চার পুরনিগমের নির্বাচনে বিপুল জয় পেয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। ধুয়ে-মুছে সাফ করে দিয়েছে বিরোধীদের। তৃণমূলের এই জয় নিয়েই যাবতীয় অভিযোগ বিজেপি, সিপিএম ও কংগ্রেসের। যদিও বিরোধীদের সব অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। তবে কলকাতা পুরভোটের পর ফের প্রাপ্ত ভোট শতাংশের হিসেবে অনেকটাই পিছিয়ে পড়েছে গেরুয়া শিবির। ইতিমধ্যে ২৭ফেব্রুয়ারির ১০৮টি পুরসভা নির্বাচনের মধ্য়ে ৪টি বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় দখল করেছে ঘাসফুল শিবির। রাজনৈতিক মহলের মতে, রাজ্যের বাকি পুরসভার ফলাফলের আভাস দিয়ে দিল এদিনের চার পুরনিগমের ফলাফল।
গত বিধানসভা নির্বাচনে উত্তরবঙ্গ বিজেপির মুখ রেখেছিল। দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ারে ব্যাপক জয় পেয়েছিল গেরুয়া শিবির। ৬ মাস আগে শিলিগুড়ির পুর এলাকার দুই বিধানসভায় বিজেপি জয় পেলেও সেখানে ৪৭আসনের মধ্যে ৩৭টি আসনেই জয় পেয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। বিজেপি পেয়েছে মাত্র ৫টি আসন। ব্যাপকহারে কমেছে বিজেপির ভোট শতাংশের হার। বিজেপিকে ২৩ শতাংশ ভোট পেয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে, বামেরা পেয়েছে ১৮ শতাংশ।
গত বছর বিজেপি প্রার্থী শঙ্কর ঘোষ শিলিগুড়ি বিধানসভা কেন্দ্র থেকে ৫০.০৩ শতাংশ ভোট পেয়ে বিধানসভা যাওয়ার ছাড়পত্র পেয়েছিলেন। বিজেপি প্রার্থী শিখা চট্টোপাধ্যায় ৪৯.৮৫ শতাংশ ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছেন পাশের ডাবগ্রাম-ফুলবাড়ি কেন্দ্রে। অর্থাৎ দুজনের গড় ভোটপ্রাপ্তি প্রায় ৫০ শতাংশ। শিলিগুড়ি পুরসভার ৩৩টি ওয়ার্ড শিলিগুড়ি ও বাকি ওয়ার্ড ডাবগ্রাম-ফুলবাড়ির মধ্যে পড়ছে। এবার পুরভোটে পরাজিত হয়েছেন স্বয়ং বিজেপি বিধায়ক শঙ্কর ঘোষ। বিধানসভা ভোটের মাত্র ৯ মাস পর বিজেপি ভোট পেল মাত্র ২৩ শতাংশ। গেরুয়া শিবিরের ভোট কমেছে ২৭শতাংশ। খোদ উত্তরবঙ্গে বিজেপির ভোট কমে যাওয়া গেরুয়া শিবিরের কাছে যথেষ্ট চিন্তার বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। যদিও বিজেপি এই ভোটকে প্রহসন বলেই মনে করছে।
আসানসোল লোকসভা কেন্দ্রে পর পর দুবার জয় পেয়েছে বিজেপি। তারপর গত বিধানসভাতেও সেখানে আসন পেয়েছে গেরুয়া শিবির। কিন্তু এবার আসানসোল পুরসভা নির্বাচনেও চূড়ান্ত ভরাডুবি হয়েছে বিজেপির। শতাংশের হারে বিজেপি সেখানে ভোট পেয়েছে মাত্র ১৭ শতাংশ, বামেরা পেয়েছে ১১ শতাংশ ভোট। চন্দনগর ও বিধাননগর পুরনিগমে ভোট শতাংশের হিসাবে বিজেপিকে পিছনে ফেলে দিয়েছে বামেরা। চন্দননগরে বিজেপি পেয়েছে মাত্র ১০ শতাংশ ভোট, ২৭ শতাংশ ভোট পেয়েছে বামেরা। তবে এখানে সাংসদ বিজেপির। এখানে বামেরা একটি আসনে জয়ও পেয়েছে। বিজেপি জয়ের মুখ দেখেনি। বিধাননগরে বিজেপির ভোটপ্রাপ্তি ১০ শতাংশের নীচে নেমে গিয়েছে। পেয়েছে মাত্র ৮ শতাংশরে কিছু বেশি ভোট পেয়েছে। বামেরা বিজেপির থেকে এগিয়ে গিয়ে পেয়েছে ১০ শতাংশের বেশি ভোট। তবে উল্লেখ্য, চার পুরনিগমের মধ্যে তৃণমূল কংগ্রেস সব থেকে বেশি প্রায় ৭৪ শতাংশ ভোট পেয়েছে বিধাননগরে।
বিধাননগর ও চন্দননগরে ভোট শতাংশ বামেরা দ্বিতীয় স্থান পেয়েছে। শিলিগুড়ি ও আসানসোলে বিজেপি দ্বিতীয় হয়েছে। তবে চার পুরনিগমে প্রথম স্থান থেকে দ্বিতীয়র দূরত্বের ফারাক বিস্তর। এই বিপর্যয়ের পর সামনের শতাধিক পুরনির্বাচনে বিরোধীরা লড়াই গড়ে তুলতে পারে কিনা সেটাই এখন দেখার।