প্রবীণ কংগ্রেস নেতা পি চিদাম্বরম কেন্দ্রের মোদী সরকারকে তীব্র আক্রমণ করেছেন। বেশ কয়েকটি টুইটে, তিনি জর্জ সোরোস কেস নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারকে ঘেরাও করেছেন এবং চিদাম্বরম টুইট করেছেন যে জর্জ সোরোস আগে বা এখন যা বলেছেন তার বেশিরভাগ বক্তব্যের সঙ্গে তিনি একমত নন। কিন্তু তার বক্তব্যকে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকার পতনের প্রচেষ্টা হিসেবে বর্ণনা করা একেবারেই শিশুসুলভ চিন্তাভাবনা। সরকার ৯২ বছর বয়সী বিদেশী শিল্পপতিকে ভয় পাচ্ছেন এমনই অভিযোগ করেছেন প্রবীণ কংগ্রেস নেতা ।
চিদাম্বরম টুইট করেছেন
চিদাম্বরম টুইট করেছেন, "অতীতে জর্জ সোরোস যা বলেছিলেন তার বেশিরভাগ মন্তব্যের সঙ্গে আমি একমত নই এবং তিনি যা বলেছেন তার অনেক কিছুর সঙ্গে আমি এখনও একমত নই, তবে তার মন্তব্যগুলি ভারতে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকারকে পতনের প্রচেষ্টা।" একেবারেই এটা শিশুসুলভ বিবৃতি।"
'মোদী সরকার এতটা দুর্বল নয়'
তিনি অন্য একটি টুইটে বলেছেন, ভারতের জনগণই সিদ্ধান্ত নেবে কোন সরকারে থাকবে এবং কোন সরকার থাকবে না। তিনি বলেছেন, "আমি মনে করি না মোদী সরকার এতটা দুর্বল যে সেই সরকারকে ৯২ বছরের এক মার্কিন ধনকুবের ফেলতে পারবে”। একটি টুইটে, চিদাম্বরম বলেছেন, "জর্জ সোরোসের কথা ছাড়ুন, নুরিয়েল রুবিনির কথা শুনুন৷ রুবিনি সতর্ক করেছিলেন যে ভারত ক্রমবর্ধমানভাবে বড় প্রাইভেট সংস্থাগুলির আধিপত্য বিস্তার করছে, যা সম্ভাব্য প্রতিযোগিতাকে শেষ করে দিতে পারে”। চিদাম্বরম বলেন, "উদারীকরণের মাধ্যমে দেশে একটি উন্মুক্ত প্রতিযোগিতামূলক অর্থনীতি চালু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু মোদী সরকার কেবল মাত্র নির্দিষ্ট কিছু কর্পোরেট সংস্থার পক্ষপাতিত্ব করে চলেছেন”।
এদিকে মার্কিন ধনকুবের সোরোসকে তীব্র আক্রমণ করেছেন বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। তিনি বলেন সোরোস 'বুড়ো, ধনী, বিপজ্জনক'! কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বলেন, 'সোরোস বিশ্বাস করেন যে ভারত একটি গণতান্ত্রিক দেশ, কিন্তু প্রধানমন্ত্রী গণতান্ত্রিক নন। তিনি বলেন, তিনি আমাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছিলেন যে আমরা কোটি কোটি মুসলমানের নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করছি, যা দৃশ্যত হয়নি।
প্রধানমন্ত্রী মোদীকে নিয়ে মার্কিন ধনকুবেরের বেফাঁস মন্তব্যের পর গতকালই তাঁর বিরুদ্ধে সুর চড়িয়েছিলেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী স্মৃতি ইরানি। এবার 'সোরোসকে বেনজির আক্রমণ করে বসলেন বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। 'সোরোস। উল্লেখ্য, বিগত কয়েক বছরে বহুবারই মোদী সরকারের বিরুদ্ধে মুখ খুলেছেন এই ধনকুবের। এবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে গৌতম আদানির যোগসাজশের বিষয়ে তাঁর মন্তব্যের জন্য শিরোনামে এসেছেন জর্জ সোরোস।
আরও পড়ুন: < ‘বুড়ো, বিপজ্জনক’, মার্কিন ধনকুবের সোরোসকে ধুয়ে মন্তব্য মোদীর মন্ত্রীর >
ব্লুমবার্গের একটি প্রতিবেদন অনুসারে সোরোস বলেছেন, “মোদি এই বিষয়ে নীরব, কিন্তু তাঁকে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের এবং সংসদে প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে”। “এটি ভারতের যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারের উপর মোদির আধিপত্যকে উল্লেখযোগ্যভাবে দুর্বল করবে এবং অত্যন্ত প্রয়োজনীয় প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের জন্য দ্বার উন্মুক্ত করবে। আমি নির্বোধ হতে পারি, কিন্তু আমি ভারতে একটি গণতান্ত্রিক পুনরুজ্জীবনের প্রত্যাশা করি,” মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনের আগে ধনকুবের সোরোস একথা বলেছেন।ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) ইতিমধ্যেই সোরোসের মন্তব্যে পাল্টা আঘাত করেছে।
কেন্দ্রীয় মন্ত্রী স্মৃতি ইরানি সোরোসের মন্তব্যকে “ভারতের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে ধ্বংস করার ঘোষণা” বলে অভিহিত করেছেন এবং যোগ করেছেন, “ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধ বেঁধে দেওয়া হচ্ছে, প্রধানমন্ত্রী মোদি তাঁর এবং দেশের স্বার্থের ণাঝে দাঁড়িয়ে আছেন,” উদ্ধৃত করছে সংবাদ সংস্থা পিটিআই।উল্লেখ্য, জর্জ সোরোস এই প্রথম প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সমালোচনা করেছেন এমনটা নয়। ২০২০ সালে, “ভারতে জাতীয়তাবাদের ভীতিকর উত্থান” সম্পর্কে কথা বলতে গিয়ে, সোরোস বলেছিলেন: “সবচেয়ে বড় এবং সবচেয়ে ভয়ঙ্কর ধাক্কাটি ভারতে ঘটেছে যেখানে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত নরেন্দ্র মোদি একটি হিন্দু জাতীয়তাবাদী রাষ্ট্র তৈরি করছেন, কাশ্মীরে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা আরোপ করছেন, একটি আধা-স্বায়ত্তশাসিত মুসলিম অঞ্চল, এবং লক্ষ লক্ষ মুসলমানকে তাঁদের নাগরিকত্ব থেকে বঞ্চিত করার শাস্তি দিচ্ছেন।”
সম্প্রতি আদানি বিতর্কে মোদীর ভুমিকা নিয়ে মুখে খুলে শিরোনামে আসেন মার্কিন এই ধনকুবের। মোদী গোটা বিষয়টিতে কেন নীরব সেই প্রশ্নও তোলেন তিনি পাশাপাশি তিনি বলেন, তাঁকে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের সামনে ও সংসদে জবাব দিতে হবে।
ভারতের গণতান্ত্রিক কাঠামোকে নাড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা চলছে। শিল্পপতি জর্জ সোরোসকে গতকালই নিশানা করেন স্মৃতি ইরানি। তিনি বলেন, যখন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এবং ইংল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী ভারতীয় অর্থনীতির ভূয়সী প্রশংসা করছেন তখন একজন মার্কিন শিল্পপতি ভারতকে আক্রমণ করছেন।মোদীর বিরুদ্ধে কুৎসা রটাচ্ছেন। তিনি আরও বলেন, ‘শিল্পপতি জর্জ সোরোসের এই ধরনের বক্তব্যের উপযুক্ত জবাব দেওয়া প্রতিটি ভারতবাসীর কর্তব্য। একই সঙ্গে সোরাসের মন্তব্যকে অগণতান্ত্রিক বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
মিউনিখ সিকিউরিটি কন্ফারেন্সে ভারতের ‘গণতন্ত্রের নবজাগরণ’ প্রসঙ্গ তুলে এক মন্তব্য করেছেন কোটিপতি শিল্পপতি জর্জ সোরোস। সোরোস বৃহস্পতিবার বলেন, আদানির শিল্প সাম্রাজ্যে জালিয়াতি এবং স্টক ম্যানিপুলেশনের অভিযোগে প্রধানমন্ত্রী মোদীকে বিদেশী বিনিয়োগকারীদের এবং সংসদে বিরোধীদের প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে।
মার্কিন শর্টসেলার হিন্ডেনবার্গ আদানি গ্রুপের বিরুদ্ধে স্টক ম্যানিপুলেশন এবং অ্যাকাউন্ট জালিয়াতির অভিযোগে একটি রিপোর্ট সামনে আনে। এরপরই আদানি গ্রুপের শেয়ার দর হুহু করে কমতে থাকে। রিপোর্ট ঘিরে উত্তাল হয় সংসদের বাজেট অধিবেশন। ২০২৩ মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনে বক্তৃতা দেওয়ার সময় জর্জ সোরোস বলেন, আদানি ইস্যু নিয়ে প্রধানমন্ত্রী মোদী কেন নীরব? প্রধানমন্ত্রী মোদীকে বিদেশী বিনিয়োগকারীদের এবং সংসদে এই প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে।
জর্জ সোরোস একজন মার্কিন শিল্পপতি। তিনি প্রধানমন্ত্রী মোদীর বিরুদ্ধে পুঁজিবাদের প্রচারের অভিযোগ করেছেন। ভারতীয় শিল্পপতি গৌতম আদানির সঙ্গে তার সুসম্পর্ক রয়েছে বলেও দাবি করেছেন। জার্মানির মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। জর্জ সোরোস আদানি গোষ্ঠীর সঙ্গে মোদীর ঘনিষ্ঠতার কথাও তোলেন। এদিনই তাকে নিশানা করেছে ভারতীয় জনতা পার্টি।