২০১১-এ এরাজ্যে পরিবর্তনের আগে যেখানেই বিরোধীরা ক্ষোভ-বিক্ষোভ, মিছিল করেছে প্রায় সেখানেই পুলিশ লাঠিচার্জ করেছে। এমন দৃশ্য দেখতে রাজ্যবাসী অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছিল। তখন সভা-সমাবেশের অনুমতিও মিলতো না পুলিশ-প্রশাসনের কাছ থেকে। অনুমতি ছাড়া বাম আমলে বহু রাজনৈতিক সভা করতে হয়েছে এরাজ্যের বিরোধীদের। এর ফল সবাই প্রত্যক্ষ করেছে। পড়শি রাজ্যে ত্রিপুরায় গত কয়েক মাস ধরেই একই ঘটনা ঘটছে। রাজনৈতিক মহল ক্রমাগত ত্রিপুরার বিজেপি সরকারের তৃণমূল বিরোধিতার রহস্য খুঁজতে ব্যস্ত।
এরাজ্যে তৃতীয়বারের জন্য ক্ষমতায় আসার পর ভিন রাজ্যে সংগঠন বিস্তারের দিক নজর দেয় তৃণমূল কংগ্রেস। প্রথমেই নজর দেয় পড়শি বাঙালি অধ্যুষিত রাজ্য ত্রিপুরার দিকে। একসময় সেখানে কংগ্রেস বিধায়কদের দলে নিয়ে বাজিমাত করতে চেয়েছিল তৃণমূল। বিজেপির কৌশলে তৃণমূলের ত্রিপুরা অভিযান ফিকে হয়ে যায়। ফের দল ভাঙিয়ে ত্রিপুরায় নিজেদের সংগঠন পোক্ত করতে শুরু করে ঘাসফুল শিবির। বাংলা থেকে নিত্য তৃণমূল নেতৃত্ব ত্রিপুরায় যাতায়াত শুরু করে। এবার সব দিক থেকে বিরোধিতা শুরু করে দেয় ত্রিপুরা বিজেপি।
তৃণমূল কংগ্রেসের অভিযোগ, তাঁদের সভা-সমাবেশে বারংবার জোর করে বাধা দিচ্ছে বিজেপি। এমনকী ত্রিপুরা সরকারও অনুমতি না দেওয়া, গ্রেফতার করা নানা ভাবে তৃণমূলের সংগঠন বিস্তার রুখতে চেষ্টা করছে। তাছাড়া তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের মিছিলের অনুমতি না দিয়ে সংশ্লিষ্ট জায়গায় ১৪৪ ধারা জারি করে দেয় সরকার। এবার তো সভাস্থল শেষ মুহূর্তে বদলে নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল। শেষমেশ হাইকোর্টের অনুমতি মেলে অভিষেকের সভার। কিন্তু এই বাধার ফলে রাজনৈতিক ফায়দা কার হবে সেই প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে রাজনৈতিক মহলে।
অভিজ্ঞ মহলের মতে, রাজনৈতিক ক্ষেত্রে যত বিরোধিতা হবে তত সেই দলের ভবিষ্যতে লাভ হবে। তত বেশি প্রচার পাবে। তাহলে ত্রিপুরায় কেন সেই ভূমিকা নিচ্ছে বিজেপি ও বিজেপি পরিচালিত সরকার। নির্দিষ্ট কোনও অভিযোগ থাকলে তা নিয়ে কোনও প্রশ্ন উঠতে পারে না। কিন্তু যখন একই ক্ষেত্রে দুই দলকে দুরকম সুবিধা দেওয়া হয়, সেক্ষেত্রে প্রশ্ন ওঠা খুব স্বাভাবিক বলে মনে করে রাজনৈতিক মহল। তারওপর গাড়ি ঘিরে বিক্ষোভ বা মারধর, গ্রেফতারি তাতে কার্যত শাসকদলের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে বাধ্য। যে রাজ্যে বিধানসভায় কোনও আসন নেই, নামমাত্র ভোট জুটেছে সেখানে অহেতুক বিরোধিতা সেই দলকে বাড়তি সুবিধে পাইয়ে দেওয়ার নামান্তর বলে মনে করে অভিজ্ঞ মহল। ত্রিপুরায় তৃণমূলের অবস্থান তেমনই।
রাজনৈতিক মহলের প্রশ্ন, তাহলে ত্রিপুরায় তৃণমূল সংগঠন বৃদ্ধিতে কি বিজেপি ও তার সরকার সহায়ক ভূমিকা নিচ্ছে? কেন নিচ্ছে? ত্রিপুরায় সিপিএম ও কংগ্রেসকে চাপে রাখার কৌশল? ইতিমধ্যে বাংলার নির্বাচনে বাম-কংগ্রেস শূন্যে দাঁড়িয়েছে। গোয়ায় তৃণমূল অভিযান শুরু করায় কংগ্রেস ছোটাছুটি শুরু করেছে। আগামিদিনে ত্রিপুরার বিধানসভা নির্বাচনেই এসব প্রশ্নের জবাব মিলবে বলে মনে করছে অভিজ্ঞ মহল।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন