হালিশহর, কাঁচরাপাড়ার পর এবার বনগাঁ পুরসভা। 'দল বদলের কারিগর' মুকুলকে টেক্কা দিয়ে ফের হাতছাড়া পুরসভায় দখল কায়েম করল মমতার তৃণমূল। ৪ তৃণমূল কাউন্সিলরের 'ঘর ওয়াপসি'র মাধ্যমেই বনগাঁ পুরসভা ফের তৃণমূলের দখলে এল। বৃহস্পতিবার সাংবাদিক বৈঠকে এমন দাবিই করলেন ফিরহাদ হাকিম ও জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। বনগাঁ পুরসভায় মোট আসন ২২। ৪ কাউন্সিলর দলে ফেরায় তৃণমূলের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ১৪। ফলে বনগাঁ পুরসভায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল স্পষ্টভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠতা ফিরে পেল বলে দাবি করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: ‘পার্থবাবু নিষেধ করেছেন’, আজ ইস্তফা দিলেন না বৈশাখী
প্রসঙ্গত, লোকসভা ভোটের পর তৃণমূলে কার্যত ভাঙন ধরিয়ে দিয়েছিলেন একদা মমতা ঘনিষ্ঠ মুকুল রায়। একদা তৃণমূলের হয়ে দল বদল করানোয় সিদ্ধহস্ত মুকুল এখন তৃণমূল ছেড়ে বিজেপির হয়ে ব্যাট ধরেছেন। আর এরপরই দিল্লিতে বিজেপির সদর দফতরে বসে একের পর এক তৃণমূল নেতা ও জনপ্রতিনিধিদের হাতে পদ্ম পতাকা তুলে দিতে শুরু করেছেন তৃণমূলের একদা প্রধান সেনাপতি। এই ধারা অব্যাহত রেখেই হালিশহর, কাঁচরাপাড়া এবং বনগাঁর মতো পুরসভার একাধিক কাউন্সিলরদের দলে টেনে 'পুর বোর্ড দখলে' বলে দাবি করেছে পদ্ম শিবির। এরপরই নিজেদের দুর্গ বাঁচাতে উঠেপড়ে লাগে মমতা ব্রিগেড। সেই প্রচেষ্টায় এর আগেই 'ঘরের ছেলেদের ঘরে ফিরিয়ে' হালিশহর ও কাঁচরাপাড়া পুরসভা পুনরুদ্ধার করেছে তৃণমূল। এবার সেই একই ফর্মুলায় বনগাঁ পুরসভাকেও দখলে নিল রাজ্যের শাক দল।
আরও পড়ুন: বৈশাখীর ‘চাকরি খেলেন’ মমতা! শোভনের পাশে বসে কাঁদতে কাঁদতে ইস্তফা ঘোষণা
এদিন সাংবাদিক বৈঠকে পুরমন্ত্রী তথা তৃণমূলের তরফে কাউন্সিলরদের নেতা ফিরহাদ হাকিম (ববি) বলেন, ‘‘ভয়-ভীতি-অত্যাচারে আমাদের অনেক কাউন্সিলররা চাপে পড়ে তাঁদের কাছে চলে গিয়েছিলেন। আমরা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে হাসছিলাম। কতদিন অত্যাচার করে, ভুল বুঝিয়ে মানুষকে টেনে রাখবে! কতদিন আমাদের থেকে সরিয়ে নিয়ে যাবে! হৃদয়ে তো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রয়েছেন’’। বিজেপিকে কটাক্ষ করে এরপর ফিরহাদ বলেন, ‘‘আগে ছিল ১০ জন কাউন্সিলর। এখন বেড়ে হল ১৪ জন। কাউন্সিলররা তো আমাদের সঙ্গে। এখন কী করে বলবে সংখ্যাগরিষ্ঠতা নেই আমাদের। আদালতের কাছে আর্জি থাকবে, বিচার করুন। আমরা বিজেপির দ্বারা আক্রান্ত’’।
আরও পড়ুন: বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের দয়াতেই মমতা আজ রাজনীতিতে আছেন, বিস্ফোরক মুকুল
প্রসঙ্গত, বনগাঁ পুরসভায় আস্থা ভোট ঘিরে তুলকালাম কাণ্ড চাক্ষুস করেছিল রাজ্য। আস্থা ভোটের দিন ২ বিজেপি কাউন্সিলরকে পুরসভায় ঢুকতে বাধা দেওয়ার অভিযোগ ঘিরে অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে উত্তর ২৪ পরগনার বনগাঁ পুরসভা চত্বর। ১৪৪ ধারা জারি থাকাকালীন তৃণমূল-বিজেপি সংঘাতের পরিস্থিতি তৈরি হয়। দলীয় কাউন্সিলরদের ঢুকতে না দেওয়ার প্রতিবাদে পুলিশের সঙ্গে খণ্ডযুদ্ধ বাধে বিজেপি কর্মীদের। পুলিশ, র্যাফের সামনেই চলে বোমাবাজি। পরিস্থিতি সামলাতে লাঠিচার্জ করে পুলিশও। এতেই শেষ নয়, বনগাঁ পুরসভা ইস্যু গড়ায় কলকাতা হাইকোর্টে। বনগাঁ পুরসভা মামলায় কড়া বার্তা দেয় হাইকোর্টও। সরকারের ভুল শোধরানোর দায়িত্ব আদালতের বলে মন্তব্য করেন বিচারপতি সমাপ্তি চট্টোপাধ্যায়। এরপর ফের 'ঘরের ছেলেদের ঘরে ফিরিয়ে' কিস্তিমাত করল তৃণমূল, এমনটাই বলছে রাজনৈতিক মহল।