস্থিতিতে ঘাসফুল শিবিরে যোগ দেন। তখন ফের কৈলাস-মুকুলের সখ্যতার পুরনো চিত্র প্রকাশ্যে এনে বিজেপি নেতৃত্বের একাংশ সমালোচনা শুরু করে।
আরও পড়ুন- ফের বিজেপির তারকা প্রচারক লকেট, সঙ্গে অসমের মুখ্যমন্ত্রী-ত্রিপুরার নেত্রীও
মুকুল রায় তৃণমূল থেকে বিজেপিতে আসার পর থেকেই তৎকালীন দলের রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের সঙ্গে তাঁর মোটেও বনিবনা ছিল না। দলে কার্যত কোনঠাসা ছিলেন মুকুল। ভোটপর্বের আগে দেখা গিয়েছে, কৈলাস বিজয়বর্গীয় এরাজ্যে এলেই মঞ্চে দাড়িয়ে প্রশংসায় ভরিয়ে দিতেন মুকুল রায়কে। বাংলার রাজনীতির চানক্য, মমতাকে মুকুলই পরাজিত করতে পারবেন, এমন নানান কথা ভাষণে বলে কৈলাশ সুখ্যাতি করেছেন মুকুলের। প্রকাশ্য মঞ্চে মুকুল-কৈলাসের ফিসফিসানি প্রত্যক্ষ করাটা অভ্যাসে পরিনত করে ফেলছিল রাজনৈতিক মহল। অভিজ্ঞ মহল মনে করে, কৈলাস এরাজ্যে এলেই বুকে বল আসতো মুকুল রায়ের। বিজেপির প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি তথাগত রায় টুইটে কড়া কটাক্ষ করে বিঁধেছিলেন কৈলাসকে।
বাংলায় দল পরাজিত হওয়ার পর যাঁর দেখা পাওয়া যায়নি তাঁর নাম ফের পর্যবেক্ষক হিসাবে ঘোষণা করায় বিড়ম্বনায় পড়েছে রাজ্য বিজেপি নেতৃত্ব। রাজ্য বিজেপির জনৈক শীর্ষ নেতা বলেন, 'অনেক ক্ষেত্রেই কমিটির নাম 'কপি পেস্ট' হয়ে গিয়েছে। একমাত্র কার্যকরি কমিটির সদস্য বাংলা থেকে পরিবর্তন হয়েছে। সাংসদ সুকান্ত মজুমদার দলের এখন রাজ্য সভাপতি, তিনি কী আর সিকিমের পর্যবেক্ষকের কাজে সময় দিতে পারবেন?' তবে এখনই তাঁদের পরিবর্তন করা হবে কী না তা-ও জানাতে পারেননি ওই নেতা। রাজনৈতিক মহলের মতে, কৈলাসকে নিয়ে দলের অভ্যন্তরেই যে ক্ষোভ-বিক্ষোভ দেখা গিয়েছে ফের সেই পদে তিনি বহাল থাকলে কীভাবে তা নিরসন করা যাবে তা নিয়ে বিজেপি নেতৃত্ব ভাবতে বাধ্য।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন