জয়প্রকাশ দাস
উনিশে ষোল। এটাই টার্গেট দিলীপ ঘোষদের। আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে এর বেশি লক্ষ্যমাত্রা স্থির করছে না এ রাজ্যের গেরুয়া শিবির। মূলত জঙ্গলমহল, উত্তরবঙ্গ ও সীমান্তবর্তী অঞ্চলের লোকসভা আসনগুলোকেই টার্গেট করেছে গেরুয়া শিবির। তবে দক্ষিণবঙ্গের কয়েকটি লোকসভা কেন্দ্রেও বিনাযুদ্ধে মেদিনী ছাড়বেন না তাঁরা।
মূলত ১৬টি আসনকে টার্গেট করে ১৯-এর লোকসভা নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে বিজেপি। রাজ্য় গ্রাম পঞ্চায়েত নির্বাচনের ফলাফল বিজেপির সেই লক্ষ্য়কে আরও স্পষ্ট করেছে। ইতিমধ্য়ে পঞ্চায়েত ভোটের ফল ও সামগ্রিক পরিস্থিতি নিয়ে বিজেপি নেতৃত্ব প্রাথমিক আলোচনা সেরে নিয়েছে। কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে সে ব্যাপারে অবগতও করা হয়েছে।
পঞ্চায়েত নির্বাচনে বিজেপি রাজ্য়ের বেশ কয়েকটি পকেটে ভাল ফল করেছে। তৃণমূল কংগ্রেসের থেকে অনেকটা ব্য়বধান থাকলেও, বাম-কংগ্রেসকে পিছনে ফেলে প্রধান বিরোধী হিসবে স্বীকৃতি পেয়েছে বিজেপি।
এ হিসেব নিশ্চিতভাবেই নিচুতলায় অনেকটাই উৎসাহ জুগিয়েছে। এবার বিধানসভায় এ রাজ্য় থেকে সর্বাধিক কত আসন পাওয়া যেতে পারে তা নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ করছে বিজেপি। যে ১৬টি আসনে নিশ্চিত জয় পাওয়ার লক্ষ্য় নিয়ে বিজেপি এগোচ্ছে তার মধ্য়ে রয়েছে জঙ্গলমহল, জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ার-সহ উত্তরবঙ্গ, দক্ষিণবঙ্গের সীমান্তবর্তী কিছু আসন। আসানসোল কেন্দ্রটি ইতিমধ্যেই বিজেপির দখলে রয়েছে।
তবে এ রাজ্য়ে বিধানসভা ভোট ২০২১ সালে। দু বছর আগে লোকসভা ভোটে ফল খারাপ হলে তার প্রভাব পড়বে এ রাজ্যের নির্বাচনে। রাজ্য় দখলের স্বপ্ন দেখাও চুরমার হয়ে যাবে।
যে আসনগুলির ওপর বিজেপির নজর রয়েছে সেগুলি হল:
১) জলপাইগুড়ি
২) কোচবিহার
৩) আলিপুরদুয়ার
৪) বালুরঘাট
৫) রায়গঞ্জ
৬) পুরুলিয়া
৭) বাঁকুড়া
৮) ঝাড়গ্রাম
৯) মেদিনীপুর
১০) কৃষ্ণনগর
১১) রানাঘাট
১২ ও ১৩) কলকাতার দুটি
১৪) হাওড়ার একটি
১৫) মালদা উত্তর
১৬) বনগাঁ
তবে মুর্শিদাবাদ, দুই ২৪ পরগনা, পূর্ব মেদিনীপুর, হুগলি-সহ দক্ষিণবঙ্গের বেশ কয়েকটি জেলায় যে তাদের খাতা খোলার বিন্দুমাত্র সুযোগ নেই, তা বেশ ভাল করেই জানে গেরুয়া শিবির।
বিজেপির রাজ্য় নেতৃত্বের তরফে দাবি করা হয়েছে, ২২টির বেশি আসন নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করছেন তাঁরা। ১৬ আসনে জয় নিয়ে তাঁরা নিশ্চিত। দলের রাজ্য় সাধারণ সম্পাদক সায়ন্তন বসুর হিসেব, "২০১৩ সালের গ্রাম পঞ্চায়েত নির্বাচনে তিনটে স্তর মিলিয়ে ৭০০ আসন পেয়েছিলাম, এবার পেয়েছি ৭০০০। তার মধ্য়ে মনোনয়ন থেকে গণনা পর্যন্ত চলেছে লাগাতার সন্ত্রাস, এমনকি গণনার দিনও চলেছে দেদার ছাপ্পা। ৩৪ শতাংশ বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয়েছে তৃণমূল। সমস্ত আসনে ভোট হলে আমরা তিন পর্যায়ে ২০০০০ আসনে জয় পেতাম।" তাঁর দাবি, "২০১৯ লোকসভা ভোটে ১৬ আসনে নিশ্চিত জয় কেউ আটকাতে পারবে না। এবার ভোটে একটা মাছিও গলতে দেওয়া হবে না।"
আরও পড়ুন, কর্নাটক সরকার নিয়ে হিন্দু মহাসভার আর্জি খারিজ করল সুপ্রিম কোর্ট
এবার জঙ্গলমহলের পুরুলিয়া, ঝড়গ্রাম, লালগড়সহ বিভিন্ন জায়গায় পঞ্চায়েত ভোটে নজরকাড়া ফল করেছে বিজেপি। ওই সব অঞ্চলের আদিবাসীদের একটা বড় অংশ গেরুয়া বাহিনীতে নাম লিখিয়েছেন। তৃণমূল কংগ্রেসও জঙ্গলমহলে বিজেপির জয়কে উড়িয়ে দেয়নি। বরং বিষয়টি নিয়ে গুরুত্বসহকারে বিশ্লেষণই করছে শাসকদল। শুধু জঙ্গলমহল নয়, পুনর্নির্বাচনে জলপাইগুড়িতে বিজেপি-র জয় যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
বিজেপি সূত্রের খবর, রাজস্থান, মধ্য়প্রদেশ, উত্তরপ্রদেশ-সহ বেশ কিছু রাজ্য়ে তাদের লোকসভার আসন কমবে বলে আশঙ্কা করছে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। সেক্ষেত্রে ২০১৯-এ একক সংখ্য়াগরিষ্ঠতা না-ও মিলতে পারে। ফলে অন্য় রাজ্য়ে নজর দিতে চাইছেন মোদি-অমিত শাহরা। একক সংখ্যাগরিষ্ঠতার সংখ্যা জোগাড়ে স্বভাবতই তাঁদের একটা লক্ষ্য় এই রাজ্য় থেকে যত বেশি সম্ভব আসন দখল করা।
আরও পড়ুন, নজরে লোকসভা ভোট, তৃণমূল ও মমতার মন্ত্রিসভায় রদবদল!
২০১৪ সালে লোকসভা নির্বাচনে ৪২টির মধ্য়ে দুটি আসনে জয় পেয়েছিল বিজেপি। একটি আসানসোল, অন্য়টি দার্জিলিং। দার্জিলিংয়ে সমর্থন ছিল গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার। ১৬ আসনের লক্ষ্যে রাজ্য সংগঠনকে যে কোনও রকম সহযোগিতার ব্যাপারে আশ্বাস দিয়েছেন মোদি-শাহ। তবে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে দীর্ণ রাজ্য বিজেপি শেষ পর্যন্ত কতদূর সফল হবে তা নিয়ে সংশয় রয়েছে দলের মধ্যেই।