জাতপাতের রাজনীতির ছোঁয়া বাদ যায়নি এই বাংলাতেও। ভোট এখন আর হিন্দু, মুসলিমের জাতপাতেই সীমাবদ্ধ নয়। তপসিলি জাতি, উপজাতি, পিছিয়েপড়ারাও এখন বড় ভোট ব্যাংকের লক্ষ্য। তাছাড়া মতুয়া, রাজবংশী, কুর্মি, গোর্খা কেউ বাদ নেই। তবে ২০২১ বিধানসভা নির্বাচনে সব থেকে বড় ইস্যু বাঙালিপ্রেমী না বাঙালি বিরোধী। এবার বিজেপি সোনার বাংলা গড়ার ডাক দিয়েছে।
এরাজ্যে বিজেপিকে বাঙালি সংস্কৃতি বিরোধী দল হিসাবে প্রতিপন্ন করতে মরিয়া বিরোধীর দলগুলো। অন্যদিকে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব নিজেদের বাঙালিপ্রেমী হিসেবে তুলে ধরতে চাইছে। বাংলা ভাষা না জানলেও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, এরাজ্যের কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষকরা বাংলা ভাষায় টুইট করছেন। ভাঙা বাংলায় বক্তব্যও রাখছেন। কিন্তু মজার বিষয় হল যখন কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব বাঙালি সেন্টিমেন্টকে গুরুত্ব দিতে চাইছে তখন উল্টো সুর লক্ষ্য করা যাচ্ছে এরাজ্যের নেতাদের একাংশের বক্তব্যে। তাঁরা কখনও হিন্দির টানে বাংলা বক্তব্য রাখছেন, আবার কখনও সরাসরি হিন্দিতেই ভাষণ দিচ্ছেন। মঞ্চের লেখাতেও থাকছে হিন্দির অনুকরণে বাংলা।
সম্প্রতি, দেখা গিয়েছে নরেন্দ্র মোদী থেকে অমিত শাহ, কৈলাশ বিজযবর্গীয় থেকে অরবিন্দ মেনন বা অমিত মালব্য প্রত্যেকেই সোশাল মিডিয়ায় বাংলা ভাষাতেই তৃণমূল কংগ্রেসকে আক্রমণ করছেন। এমনকী কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব বাঙালী মণিষীদের নাম স্মরণ করে বক্তব্য শুরু করছেন। সম্প্রতি বাংলা সফরে অমিত শাহ মেদিনীপুরে দলের জনসভায় অংশগ্রহণের আগে গিয়েছেন ক্ষুদিরাম বসুর বাড়িতে, তাঁর প্রতিকৃতিতে মাল্যদান করেছেন।রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর স্মৃতি বিজরিত শান্তিনিকেতনে গিয়েছেন। বাউল শিল্পীর গান শুনেছেন। এভাবে বাঙালী সংস্কৃতির সঙ্গে মেলবন্ধন করতে উদ্যোগী হয়েছেন অমিত শাহ।
আরও পড়ুন- ‘তৃণমূলকে ঝেঁটিয়ে পরিষ্কার করবো’, নন্দীগ্রাম থেকে হুঙ্কার শুভেন্দুর
এরাজ্যে বিজেপিকে বাঙালি বিরোধী দল বলে অভিযোগ তুলছে বিরোধীরা। এখানে অনেকের বক্তব্যে হিন্দির টান তো থাকছেই অনেক সময় আক্রমণ শানাচ্ছেন হিন্দিতেই। রাজনৈতিক মহলের একাংশের মতে, রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের কথার স্বরে অনেক সময়ই হিন্দির টান থাকে। আজ-কাল বিভিন্ন জায়গায় তাঁকে ওড়িয়া ভাষাতেও বক্তব্য রাখতে শোনা গিয়েছে। সদ্য বিজেপিতে যোগ দেওয়া শুভেন্দু অধিকারী "বুয়া-ভাতিজা" বলে আক্রমণ করেছেন তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্বকে। 'সরকারকো উখারকে ফেক দেঙ্গে' অমিত শাহর এই কথা হামেশাই শোনা যায় এখানকার নেতাদের গলায়। এছাড়া হিন্দি শ্লোগান তো আছেই।
এরাজ্যে দীর্ঘ দিন বসবাস করলেও রাজ্য বিজেপির অনেকে বাংলায় ভাষণ দিতে স্বচ্ছন্দ নন। এমনকী 'হঠাও' না লিখে মেদিনীপুরে অমিত শাহর মঞ্চে 'হাটাও' লেখা নিয়েও সমালোচনার ঝড় বয়ে গিয়েছে। এসব বাংলা ভাষার ওপর হিন্দির আগ্রাসন বলে অনেকে মনে করেন। কলকাতায় বিজেপির বিভিন্ন স্থানীয় কর্মসূচিতে বাংলায় বক্তব্য রাখার লোক কমই থাকে। একদিকে যখন কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব বাংলা ভাষা বা বাঙালী সংস্কৃতির সঙ্গে মিলেমিশে একাকার হতে মরিয়া তখন কিছুটা হলেও অন্য সুর দেখা যাচ্ছে এখানকার নেতৃত্বের একাংশের মধ্যে।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন