/indian-express-bangla/media/post_attachments/wp-content/uploads/2019/12/no-net-759.jpg)
নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের অশান্ত পরিস্থিতির উপর নিয়ন্ত্রণ রাখতে এবং হাওড়া জেলায় এনআরসি হিংসাত্মক প্রতিবাদের জেরে রবিবার বিকেল থেকে সারা জেলায় ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিল প্রশাসন। রবিবার হাওড়া জেলার জেলাশাসক এই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন। রবিবার বিকেল পাঁচটা থেকে সোমবার বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত ২৪ ঘন্টা সমস্ত জেলার জেলা জুড়ে বন্ধ থাকবে ইন্টারনেট পরিষেবা। ভারতীয় দণ্ডবিধির ১৪৪ ধারা অনুযায়ী এদিন এই নির্দেশ জারি করেছেন হাওড়ার জেলাশাসক।
আরও পড়ুন: বাংলায় রাষ্ট্রপতি শাসন জারির হুঁশিয়ারি বিজেপির
এছাড়াও, বাকি পাঁচ জেলায় ইন্টারনেট বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয় রাজ্য সরকার। মালদহ, মুর্শিদাবাদ, উত্তর দিনাজপুর, নদিয়ায় বন্ধ করে দেওয়া হল ইন্টারনেট পরিষেবা। শুধু তাই নয়, বারাসাত মহকুমা, বসিরহাট মহকুমা, বারুইপুর ও ক্যানিং মহকুমাতেও বন্ধ করা হচ্ছে ইন্টারনেট। রাজ্য সরকারের তরফে বিবৃতি দিয়ে বিষয়টি জানানো হয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সরকার বারবার বলা সত্বেও কিছু বহিরাগত অন্যদের ফাঁদে পা দিয়ে অশান্তি করছে। নিরুপায় হয়ে সরকারকে কিছু এলাকায় ইন্টারনেট বন্ধ করতে হচ্ছে।
'বাংলায় নাগরিকত্ব আইন-এনআরসি চলবে না', এই দাবিকে সামনে রেখেই জেলায় জেলায় আজ নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন ও এনআরসি বিরোধী মিছিল করতে রবিবার পথে নামে তৃণমূল কংগ্রেস। শুক্রবারই আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছিলেন দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নেত্রীর নির্দেশে রাজ্যজুড়েই পথে নামে জেলা তৃণমূল। রাজ্যের সব জেলায়, প্রতিটি ব্লকে নাগরিকত্ব আইন ও এনআরসি বিরোধী মিছিল করে রাজ্যের শাসক দল। আইনের প্রতিবাদে রাজ্যের বিভিন্নপ্রান্তে চলছে বিক্ষোভ। গত বুধবার রাত থেকেই কখনও স্টেশনে আবার কখনও বাসে আগুন লাগিয়ে আন্দোলনে শামিল বিক্ষোভকারীরা। ক্রমশই বাড়ছে বিক্ষোভের তীব্রতা। উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে শনিবারও সাধারণ মানুষকে সতর্ক হওয়ার বার্তা দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সম্প্রীতি এবং শান্তি বজায় রেখে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন ও এনআরসির প্রতিবাদ করতে আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
Live Blog
নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে রবিবার জেলায় জেলায় চলছে তৃণমূলের বিক্ষোভ। সেই সংক্রান্ত খবরের Highlights জানতে চোখ রাখুন এখানে:
আজ সকাল ৯টায় চুঁচুড়ার খাদিনা মোড় থেকে ঘড়ির মোড় পর্যন্ত প্রায় ৪ কিমি রাস্তা জুরে মিছিল করে তৃণমূল। এই মিছিলের নেতৃত্ব দেন চুঁচুড়ার বিধায়ক অসিত মজুমদার। নাগরিকপঞ্জি এবং নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধেই এই মিছিল বলে জানান অসিত বাবু । হুগলী- চুঁচুড়া পুরসভার অধিকাংশ কাউন্সিলর এই মিছিলে যোগ দেন।
ছবি- উত্তম দত্ত
এনআরসি-ক্যাব ইস্যুতে প্রথম থেকেই তীব্র বিরোধিতা জানিয়ে আসছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এর আগে কলকাতার রাজপথে প্রতিবাদ মিছিলে হেঁটেছেন তৃণমূল নেত্রী। এনআরসি-ক্যাব ইস্যুকে হাতিয়ার করেই সদ্যসমাপ্ত বাংলার ৩ কেন্দ্রে উপনির্বাচনে জয়ের হাসিল করেছে ঘাস-ফুল শিবির, এমনটাই ব্যাখ্যা রাজনৈতিক মহলের একাংশের। সেই প্রেক্ষিতে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন ও এনআরসি বিরোধীতাকে গণ আন্দোলনে পরিণত করে কেন্দ্রের মোদী সরকারের বিরোধীতায় সুর চড়াতে মরিয়া মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়।
ছবি- অরিন্দম বসু
নাগরিকত্ব আইনের বিক্ষোভের আগুন ছড়িয়ে পড়লো পূর্ব বর্ধমানেও। ভাঙচুর হল বিজেপির কার্যালয়। এদিন ভাঙচুরের পাশাপাশি আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয় রায়নার পলেমপুরে বিজেপির কার্যালয়ে। বিজেপির অভিযোগ এনআরসি ও নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে বিকেলে মিছিল বের হয় তৃণমূল কংগ্রেসের।সেই মিছিল থেকেই বিজেপির দলীয় কার্যালয়ে হামলা ঘাসফুল শিবির। যদিও তৃণমূল কংগ্রেসের তরফে এই হামলার কথা অস্বীকার করেছে। জেলার সাধারণ সম্পাদক উত্তম সেনগুপ্ত বলেন, ওই এলাকায় তৃণমূল কংগ্রেসের কোন মিছিল এদিন ছিল না। গোটা দেশে বিজেপির জন সমর্থন এখন তলানিতে। তাই তারা সেই অভিমুখ ঘোরাতেই এই সব মিথ্যা অভিযোগ করছে। দলীয় কার্যালয়ে থাকা চেয়ার টেবিল সহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কাগজ পত্র পুড়িয়ে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ করে বিজেপি। এই ঘটনার জেরে বর্ধমান আরামবাগ রোড অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে। যাত্রী বোঝাই বাস-সহ বিভিন্ন যানবাহন আটকে পড়ে। রায়না ও খণ্ডঘোষ থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছয়। দলীয় কার্যালয়ে ভাঙচুরের ঘটনায় ক্ষুদ্ধ হয়ে ওঠে এলাকার বিজেপি কর্মী সমর্থকরা।/indian-express-bangla/media/post_attachments/wp-content/uploads/2019/12/83021east-burdwan.jpg)
ছবি- মনতোষ পোদ্দার
হাওড়া জেলায় এনআরসি হিংসাত্মক প্রতিবাদের জেরে রবিবার বিকেল থেকে সারা জেলায় ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিল প্রশাসন। রবিবার হাওড়া জেলার জেলাশাসক এই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন। রবিবার বিকেল পাঁচটা থেকে সোমবার বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত ২৪ ঘন্টা সমস্ত জেলার জেলা জুড়ে বন্ধ থাকবে ইন্টারনেট পরিষেবা। ভারতীয় দণ্ডবিধির ১৪৪ ধারা অনুযায়ী এদিন এই নির্দেশ জারি করেছেন হাওড়ার জেলাশাসক। ১৫ ডিসেম্বর বিকেল পাঁচটা থেকে শুরু করে ১৬ ডিসেম্বর বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধের নির্দেশ জারি করেছে হাওড়া প্রশাসন।
বিক্ষোভের জেরে রবিবার হাওড়া থেকে গুয়াহাটি-সরাইঘাট এক্সপ্রেস বাতিল করা হয়েছে বলে জানায় রেল। এছাড়া বাতিল করা হয়, শিয়ালদহ বামনহাট-উত্তরবঙ্গ এক্সপ্রেস এবং শিয়ালদহ আলিপুরদুয়ার জং-কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস। এছাড়া, বহু লোকাল ও প্য়াসেঞ্জা ট্রেন নির্দিষ্ট সময়ে দেরিতে চলছে বলে জানিয়েছে রেল।
নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের অশান্তির রেশ ক্রমশই ছড়িয়ে পড়ছে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলায়। বিস্তারের পাশাপাশি বাড়ছে তীব্রতাও। শনিবারও রাজ্যের বেশ কিছু রেল স্টেশন ও রাস্তায় চলে বিক্ষোভ, অবরোধ। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে বারংবার আন্দোলনকারীদের শান্ত এবং সংযত হওয়ার আহ্বানও জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অবশেষে পরিস্থিতির উপর নিয়ন্ত্রণ রাখতেই রাজ্যের বেশ কয়েকটি জেলায় ইন্টারনেট বন্ধের সিদ্ধান্ত নিল রাজ্য সরকার। মালদহ, মুর্শিদাবাদ, উত্তর দিনাজপুর, হাওড়ায় বন্ধ করে দেওয়া হল ইন্টারনেট পরিষেবা। শুধু তাই নয়, সেই বারাসাত মহকুমা, বসিরহাট মহকুমা, বারুইপুর ও ক্যানিং মহকুমাতেও বন্ধ করা হচ্ছে ইন্টারনেট। রাজ্যসরকারের তরফে বিবৃতি দিয়ে বিষয়টি জানানো হয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সরকার বারবার বলা সত্বেও কিছু বহিরাগত অন্যদের ফাঁদে পা দিয়ে অশান্তি করছে। নিরুপায় হয়ে সরকারকে কিছু এলাকায় ইন্টারনেট বন্ধ করতে হচ্ছে।
নাগরিকপঞ্জি এবং নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন প্রত্যাহারের দাবিতে পথে নেমে মিছিল করল বনগাঁ মহকুমা অসংগঠিত শ্রমিক ইউনিয়নের। বনগাঁ রামনগর রোড মোড় থেকে মিছিল শুরু হয়ে বনগাঁ বাটা মোড় হয়ে ত্রিকোণ পার্ক-এ এসে শেষ হয় এই মিছিল। প্রায় পাঁচশোর কাছাকাছি মানুষ এই মিছিলে পা মেলান। মূলত নাগরিকপঞ্জি এবং নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের বিরুদ্ধে মানুষকে সচেতন করতে এই মিছিল বলে দাবি সংগঠনদের। এদিনের মিছিলে মোদী-র বিরুদ্ধে স্লোগানও তোলা হয়।
নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, "গণতান্ত্রিক পথে আন্দোলন করুন, কিন্তু আইন নিজের হাতে তুলে নেবেন না। পথ অবরোধ, রেল অবরোধ করবেন না। সাধারণ মানুষের ভোগান্তি বরদাস্ত করা হবে না। যাঁরা গন্ডগোল করছেন, রাস্তায় নেমে আইন হাতে তুলে নিচ্ছেন, তাঁদের কাউকে ছেড়ে দেওয়া হবে না। বাসে আগুন লাগিয়ে, ট্রেনে পাথর ছুড়ে, সরকারি সম্পত্তি নষ্ট করলে, আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।"
মুখ্যমন্ত্রীর কড়া বার্তার পরেও নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন নিয়ে রবিবার উত্তপ্ত উত্তর ২৪ পরগনা। চতুর্থ দিনেও উত্তপ্ত উত্তর ২৪ পরগনার বিভিন্ন এলাকা। আমডাঙা, অশোকনগর, মধ্যমগ্রামে রাস্তায় গাছের গুড়ি ফেলে, টায়ার জ্বালিয়ে চলছে আন্দোলন। কোথাও আবার বিক্ষোভকারীদের জন্য রাস্তার উপরেই চলল রান্নাবান্না। ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের উপরে টায়ার জ্বালিয়ে গাছের গুড়ি ফেলে চলছে অবরোধ। আমডাঙার সোনাডাঙ্গা, খলিয়া, আওয়ালসিদ্ধি মোড়ে গাছের গুড়ি ফেলে টায়ার জ্বালিয়ে সকাল থেকে চলছে অবরোধ। অশোকনগরের নৈহাটি রোডের হিজলিয়া মোরে রাস্তার উপর টায়ার জ্বালিয়ে চলছে অবরোধ। মধ্যমগ্রামের রোহান্ড চণ্ডীগর গ্রাম পঞ্চায়েতরের বাসিন্দারা রোহাণ্ডা থেকে একটি মিছিল বের করে। মিছিলটি গঙ্গানগর হয়ে মধ্যমগ্রাম চৌমাথায় এসে রাস্তার উপর টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ শুরু করে। বেশ কিছু সময় বিক্ষোভ চলার পর পুলিশের হস্তক্ষেপে বিক্ষোভ উঠে যায়। যদিও বসিরহাটে মহকুমায় আজ তেমন কোন বিক্ষোভের খবর পাওয়া যায়নি। সকাল থেকে ট্রেন চলাচল বিভ্রান্তি থাকলেও বেলা বাড়তেই তা স্বাভাবিক হয়ে যায়।