মানভঞ্জনে অর্জুনকে দিল্লি তলব? উত্তরটা স্পষ্ট না হলেও রাজনৈতিক মহলে জল্পনা এমনই। আজই দিল্লি যাচ্ছেন বারাকপুরের বিজেপি সাংসদ অর্জুন সিং। দিল্লিতে অর্জুনকে ডেকে পাঠিয়েছেন বিজেপির শীর্ষ নেতারা। কেন্দ্রীয় সরকারের পাট-নীতির বিরুদ্ধে শুক্রবার মুখ্যমবন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠি লিখেছিলেন অর্জুন সিং। শোরগোল পড়ে যায় রাজ্য বিজেপির অদন্দরে। মোদী সরকারের বিরুদ্ধে অর্জুনের ক্ষোভের আঁচ পৌঁছোয় দিল্লিতেও। সেই কারণেই দিল্লিতে দলের শীর্ষ নেতারা ডেকে পাঠিয়েছেন অর্জুন সিংকে। সূত্র মারফত জানা গিয়েছে, খোদ কেন্দ্রীয় বস্ত্রমন্ত্রীও নাকি অর্জুন সিংয়ের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন।
পাট নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের 'ভ্রান্ত' নীতির কারণেই গোটা একটি শিল্প ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে বলে দিন কয়েক ধরেই সরব বারাকপুরের বিজেপি সাংসদ অর্জুন সিং। পাট শিল্পকে বাঁচাতে এর আগে একাধিকবার কেন্দ্রীয় বস্ত্রমন্ত্রী পীযূষ গোয়েলের সঙ্গে কথা হলেও কোনও সুরাহা মেলেনি বলে সাংবাদমাধ্যমে সোচ্চার হন অর্জুন সিং। প্রয়োজনে কেন্দ্রীয় নীতির বিরুদ্ধে পথে নেমে আন্দোলন করারও হুঁশিয়ারি দিয়ে রেখেছিলেন অর্জুন। বারাকপুর শিল্পাঞ্চলের একটি বড় অংশে পাট শিল্পের এক সময় রমরমা কারবার ছিল। তবে বর্তমানে এই শিল্প ধ্বংসের পথে।
শনিবার দিল্লি রওনা দেওয়ার আগেও ফের একবার পাটশিল্প নিয়ে সোচ্চার হন অর্জুন। তিনি বলেন, ''পাট শ্রমিকরাই আমার মা, বাবা। তাঁদের সমস্যা সমাধানই আমার প্রধান লক্ষ্য।'' পাট শিল্পকে বাঁচাতে কেন্দ্রীয় সরকারের হস্তক্ষেপ দাবি করেছিলেন অর্জুন সিং। যদিও অর্জুনের দাবি, কেন্দ্রীয় বস্ত্রমন্ত্রীর সঙ্গে এব্যাপারে কথা বলেও কোনও সুরাহা হয়নি। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজি হলে তাঁর সঙ্গে পাট শিল্পকে বাঁচাতে আন্দোলনে নামতেও তৈরি বলে দাবি করেছিলেন অর্জুন।
এরপর শুক্রবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সরাসরি এই ইস্যুতে চিঠি দেন বারাকপুরে বিজেপি সাংসদ। মমতা বন্দ্যেপাধ্যয়া ছাড়াও ওড়িশা, অসম এবং বিহারের মুখ্যমন্ত্রীকেও চিঠি দেন অর্জুন। বাংলার পাশাপাশি এই দুই রাজ্যেও পাট চাষ ও পাট শিল্পের বহু প্রতিষ্ঠান রয়েছে।
এদিকে, কোন্দল-ভাঙনে এমনিতেই বেশ বেকায়দায় বঙ্গ বিজেপি। এর ওপর অর্জুন সিংয়ের মতো এমন ডাকাবুকো নেতার কেন্দ্রের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে জল্পনা ছড়ায় বঙ্গ বিজেপির অন্দরে। তবে কি এবার তৃণমূলের পথে পা বাড়াচ্ছেন একদা জোড়াফুলেরই ডাকসাইটে নেতা অর্জুন সিং? দিন কয়েক ধরেই রাজ্য বিজেপিতে এই নিয়ে আলোচনা তুঙ্গে।
আরও পড়ুন- দিল্লিতে মমতার বাড়িতে কেজরিওয়াল, শুভেচ্ছা বিনিময় ছাড়াও একাধিক বিষয়ে বৈঠক
অন্যদিকে, অর্জুনের ক্ষোভের আঁচ পৌঁছে যায় দিল্লিতেও। সূত্রের খবর, এরপরই অর্জুন সিংকে দিল্লিতে ডেকে পাঠান বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব। তাঁর সঙ্গে কথা হতে পারে দলের সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডা থেকে শুরু করে বিজেপির অন্য শীর্ষ নেতাদের। এমনকী বস্ত্রমন্ত্রী পীযূষ গোয়েলও নাকি অর্জুনকে ফোন করেছিলেন বলে জানা গিয়েছে সূত্র মারফত। সব কিছু ঠিক ঠাক থাকলে বস্ত্রমন্ত্রীর সঙ্গে আজ রাতেই দেখা হতে পারে বারাকপুরের বিজেপি সাংসদের।
এদিকে, অর্জুনের কেন্দ্র-বিরোধিতা ও তড়িঘড়ি তাঁকে দিল্লি-তলবে বিজেপির সমালোচনা করেছেন তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ। তিনি এদিনবলেন, 'বিজেপি বা কেন্দ্রীয় সরকার যে বাংলাকে গুরুত্ব দেয় না সেটা প্রমাণ হল। মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি লেখার পরেই কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ডেকে পাঠালেন। অর্থাৎ মমতায় আস্থা দেখাতেই টনক নড়ল কেন্দ্রের। আগে থেকেই পাট শিল্পকে পুনরুজ্জীবিত করতে তৎপর রাজ্য সরকার। যা উচিত তা করা হচ্ছে।''