ভোট ঘোষণা হয়নি। কিন্তু তার আগেই নন্দীগ্রাম অস্ত্রে শান দিয়ে প্রার্থী ঘোষণা শুরু করে দিলেন তৃণমূল নেত্রী। নন্দীগ্রামে দাঁড়িয়েই তাঁর ঘোষণা, এবার ভোটে সেখান থেকে লড়বেন তিনি। যা ঘিরে বঙ্গ রাজনীতিতে এখন তুমুল হইচই।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশের মতে মমতার এই ঘোষণা মাস্টারস্ট্রোক। কারণ, তিনি নিজে নন্দীগ্রামে প্রার্থী হওয়ার অর্থ, শুভেন্দু অধিকারীকে সরাসরি চ্যালেঞ্জ জানানো। এবং নিজের জেলাতেই শুভেন্দুকে কোণঠাসা করার কৌশলী চেষ্টা। তাছাড়া, লোকসভায় জঙ্গলমহল এলাকায় বিজেপি ভাল ফল করেছিল। মমতা মেদিনীপুরে নির্বাচনে লড়াইয়ের সিদ্ধান্ত নিয়ে জঙ্গলমহল এবং আশেপাশের জেলাগুলির বাসিন্দাদের কাছে থাকার বার্তাও দিয়ে দিলেন।
যদিও তৃণমূল নেত্রীর এই ঘোষণা আসলে তাঁর 'ভীরু' মানসিকতার লক্ষণ বলেই মনে করছে বামেরা। এ প্রসঙ্গে বাম পরিষদীয় দলনেতা তথা সিপিএম বিধায়ক সুজন চক্রবর্তী বলেছেন, 'ভবানীপুরে জিতবেন না বুঝতে পেরেই পালিয়ে গেলেন তিনি (মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়)। ১০ বছর ওকান থেকে দাঁড়িয়ে কেন চলে গেলেন। জানতেন জিতবেন না। তাই এখন জমি আন্দোলেনর কথা বলে নন্দীগ্রাম থেকে দাঁড়িয়ে জেতার চেষ্টা করছেন।' শাসক দলের নেত্রীর ঘোষণা আসলে বিজেপিকে বার্তা বলেই দাবি সুজনবাবু।
আরও পড়ুন- 'করেঙ্গে ইয়ে মরেঙ্গে’, কেন নন্দীগ্রামে প্রার্থী মমতা?
একুশে নন্দীগ্রাম থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রার্থী হওয়া প্রসঙ্গে বিজেপি নেতা শমীক ভট্টাচার্য বলেন, 'কত জায়গা থেকে দাঁড়াবেন উনি। বলছেন ভবানীপুর-নন্দীগ্রাম দুটো আসনেই প্রার্থী তিনি। লোকসভায় বলেছেন সব বিধানসভা আসনেই প্রার্থী উনি। তাও মানুষের ভোট পাননি। এক মাস আগে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, ২৯৪টা কেন্দ্রের পর্যবেক্ষক আমিই। এবারও পাবেন না। দলটাই ভেঙে যাচ্ছে। তৃণমূল ছেড়ে অনেকেই ভোটের আগে বিজেপিতে যোগ দেবেন। আসলে নীচের তলা থেকে তৃণমূল কর্মীরা সরে যাচ্ছেন। তাদের আটকাতে এসব বলছেন তিনি। এভাবে তৃণমূল নামক ডুবন্ত নৌকাকে রক্ষা করা যাবে না। সময় এলেই সব জানা যাবে।'
Mamata Banerjee’s decision to shift seat from Bhowanipore to Nandigram, for the first time in 10 years, indicates her political nervousness...
Will she explain why IPS Satyajit Bandopadhyay, chargesheeted by CBI for firing on protesting farmers in Nandigram, was inducted in TMC?
— Amit Malviya (@amitmalviya) January 18, 2021
আরও পড়ুন- হাফ-লাখ ভোটে নন্দীগ্রামে হারবেন মমতা, চ্যালেঞ্জ শুভেন্দুর
কটাক্ষ ছুড়ে দিয়ে বিজেপির পশ্চিমবঙ্গের সহকারী পর্যবেক্ষকের দায়িত্বপ্রাপ্ত ও দলের আইটি সেলের প্রধান অমিত মালব্য টুইটে লেখেন, 'গত ১০ বছরের মধ্যে এই প্রথম মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভবানীপুরের আসন ছেড়ে নন্দীগ্রামে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এই ঘটনা প্রমাণ করছে যে তিনি রাজনৈতিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কি মানুষকে জানাবেন যে কেন নন্দীগ্রামের প্রতিবাদী কৃষকদের উপর গুলি চালানোর ঘটনায় সিবিআইয়ের চার্জশিটে নাম থাকা আইপিএস সত্যজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়কে তৃণমূলে নেওয়া হল?'
নন্দীগ্রামের প্রার্থী হিসাবে নিজের নাম বলতে গিয়ে এদিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, 'এবারে নন্দীগ্রামে এমন কাউকে প্রার্থী করব ভাবছি, যে আপনাদের কাছে পড়ে থেকে আপনাদের কাজ করবে। ভাল কাউকেই প্রার্থী করব। ভাবছিলাম, আমি নিজেই যদি দাঁড়ায় তাহলে কেমন হয়? একটু গ্রামের জায়গা, আমার মনের জায়গা, আমি হয়তো ভোটের আগে বেশি আসতে পারব না। আমাকে ২৯৪ আসনেই লড়তে হবে। আপনারাই সব করে দেবেন। ভোটের পরে যা করার আমি করব। নন্দীগ্রামের সঙ্গে আমার আত্মার টান। নিজের বিবেক থেকেই বলছি। নন্দীগ্রাম আমার জন্য লাকি। এখান থেকেই লড়ব, এবং সবকটি আসনে তৃণমূল কংগ্রেস জিতবে।'
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন