রাজ্যের চার কেন্দ্রে উপনির্বাচন ৩০ অক্টোবর। উত্তরবঙ্গের দিনহাটা, দক্ষিণবঙ্গে গোসাবা, খড়দহ ও শান্তিপুরের ভোট গণনা ২ নভেম্বর। শান্তিপুরের নির্বাচন একেবারে জমজমাট। কোন অঙ্কে ভোট জিততে মরিয়া তৃণমূল বা বিজেপি? ময়দানে আছে সিপিএমও। অ্যাটাক-কাউন্টার অ্যাটাক পর্ব চলছেই।
বাংলাদেশের কুমিল্লা, নোয়াখালির সাম্প্রতিক দুর্গামণ্ডপ ও মন্দির ভাঙার ঘটনার প্রচার এখানে একেবারে টাটকা। শুধু সীমান্তবর্তী জেলার বিধানসভা কেন্দ্র নয়, এখানকার বাসিন্দাদের অনেকের সঙ্গেই রয়েছে বাংলাদেশের নাড়ির টান। অনেক নিকটাত্মীয় এখনও বাংলাদেশে বাস করেন। তাই বাংলাদেশ ইস্যু শান্তিপুরে জিইয়ে রাখতে মরিয়া বিজেপি। রীতিমতো বাড়ি বাড়ি প্রচারে গিয়ে বাংলাদেশের ঘটনা তুলে ধরেছে বিজেপি।
ডাবরেপাড়ায় একটি লজে ঘাঁটি গেড়ে বিজেপি নেতৃত্ব ভোটে প্রচার চালিয়েছে শান্তিপুরে। আবার ডাকঘর এলাকায় তৃণমূলের দলীয় দফতরে কর্মীদের সঙ্কুলান না হওয়ার জন্য কার্যালয়ের সামনে ফাঁকা জায়গায় প্যান্ডেল খাটানো হয়েছে। অন্যদিকে প্রচারে টেক্কা দেওয়ার চেষ্টার কসুর করেনি সিপিএম। তবে এবার সব ইস্যুকে ছাড়িয়ে বাংলাদেশে দুর্গা মণ্ডপ ও হিন্দু মন্দিরের ওপর হামলার ঘটনাই শান্তিপুরে প্রধান ইস্যু হয়ে গিয়েছে।
বিজেপির অস্থায়ী কার্যালয়ে বসে বিজেপি নেতা অভিজিত দাস বলেন, 'বাড়ি বাড়ি প্রচার করা হয়েছে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক নির্যাতনের কথা। বলা হয়েছে দুর্গামণ্ডপ ও হিন্দুদের ওপর অত্যাচারের কথা।' এই ইস্যু নিয়েই সরগরম শান্তিপুরের উপনির্বাচন। বিজেপির এই বাংলাদেশ ইস্যুকে ভোতা করতে পথে নেমেছে তৃণমূল কংগ্রেস। সিপিএমের বক্তব্য দুটি দলই ধর্ম নিয়ে রাজনীতি করছে।
শান্তিপুরের বাসিন্দাদের একটা বড় অংশ পূর্ববঙ্গ থেকে এসে এখানে বসবাস করছেন। ভিটেমাটি ছেড়ে এলেও তাঁদের অনেক আত্মীয়-স্বজন এখনও প্রতিবেশী দেশে বাস করেন। সারাক্ষণ তাঁরা টেনশনে কাটাচ্ছেন বলে জানালেন আরতি বিশ্বাস। ৬৫ বছরের আরতিদেবীর কথায়, 'ওই দেশ ছেড়ে এখানে চলে এসেছি। কিন্তু আমাদের অনেক আত্মীয় এখনও ওই দেশে রয়েছেন। কুমিল্লা, নোয়াখালি সহ বাংলাদেশের নানা জায়গায় হিন্দুদের ওপর আক্রমণের পর তাঁদের বলেছি এই দেশে চলে আসতে। প্রাণে তো বেঁচে যাবে।' তাহলে ভোটে কী ভাবছেন? তাঁর জবাব, 'সে তো ঠিক জায়গাতেই দেব।'
নানা সমীকরণ রয়েছে শান্তিপুরে। এখানে গোস্বামী বাড়ি থেকে তৃণমূল প্রার্থী হওয়ায় কানাঘুষো চলছে শহরের বিশেষ মহল্লায়। সেই মহল্লার ভোট কোন দিকে যাবে তা নিয়েও সংশয়ে রয়েছে রাজনৈতিক মহল। সিপিএম প্রার্থী সৌমেন মাহাতোর কথায় হিন্দুরা বিজেপির ভোটার, মুসলিমরা তৃণমূলকে ভোট দেবে এতো আর হয় না। বাংলাদেশে ইসকন মন্দিরের ওপর হামলা হয়েছে। তা নিয়ে সারা বিশ্ব তোলপাড়। শান্তিপুরে ইসকনের কয়েক হাজার শিষ্য রয়েছেন। তাঁদের ভোট কোন দিকে যাবে তা-ও বড় ফ্যাক্টর বলে মনে করছে অভিজ্ঞ মহল।
আরও পড়ুন- শান্তিপুর উপনির্বাচন ২০২১: লড়াইয়ে দুই ফুল, নেপোয় দই মারার আশায় সিপিআইএম
বিজেপি প্রার্থী নিরঞ্জন বিশ্বাস ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলাকে বলেন, বাংলাদেশের অত্যাচারের জবাব দেবে শান্তিপুরের মানুষ। তিনি বলেন, 'এখানকার মানুষ লোকসভা ও বিধানসভায় আশীর্বাদ করেছে বিজেপিকে। বাংলাদেশের অত্যাচারের বিরুদ্ধে বিজেপির একটা মতামত আছে। শান্তিপুরের মানুষ আমাদের সঙ্গে একমত। তাঁরা এই নির্বাচনে ভোটবাক্সে জবাব দেবে। সনাতনীদের ওপর আক্রমণ এখানকার নির্বাচনে বড় ইস্যু। এখানে বাংলাদেশ থেকে আসা অনেকেই আছেন। আমরা নিশ্চিত তাঁরাও এর জবাব দেবেন ভোটের বাক্সে। জল জমা একটা বড় সমস্যা।'
তৃণমূল প্রার্থী ব্রজকিশোর গোস্বামীও জল জমা বা স্থানীয় নানা সমস্যার কথা বলেছেন। তবে বাংলাদেশ ইস্যু ভোটে বিজেপির কোনও কাজে আসবে না বলেই অভিমত দিয়েছেন তৃণমূল প্রার্থী। সিপিএম প্রার্থীর স্পষ্ট বক্তব্য, 'পাকিস্তান, বাংলাদেশের ইস্যু এখানে কোনও প্রভাব ফেলতে পারবে না।'
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন