করোনা আবহে লকডাউন পরিস্থিতি সরেজমিনে দেখতে রাজ্যে কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল এল সোমবার। কেন্দ্রের এই পদক্ষেপের প্রতিক্রিয়ায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রথমে টুইটে প্রতিবাদ জানান এবং পরে চিঠি পাঠান প্রধানমন্ত্রীকে। এ ঘটনায় মুখ্যমন্ত্রীর প্রতি তোপ দাগে বঙ্গ বিজেপি। সব মিলিয়ে করোনা আতঙ্কে মানুষের জীবন যখন সংকটে ঠিক তখনই রাজনৈতিক যুদ্ধে নেমে পড়েছে এ রাজ্যের তৃণমূল সরকার ও কেন্দ্রের মোদী সরকার। এদিকে, কংগ্রেস ও সিপিএম মনে করছে কেন্দ্র ও রাজ্যের এই তরজা অত্যন্ত অন্যায়। দুই সরকারকেই কাঠগোড়ায় তুলেছে তাঁরা। কংগ্রেসের আবেদন, সংঘবদ্ধভাবে সাধারণ মানুষকে এর প্রতিবাদ করতে হবে।
করোনায় আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা নিয়ে রাজ্য সরকার তথ্য গোপন করছে, এই অভিযোগ করছে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো। কেন্দ্র মনে করছে এরাজ্যে ঠিকভাবে লকডাউন মানা হচ্ছে না। এই নিয়ে এর আগে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক চিঠিও দিয়েছে রাজ্যকে। তারওপর রাজ্যের রেশনিং ব্যবস্থা নিয়ে সরব হয়েছে বাম, কংগ্রেস ও পদ্মশিবির। রাজ্যের পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল আসাকে কেন্দ্র করে কেন্দ্র-রাজ্য দ্বৈরথ চরমে ওঠে।
আরও পড়ুন- প্রধানমন্ত্রীকে অভিযোগের চিঠি দিলেন ‘ক্ষুব্ধ’ মমতা
প্রদেশ কংগ্রেস মনে করে, ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট অ্যাক্টের ৫, ১, ২ সেকশন অনুযায়ী, কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্যে প্রতিনিধি দল পাঠাতেই পারে। তবে ফেডারেল স্ট্রাকচারকে মান্যতা দেওয়ার জন্য নিয়ে আসার আগে জানানো উচিত। এখানে পশ্চিমবঙ্গ সরকার মনে করছে, করোনা ভাইরাসের মাধ্যমে রাজমনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থ করতে হবে। পুরো নিয়ন্ত্রণ নিজের হাতে রাখতে হবে। প্রদীপ ভট্টাচার্য বলেন, “আমি বার বার টেস্টিংয়ের জন্য বলেছি। কংগ্রেসের রাজ্যসভার এই সাংসদ মনে করেন, ইগোর লড়াই শুরু করেছে বিজেপি ও তৃণমূল। করোনা নিয়ে তথ্য গোপন করায় এবং রেশনিং ব্যবস্থায় তৃণমূলী ভাইরাস ঢুকে গিয়েছে। এই পরিস্থিতির জন্য রাজ্যের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য আছে। কেন্দ্রীয় সরকার পাল্টা রাজনৈতিক দাবার চাল হিসাবে এই দল পাঠিয়েছে। করোনা ভাইরাস নিয়ে কেন্দ্র ও রাজ্যের সংঘাত বাংলার জনগণকে ক্ষতিগ্রস্ত করবেই। সুতরাং কেন্দ্রীয় ও রাজ্যের ইগোস্টিক লড়াইয়ের বিরুদ্ধে বাংলার জনগণের সংঘবদ্ধ ভাবে রুখে দাড়ানো প্রয়োজন”।
আরও পড়ুন- করোনায় বাংলায় কেন্দ্রীয় দল, বেজায় চটলেন মমতা
সিপিএম অবশ্য লকডাউন ভাঙার জন্য কেন্দ্র ও রাজ্য দুই সরকারকেই দায়ী করছে। সিপিএমের বিধানসভার পরিষদীয় দলনেতা সুজন চক্রবর্তী বলেন, কঠিন অসুখের সময় মানুষ যখন ভয়ঙ্কর সংকটে তখন মানুষের পেটের ক্ষুধাকে ব্যবহার করে যে নোংরা রাজনীতি চলছে তা বন্ধ হওয়া উচিত। খাদ্যের জ্বালায় গ্রামে-শহরে গরিব মানুষ যখন বিপন্ন, তখন দিল্লির সরকার ও রাজ্য সরকার তর্জা করতে শুরু করেছে। এটা অন্যায় হচ্ছে। বিজেপির সঙ্গে তৃণমূলের লোকদেখানি ঝগড়া আছে তা আমরা জানি। এই লোকদেখানি ঝগড়া চলছে আর রাজ্যে রেশনের মাল লোপাট হচ্ছে।
তবে বঙ্গ বিজেপি কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল ইস্যুতে রাজ্যের ব্যর্থতাকে দায়ী করেছে। দলের রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন, আমার তো মনে হয় কাল রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ দেখাতে পারে। যেমন রাজ্যপালের বিরুদ্ধে করতে পারে, তেমনই বলবে কেন্দ্রীয় টিমকে মানব না। পশ্চিমবঙ্গের বাইরে সব জায়গায় কড়াকড়ি করছে প্রশাসন। এখানে শুধু ভোটের চিন্তা। বাংলার বাইরে আড়াই লক্ষ লোক আটকে আছে। আমি কমপক্ষে এক লক্ষ লোকের বিস্তারিত তথ্য পাঠিয়েছি। তাঁর বক্তব্য, ডিজাস্টার অ্যাক্ট নিয়ে রাজ্য সরকার আমাদেপর কর্মী শুধু নয় সাংসদের বিরুদ্ধে এফআইআর করেছে। আর কেন্দ্রীয় সরকার ব্যবস্থা নিলে কষ্ট হচ্ছে। হিসাব , কাজের ক্ষতিয়ান চাইলের বিরোধিতা করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। করোনা নিয়ে তথ্য বিকৃতি চলছে। রেশন নিয়ে কেলেঙ্কারি হচ্ছে।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন