Advertisment

শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের দল বাংলা বিরোধী নয়, বললেন অমিত শাহ

এনআরসি ইস্যুতে তৃণমূল কংগ্রেসের লাগাতার আন্দোলনের প্রেক্ষিতে বিজেপি বাংলা বিরোধী কী না তা রীতিমত আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছে।

author-image
Joyprakash Das
New Update
AMIT cover photo (1)

কলকাতার মেয়ো রোডে বক্তব্য় রাখছেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ। ছবি- শশী ঘোষ

আসামের জাতীয় নাগরিক পঞ্জি বা এনআরসি (NRC) নিয়ে কেন্দ্রে বিজেপি সরকার যে এক পাও পিছোবে না, তা কলকাতায় আজ স্পষ্ট ভাষায় বলে দিলেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ। পাশাপাশি, কলকাতার মেয়ো রোডে যুব মোর্চার সভায় তিনি এও জানিয়ে দিলেন, "শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের প্রতিষ্ঠিত দল কখনও বাংলা বিরোধী হতে পারে না।"

Advertisment

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে বিজেপি সরকার গড়লে বাংলার উন্নয়ন হবে, তাই একবার বিজেপিকে বাংলায় সুযোগ দেওয়ার আবেদন জানান শাহ। তবে এদিন অধুনা বিজেপি নেতা এবং প্রাক্তন তৃণমূল সদস্য মুকুল রায় হুঙ্কার ছেড়েছেন, ২০২১-এর বিধানসভা ভোটের আগেই ভেঙে যাবে রাজ্য সরকার। যদিও তৃণমূল কংগ্রেস নেতৃত্ব অমিত শাহর সভাকে ফ্লপ শো বলে কটাক্ষ করেছেন।

Amit shah Pic express Photo Shashi GhoshAMIT 2 মেয়ো রোডে বিজেপি কর্মী-সমর্থকদের ভিড়। ছবি: শশী ঘোষ

শনিবার মেয়ো রোডে যুব মোর্চার স্লোগান ছিল, "এবার পশ্চিমবঙ্গ, চল বদলাই।" ব্যাপারটা কিন্তু দাঁড়াল, যে বাইরের কেউ এসে বদলাতে চাইছে পশ্চিম বঙ্গকে। কার্যত এখনও এই রাজ্যের দল হয়ে উঠতে পারল না বিজেপি। অভিজ্ঞ মহল মনে করছেন, গেরুয়া শিবিরের স্লোগানেও বাংলার নিজস্বতা থাকে না। তার ওপর এনআরসি ইস্যুতে তৃণমূল কংগ্রেসের লাগাতার আন্দোলনের প্রেক্ষিতে বিজেপি বাংলা বিরোধী কী না তা রীতিমত আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছে।

এই তকমা মুছতে এদিন মুখ খুললেন শাহ। বিজেপি সভাপতি বলেন, "তৃণমূল বলছে বিজেপি বাংলা বিরোধী। বিজেপি কী করে বাংলা বিরোধী হবেদলের প্রতিষ্ঠাতা শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়।বিজেপি বাংলা বিরোধী নয়। মমতা বিরোধী।"

Amit shah Pic express Photo Shashi GhoshAMIT 3 অমিত শাহর ছবি হাতে দলীয় সমর্থকরা। ছবি: শশী ঘোষ

অনুপ্রবেশকারী না শরণার্থী? এই নিয়ে আলোচনায় তোলপাড় সংসদ তথা দেশ। কিন্তু অনুপ্রবেশকারী ইস্যুতে বিজেপি কোনও মূল্যেই পিছিয়ে যাবে না, এই মর্মে বিজেপি সভাপতির ঘোষণা, "অনুপ্রবেশকারীদের চিহ্নিত করে দেশ থেকে বের করে দিতে হবে। জোর করে তারা এই দেশে ঢুকে বসে আছে। ভোট ব্যাঙ্ক হিসেবে তাদের ব্যবহার করা হচ্ছে। অনুপ্রবেশ ইস্যুতে কাগজ ছুড়ে লোকসভার অধিবেশন বন্ধ করে দিয়েছিলেন মমতা। তখন তাঁর দাবি ছিল, সিপিএম অনুপ্রবেশকারীদের ভোট ব্যাঙ্ক হিসেবে ব্যবহার করছে।"

মমতাকে শাহের প্রশ্ন, দেশের সুরক্ষা আগে, না আপনার ভোট ব্যাঙ্ক আগে? তাঁর দাবি, "এই রাজ্যে অনুপ্রবেশ চলছে। পশ্চিমবঙ্গ সুরক্ষিত নেই। এদের আটকানোর একমাত্র রাস্তা এনআরসি। বিজেপির কাছে প্রথমে দেশ, তারপর ভোট। যত বিরোধিতা করুক, এনআরসি চলবে।" তিনি এও জানান, একজন শরণার্থীকেও ফেরত পাঠানো হবে না। তাঁদের জন্য নাগরিক পঞ্জি বিল আনা হবে। তখন দেখা যাবে, ওই বিলের সমর্থনে তৃণমূল কংগ্রেস ভোট দেয় কী না।" এদিন অমিতের বক্তব্যে ফের উঠে আসে নারদা, সরাদা, রোজ ভ্যালির কথা। সিন্ডিকেটের কথাও তোলেন তিনি।

Amit shah Pic express Photo Shashi GhoshAMIT 6 মেয়ো রোড যুব মোর্চার জনসভায় বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব। ছবি: শশী ঘোষ

বিজেপি সভাপতি এদিন তোপ দেগেছেন বাংলার উন্নয়ন নিয়েও। বিজেপি এখানে ক্ষমতা পেলে প্রকৃত উন্নয়ন হবে বলে দাবি করেছেন শাহ। তিনি বলেন, "রবীন্দ্র, রামকৃষ্ণ, শ্রীচৈতন্যের জন্মস্থানে এখন বোমা, পিস্তলের কারখানা হচ্ছে। তৃণমূলের শাসনে দিনের পর দিন তা বেড়ে চলেছে। বাংলায় ভারতীয় জনতা পার্টির সরকার গড়তে হবে। একটা সুযোগ নরেন্দ্র মোদীকে দিন। বাংলার উন্নয়ন করবেন নরেন্দ্র মোদী। কংগ্রেস, সিপিএম, তৃণমূল কংগ্রেসকে দেখেছেন, বাংলার উন্নয়ন করতে পারে বিজেপি।

"যত মুখ বন্ধ করার চেষ্টা করবে, তত আওয়াজ জোরদার হবে। বাংলার সব জেলায় গণতন্ত্রের আওয়াজ পৌঁছবে। এই ভিড় বলছে বাংলায় পরিবর্তন হবে।" এদিন তিনি বাড়ি বাড়ি গিয়ে জনসংযোগ বাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছেন এ রাজ্যের দলীয় নেতা-কর্মীদের।

Amit shah Pic express Photo Shashi GhoshAMIT 4 উচ্ছসিত বিজেপি কর্মী। ছবি: শশী ঘোষ

শাহের তুলনায় অনেকটাই সুর চড়ালেন মুকুল রায়। বললেন, "২০১৯-এ লোকসভা নির্বাচনে ২২ টারও বেশি আসন হারাবে তৃণমূল কংগ্রেস। ২০২১-এর আগে তোমার সরকার থাকবে না। ভেঙে যাবে তোমার সরকার। মোদী সরকার আধার, জিএসটি, যে সংস্কারেই হাত দিচ্ছে, তার বিরোধিতা করছে মমতা। অথচ জিএসটিতে সব থেকে বেশি লাভবান হয়েছে এই রাজ্য।" সঙ্গে সঙ্গে তিনি এই দাবিও জুড়ে দেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরিবারের ঘোষিত সম্পত্তির পরিমান ১২০০ কেটি টাকা।

বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন, সিমি, জামাত, আল-কায়দা উগ্রপন্থীরা এই রাজ্যে আসছে। এখানে রোহিঙ্গাদের স্থান দেওয়া হচ্ছে।" যুব মোর্চার সর্বভারতীয় সভানেত্রী পুনম মহাজনের দাবি, "এখানে রঙের পরিবর্তন হয়েছে। তৃণমূলিদের পরিবর্তন হয়েছে। আর মহিলা মুখ্যমন্ত্রী হওয়া সত্ত্বেও এই রাজ্যে মহিলাদের ওপর সবচেয়ে বেশি অত্যাচার হচ্ছে।"

তবে এদিন যে ভিড় আশা করেছিলেন বিজেপি নেতৃত্ব, তেমন ভিড় চোখে পড়েনি। মঞ্চের সামনে অনেকটা জায়গা চারিদিকে ঘিরে দেওয়ায় অস্বস্তিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। তীব্র গরমে বেশ কয়েকজন অসুস্থ হয়ে পড়েন। সভার কারণে মধ্য কলকাতায় বিভিন্ন রাস্তায় যানজট দেখা দেয়।

অন্যদিকে এদিন রাজ্যব্যাপী এনআরসির প্রতিবাদে ধিক্কার দিবস পালন করেছে তৃণমূল কংগ্রেস। মিছিল হয়েছে দমদম বিমানবন্দর এলাকায়ও। রবিবার কলকাতায় কালা দিবস পাল করবে তৃণমূল।

tmc bjp amit shah dilip ghosh mukul roy
Advertisment