বিজেপিতে ডানা ছাঁটা হল মুকুল রায়ের! দিলীপ ঘোষের অনুমতি ছাড়া কাউকেই বিজেপিতে যোগদান করানো যাবে না। অন্য দল থেকে কাউকে যোগদান করাতে হলে দিল্লি নয়, রাজ্য বিজেপির সদর দফতরে করাতে হবে। দলের এই নির্দেশিকা তিনিও মেনে চলবেন বলে মঙ্গলবার জানিয়েছেন মুকুল রায়। বঙ্গ বিজেপির এহেন নির্দেশিকা ঘিরেই শুরু হয়েছে জোর চর্চা। সাম্প্রতিককালে দলবদল নিয়ে রীতিমতো অস্বস্তিতে পড়েছে বঙ্গ বিজেপি নেতৃত্ব। সেই দলবদলের হোতা মুকুলকেই এবার বিজেপিতে কোণঠাসা করা হল বলে মনে করছেন রাজনীতির কারবারীদের একাংশ।
উল্লেখ্য, লোকসভা ভোটের পর তৃণমূলে কার্যত ‘ভাঙন’ ধরিয়ে দিয়েছিলেন মুকুল রায়। কিছুদিনের মধ্যেই দলত্যাগী নেতাদের ঘরে ফিরিয়ে একসময়ের ‘ঘরের লোক’-কে জোর ‘ধাক্কা’ দিয়েছে মমতা বাহিনী। এই ধাক্কার রেশ পৌঁছেছে ৬, মুরলীধর সেন লেনেও। তৃণমূল নেতাদের বিজেপিতে এনে দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছে রাতারাতি কার্যত ‘ভাল নম্বর’ পেয়ে ক্রমশই মুখের হাসি চওড়া হচ্ছিল মুকুল রায়ের। কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই সেই দলত্যাগী নেতারা ফের তৃণমূলে যোগ দেওয়ায় জোর অস্বস্তিতে পড়েছে বঙ্গ বিজেপি নেতৃত্ব। আর এর জেরেই বিজেপিতে এই মুহূর্তে কার্যত মুকুলের ‘কোণঠাসা’ অবস্থা বলে বিজেপি সূত্রে খবর।
আরও পড়ুন: ‘মুকুল রায় তৃণমূলের হয়ে কাজ করছেন’
কী বলেছেন মুকুল রায়?
মঙ্গলবার মুকুল বলেন, ‘‘দিল্লিতে আর কোনও যোগদান করানো হবে না। এখন থেকে অন্য দল থেকে বিজেপিতে আসতে চাইলে, তাঁদের রাজ্য বিজেপির সদর দফতরে যোগদান করানো হবে। দলের এই নির্দেশ মেনে চলব’’। উল্লেখ্য, উনিশের নির্বাচনে বঙ্গে বিজেপির উত্থানের পরই একের পর এক তৃণমূল নেতা-কর্মীদের দিল্লিতে নিয়ে গিয়ে বিজেপিতে যোগদান করান মুকুল রায়। কয়েকদিন আগে হালিশহর, কাঁচরাপাড়া-সহ কয়েকটি পুরসভার একঝাঁক কাউন্সিলরদের দিল্লি নিয়ে গিয়ে তাঁদের হাতে পদ্ম পতাকা তুলে দেওয়া হয়। এরপরই ওই সব পুরসভা বিজেপির দখলে বলে দাবি করেন মুকুল। এর কিছুদিনের মধ্যেই ‘হাতছাড়া’ পুরসভাগুলি ফের ‘পুনরুদ্ধার’ করে তৃণমূল নেতৃত্ব। বিজেপি সূত্রের খবর, এহেন দলবদলের পরই দলের নেতৃত্বের কাছে প্রশ্নের মুখে পড়ে মুকুল রায়ের ভূমিকা। এই পরিস্থিতিতে দলের অস্বস্তি বাড়ানোর জন্য মুকুলকেই কাঠগড়ায় তুলেছেন বঙ্গ বিজেপি নেতৃত্বের একাংশ। সেকারণেই এমন নির্দেশিকা বলে মনে করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন: ‘মমতা পারছেন না, তাই তৃণমূল সভাপতি প্রশান্ত কিশোর’
অন্যদিকে, বিজেপির সাধারণ সম্পাদক সুব্রত চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছেন, ‘‘অন্য দল থেকে কেউ বিজেপিতে যোগ দিতে চাইলে আগে বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের অনুমতি লাগবে। দিলীপের অনুমতি ছাড়া যোগদান করানো হবে না’’। প্রসঙ্গত, বিজেপি অন্দরে কান পাতলেই দিলীপ-মুকুল ‘মধুর’ সম্পর্কের কথা শোনা যায়। এমনকী, মুকুলের হাত ধরে তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের বিজেপিতে যোগদান নিয়ে দিলীপ ঘোষ খুব একটা সন্তুষ্ট নন বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহলের একাংশ। কয়েকদিন আগে ‘খুন-সন্ত্রাসে’ অভিযুক্ত তৃণমূল নেতা মণিরুল ইসলামকে দলে নিয়ে বঙ্গ বিজেপি নেতৃত্বের একাংশের কাছে সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে মুকুলকে। সমালোচকদের তালিকায় দিলীপ ঘোষও ছিলেন বলে সূত্রের খবর। সেই প্রেক্ষাপটে বঙ্গ বিজেপির এমন নির্দেশিকা তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করা হচ্ছে।
Read the full story in English