বিজেপিতে বেসুরো রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। শুভেন্দু অধিকারীর দাবির বিরুদ্ধে ফেসবুকে মঙ্গবারই বিস্ফোরক পোস্ট করেছেন এই গেরুয়া নেতা। ফলে প্রাক্তন মন্ত্রীর তৃণমূলে ফেরার জল্পনা তৈরি হয়েছে। আর এতেই বেঁকে বসেছে তৃণমূলের একাংশের নেতা, কর্মীরা। বুধবার রাজীবেরই নির্বাচনী কেন্দ্র ডোমজুড়ে প্রাক্তন মন্ত্রীর বিরুদ্ধে পোস্টার পড়ে। রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়কে যেন আর তৃণমূলে পারনো না হয় তার জন্য দলীয় নেতৃত্বের কাছে পোস্টার সেঁটে জানান ডোমজুড়ের তৃণমূল কর্মীরা। ওই পোস্টারে তাঁকে 'মীরজাফর' 'গদ্দার-বেইমান' বলে দেগে দেওয়া হয়েছে।
হাওড়ার সলপ বাজার এলাকায় ডোমজুড় বাজার কেন্দ্রের তৃণমূলের তরফে এই পোস্টার দেখা যায়। একাধিক পোস্টারে লেখা রয়েছে যে, 'তৃণমূলল কংগ্রেস কর্মীদের উপর যে অথ্যাচার মিথ্যা মামলা যে গদ্দার বেইমানের নেতৃত্বে হয়েছিল তাঁদের এই বাংলায় টাঁই নেই। নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যের কাছে তৃণমূল কর্মীদের একান্ত অনুরোধ তাঁদের এই বাংলায় ঠাঁই না দেওয়া হোক।' অন্য একটি পোস্টারে উল্লেখ, 'নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে যাঁরা বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন এই বাংলায় তাঁদের ঠাই নেই।'
আরও পড়ুন- Rajib Banerjee Criticizes BJP: এবার বেসুরো রাজীব, মমতা সরকারকে ৩৫৬-র জুজু দেখানো নিয়ে ক্ষোভ
আইন-শঋঙ্খলা অবনতির কথা তুলে ধরে বাংলায় ৩৫৬ ধারা প্রয়োগ নিয়ে যখন দিল্লিতে দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছে তদ্বির করছেন শুভেন্দু অধিকারী, ঠিক তখনই তার সমালোচনা করলেন জোমজুড় কেন্দ্রের পরাজিত বিজেপি প্রার্থী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। জনগণের ভোটে জয়ী মমতা সরকারকে কথায় কথায় দিল্লি ও ৩৫৬ জুজু দেখানোর প্রতিবাদ করে ফেসবুকে বিস্ফোরক পোস্টে করেন তিনি। দলীয় অবস্থানের নিন্দা করে ফেসবুকে তিনি লেখেন, 'সমালোচনা তো অনেক হল…মানুষের বিপুল জনসমর্থন নিয়ে আসা নির্বাচিত সরকারের সমালোচনা ও মুখ্যমন্ত্রীর বিরোধিতা করতে গিয়ে কথায় কথায় দিল্লি, আর ৩৫৬ ধারার জুজু দেখালে বাংলার মানুষ ভালোভাবে নেবে না। আমাদের সকলের উচিত, রাজনীতির ঊর্দ্ধে উঠে ‘কোভিড’ ও ইয়াস, এই দুই দুর্যোগে বিপর্যস্ত বাংলার মানুষের পাশে থাকা।'
আরও পড়ুন- পুরুলিয়ায় আক্রান্ত তৃণমূল নেতা, প্রহৃত চিত্র সাংবাদিক, গ্রেফতার বিজেপি বিধায়কের ভাই
ভোটের আগে তৃণমূলে ‘দমবন্ধ’ পরিস্থিতি ও কাজ না করতে পারার অভিযোগ তুলেছিলেন রাজীব। চাটার্ড উড়ানে দিল্লিতে গিয়ে যোগ দেন বিজেপিতে। তারপর ভোট পর্বে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তৃণমূলকে কড়া আক্রমণ শানিয়েছেন তিনি। কিন্তু একুশের ভোট জোমজুড় থেকে পরাজিত হতেই নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েন এই বিজেপি নেতা। তবে, পরাজয়ের পর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যেয়র প্রশংসা করেছিলেন রাজীববাবু। তখন থেকেই জল্পনা ফের কী তাহলে জোড়া-ফুলে ফিরতে আগ্রহী দলত্যাগী এই নেতা। এদিন তাঁর ফেসবুক পোস্টে সেই জল্পনা আরও কয়েকগুণ বাড়ল। যদিও দলবদলু এই নেতাকে ফের দলে মেনে নিতে নারাজ জোমজুড়ের তৃণমূল কর্মীরা।
ভোটের আগে এক সময় রাজীবের সমর্থনে দাদার অনুগামী' পোস্টার পড়েছিল। এবার পড়ল 'বেইমান-গদ্দার-মীরজাফর' পোস্টার। এ প্রসঙ্গে অবশ্য প্রাক্তন মন্ত্রীর কোনও বয়ান মেলেনি। অবশ্য তৃণমূলের তরফে মুখ খুলেছেন মন্ত্রী তথা হাওড়ায় জোড়া-ফুলের নেতা অরূপ রায়। তাঁর কথায়, 'দলে বিশ্বাসঘাতকদের জায়গা নেই। তবে উৎপল দত্ত বেঁচে থাকলে এই অভিনয় দেখে লজ্জা পেতেন। যাঁরা যুদ্ধের সময় দলকে ডুবিয়ে চলে যায় তাঁদের গদ্দার বলা হয়। মানুষ এখনও ওঁর বেইমানি ভোলেনি।'
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন