ফের তীব্র রাজ্যপাল ও রাজ্য সরকার সংঘাত। বিধানসভায় সাম্প্রতিক বাজেট অধিবেশনের ভাষণে রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়কে খানিকটা রাজ্য সরকারের সুরেই সুর মেলাতে দেখা গিয়েছিল। গত কয়েক বছরে রাজ্যপাল এবং রাজ্য সরকারের সংঘাতের আবহে যা ছিল সম্পূর্ণ বেমানান। রাজভবন এবং নবান্নের এই গলাগলি থেকে ফের উভয়কে মুখোমুখি সংঘাতের ময়দানে ফেরাল রামপুরহাট। বীরভূমের এই মহকুমার বকটুই গ্রামে কয়েকজনের পুড়ে মৃত্যুর ঘটনায় বিবৃতি দিয়েছেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়। তাতে ক্ষুব্ধ নবান্ন।
পালটা চিঠি দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সেকথা জানিয়েও দিলেন। চিঠিতে মুখ্যমন্ত্রী লিখেছেন, রাজ্যপালের বিবৃতিতে তিনি 'ব্যথিত'। তবে শুধু, 'ব্যথিত'ই নয়। চিঠিতে রাজ্যপালকে কার্যত তদন্তে হস্তক্ষেপের কাঠগড়াতেও দাঁড় করিয়েছেন তিনি। লিখেছেন, 'রামপুরহাটের ঘটনা সম্পর্কে আপনার মন্তব্য দুর্ভাগ্যজনক। নিরপেক্ষ তদন্তেও প্রভাব ফেলতে পারে আপনার মন্তব্য।'
আরও পড়ুন- ‘বৃহত্তর ষড়যন্ত্র, রাজ্যকে কালিমালিপ্ত করার চেষ্টা’, রামপুরহাট কাণ্ডে বললেন পার্থ
বগটুই গ্রামের ঘটনায় ইতিমধ্যে তোলপাড় রাজ্য রাজনীতি। বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করেছে সভার একমাত্র বিরোধী দল বিজেপি। দলগতভাবে বিজেপি আবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পুলিশমন্ত্রী পদ থেকে পদত্যাগ দাবি করেছে। পাশাপাশি, রাজ্যে রাষ্ট্রপতি শাসনের আর্জি জানিয়েছে। মঙ্গলবার এইসব দাবিতে বিধানসভা থেকে মিছিল করে রাজভবনে গিয়েছিলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর নেতৃত্বে বিজেপি বিধায়করা। পাশাপাশি, রাজ্য বিজেপির সংসদীয় প্রতিনিধিদল দেখা করেছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর সঙ্গে দিল্লিতে।
আরও পড়ুন- থমথমে বগটুই, মর্গে পড়ে দাবিহীন ৮ পোড়া দেহ, গ্রামে পুলিশ পিকেট
এই পরিস্থিতিতে রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন রাজ্যপাল জাগদীপ ধনখড়। মুখ্য সচিবের কাছে বগটুই গ্রামের ঘটনায় তিনি রিপোর্টও চেয়ে পাঠিয়েছেন। অতিসম্প্রতি পেশ করা পুলিশ বাজেটে রাজ্যের পুলিশের প্রশংসা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই পরিস্থিতিতে রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা নিয়ে রাজ্যপালের বিবৃতিকে মোটেও হালকা ভাবে নেয়নি নবান্ন। রাজ্যপালকে লেখা চিঠিতে মুখ্যমন্ত্রী রামপুরহাটের ঘটনাকে দুর্ভাগ্যজনক বলে উল্লেখ করেছেন।
পাশাপাশি, রাজ্যপালকে একের পর এক অভিযোগের কাঠগড়ায় তুলে লিখেছেন, 'আপনি যে ধরনের মন্তব্য করেছেন, তা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। আপনার মন্তব্য নিরপেক্ষ তদন্তে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে। সাংবিধানিক পদে থেকেও এই ধরনের মন্তব্য কার্যত অসাংবিধানিক।বিজেপিশাসিত রাজ্য-সহ দেশের অন্য কোথাও এধরনের ঘটনা ঘটনা আপনি নীরব থাকেন। আর বাংলাতে কিছু ঘটলেই সঙ্গে সঙ্গে আইন-শৃঙ্খলা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।'
রাজ্যের সাংবিধানিক প্রধানের বিরুদ্ধে 'রাজনৈতিক' বিবৃতি দেওয়ার অভিযোগ তুলে মুখ্যমন্ত্রী চিঠিতে রামপুরহাটের ঘটনা সম্পর্কে জানিয়েছেন, 'রাজ্যকে অপদস্থ করতে, বাংলার ভাবমূর্তিকে কালিমালিপ্ত করতে এটা বৃহত্তর ষড়যন্ত্রও হতে পারে। তদন্ত করে আসল সত্যটা উদঘাটন করা হবে।