'আমরা কারা?...তৃণমূল...।' এবার 'আমরা কারা? আমরা সবাই নাগরিক...।' ফের চেনা মেজাজে তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার রেড রোড থেকে জোড়াসাঁকো পদযাত্রার পর মঙ্গলবার যাদবপুর ৮বি থেকে ভবানীপুরে যদুবাবুর বাজার পর্যন্ত হাঁটলেন মমতা। বুধবার হাঁটবেন হাওড়া ময়দান থেকে ধর্মতলার ডোরিনা ক্রসিং পর্যন্ত। নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন ও জাতীয় নাগরিকপঞ্জির বিরোধিতায় মমতা নতুনভাবে বিরোধী নেত্রীর অবতারে নজর কাড়তে শুরু করলেন তাঁর পরিচিত মাটিতেই। এই আন্দোলনে নেমেই কার্যত ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের সুর বেঁধে দিলেন তৃণমূল নেত্রী।
আরও পড়ুন- ‘আমার পোশাকটা কি খারাপ?’, প্রশ্ন মমতার
২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেস ২২টি আসনে জয় পায়। বিজেপি বিজয়ী হয় ১৮টি আসনে। এ রাজ্যে তৃণমূলের জমি যে অনেকটা নড়বড়ে হয়েছে তা নির্বাচনের এই ফলফলেই প্রমাণিত। পরবর্তীতে প্রশান্ত কিশোরের সংস্থার সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয় তৃণমূল কংগ্রেস। রাজ্য জুড়ে একগুচ্ছ জনসংযোগ কর্মসূচি গ্রহণ করে মমতার দল। আর এ সবের ফলও মেলে হাতেহাতে। সাম্প্রতি বিধানসভার উপনির্বাচনে তিনটি আসনেই বিপুল ব্যবধানে জয় পায় ঘাসফুল শিবির। এতে দলের হারিয়ে যাওয়া মনোবল অনেকাংশে উদ্ধারও হয়। এবার সিএএ ও এনআরসি-র বিরোধিতা করে মানুষের হারানো বিশ্বাস আরও ফিরে পেতে চাইছে তৃণমূল। পথে নামার ক্ষেত্রে বাংলায় যে এর থেকে বড় ইস্যু আর কিছু হতে পারে না তা ভাল করেই জানেন আন্দোলনের মাটি থেকে উঠে আসা মমতা।
আরও পড়ুন- Highlights: বিজেপি ভাবছে দেশ দখল করেছে, গায়ের জোরে সব হয় না: মমতা
২০১১ সালের আগে তৃণমূলের মিছিল-মিটিং-এ উপচে পড়ত মানুষের ঢল। এ দৃশ্য রাজ্যবাসী দেখেছে। দেখেছে, বিরোধী নেত্রী হিসাবে মমতার আত্মবিশ্বাস। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর কুর্সিতে বসার পর সেই জনমোহিনী ক্ষমতা বজায় রাখা সম্ভব হয়নি। তবে, কেন্দ্রের বিরোধিতার চেষ্টায় কোনও কসুর করেননি মমতা, তবু কোনও ইস্যুই তেমন দানা বাঁধেনি। ওয়াকিবহালমহলের মতে, লোকসভা নির্বাচনের ফল প্রকাশের পর আত্মবিশ্বাসে বড় রকমের ফাটল ধরেছিল তৃণমূলের। সম্প্রতি তৃণমূল সুপ্রিমোর বক্তৃতার ঝাঁঝও অনেকটাই নিম্নগামী ছিল। কিন্তু সিএএ ও এনআরসি ইস্যু হিসাবে তাঁকে অনেকটাই জল হাওয়া দিয়েছে। এই দুই ইস্যুর বিরোধিতায় রাজপথে নেমে তাঁকে যথেষ্ট আত্মবিশ্বাসী দেখিয়েছে।
আরও পড়ুন- মমতাই ডিটেনশন ক্যাম্পের জন্য জমি দিচ্ছেন, বিস্ফোরক দাবি বিমানের
রাজনীতির কারবারিদের মতে, বহুদিন পরে সোমবারের মিছিলে জনতার সমাগমও ছিল যথেষ্ট। মঙ্গলবারের মিছিলেও চোখে পড়ার মতো কর্মী-সমর্থক হাজির ছিলেন। এদিন মিছিলের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত 'শাসক' মমতা ছিলেন 'বিরোধী মেজাজে'। সেই পুরানো প্রত্যয়, পুরানো স্লোগানের ধরণ। সব মিলিয়ে এ যেন নতুন করে পুরানো মমতার পথা চলা।
আরও পড়ুন- ‘বিজেপি টাকা দিয়ে বাংলায় হিংসা ছড়াচ্ছে’, বিস্ফোরক অভিযোগ মমতার
রাজ্যে উন্নয়নের নিরিখে এবার লোকসভার নির্বাচনে লড়েছিল তৃণমূল কংগ্রেস। কিন্তু আসন সংখ্যার নিরিখে তা যে খুব একটা কাজে আসেনি তা লোকসভার ফলাফলেই স্পষ্ট। নির্বাচনের ফলপ্রকাশের পর দলীয় সংগঠনে মন দেবেন বলে সাংবাদিক বৈঠকে জানিয়ে ছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ওয়াকিবহাল মহলের একাংশ মনে করছে, কেন্দ্রীয় বিরোধিতায় তেমন কোনও ইস্যু রাজ্যে ঠিক 'জমছিল না'। আর এখানেই এনআরসি এবং ক্যাব আইনে পরিণত হওয়ার পর আন্দোলনের হাতিয়ার পেয়ে গেলেন মমতা। কোনও ভাবেই সিএএ ও এনআরসি মানা হবে না, এই ইস্যুতে পথে নেমে পড়লেন তৃণমূল নেত্রী। আর এতেই হতে পারে বাজিমাত। চরম বিজেপি বিরোধিতায় ২০২১ বিধানসভা নির্বাচনের ঘর গোছানোর কাজ শুরু করে দিলেন মমতা।