'কৃষ্ণনগর উত্তর বিধায়সভায় উপনির্বাচন হলে তৃণমূল পর্যুদস্ত হবে।' আগেই ভবিষ্যৎবাণী করেছিলেন তৃণমূল নেতা মুকুল রায়। যা ঘিরে বঙ্গরাজনীতিতে তোলপাড় শুরু হয়। প্রশ্ন উঠেছিল ঘরওয়াপসির পর কী তাহলে মুকুল রায় কোনও বড় ইঙ্গিত দিলেন। নাকি পিএসি চেয়ারম্যান বিতর্কের মাঝে এই ডিগবাজিই পোড়খাওয়া রাজনীতিবিদের কৌশল? সেই বিতর্ক এদিন বিধানসভায় দাঁড়িয়ে আরও উস্কে দিলেন মুকুল রায়। আবারও জানালেন, তিনি কৃষ্ণনগর উত্তরে উপনির্বাচনে তিনি বিজেপি প্রার্থী হলে জিতবেন।
শুক্রবার বিধানসভায় ছিল পিএসি কমিটির বৈঠক। চেয়ারম্যান হিসাবে ওই বৈঠকে যোগ দেন মুকুল রায়। বৈঠক থেকে বেরিয়েই নিজের রাজনৈতিক অবস্থান নিয়ে ধোঁয়াশা বাড়িয়েছেন এই তৃণমূল নেতা।
আরও পড়ুন- ‘উপনির্বাচনে তৃণমূল পর্যুদস্ত হবে’, মুকুলের মন্তব্যে তোলপাড় বঙ্গ রাজনীতি
এর আগেও ত্রিপুরায় সংগঠন বিস্তারের উদ্যোগ নিয়েছিল তৃণমূল। যার দায়িত্বে ছিলেন মুকুল রায়। তবে, তাঁর দলবদলের সঙ্গে সঙ্গেই উত্তরপূর্বের ওই রাজ্যে জোড়া-ফুল কার্যত মুড়িয়ে যায়। কিন্তু, বাংলায় ভোটের ফেলাফলের পরই একদা তৃণমূলের সেকেন্ড ইন কমান্ডের ঘরওয়াপসি ঘটে। তৃণমূলও ভিন রাজ্যে সংগঠন বিস্তারে মরিয়া হয়। এক্ষেত্রে ত্রিপুরাকেই পাখির চোখ করেছে বাংলার শাসক শিবির। এই সূত্রেই এদিন সাংবাদিকরা বিধানসভায় মুকুল রায়ের কাছে জানতে চান এবার ত্রিপুরায় তৃণমূলের ফলাফল কেমন হবে? সংগঠন আদৌ পোক্ত হবে কিনা? জবাবে মুকুল বলেন, "আগের চেয়ে ত্রিপুরায় তৃণমূলের ফল ভালো হবে। দলের উপর যে আক্রমণ ত্রিপুরায় হয়েছে সেটা ঠিক নয়।" তাহলে কী ত্রিপুরায় তৃণমূলের হয়ে তাঁকে দেখা যাবে? বিষয়টি দলীয় নেতৃত্বের উপরই ছেড়ে দেন এই বর্ষীয়ান নেতা।
বিজেপির হয়ে এবার কৃষ্ণনগর উত্তর বিধানসভা থেকে ভোট জয় পেয়ে বিধায়ক হয়েছেন মুকুল রায়। কিন্তু দলত্যাগী আইনে তাংর সদস্যপদ খারিজের দাবি করেচে গেরুয়া বাহিনী। স্পিকার সেই দাবির বিচার করছেন। এই প্রসঙ্গেই উপনির্বাচন হলে কৃষ্ণনগর উত্তরে ফলাফল কী হতে পারে? সাংবাদিকদের এই প্রশ্নে আবারও বিস্ফোরক মন্তব্য করে বসলেন মুকুল রায়। বললেন, "বিজেপির হয়ে দাঁড়লে আমি আবারও জিতব।" আর তৃণমূল হয়ে দাঁড়ালে? তাঁর সাফ জবাব, "সেটা মানুষ ঠিক করবে।"
Cআরও পড়ুন- ডিগবাজি নাকি ইঙ্গিত! মুকুল মন্তব্যে তৃণমূলের অন্দরেই জোর গুঞ্জন
রাজ্যে দুই কেন্দ্রে নির্বাচন ও পাঁচ কেন্দ্রে উপনির্বাচনের জন্য কমিশন তোড়জোড় শুরু করেছে বলে সূত্রের খবর। সাত বিধানসভা কেন্দ্রের ফলাফল নিয়ে অবশ্য এদিন মুখ খুলতে চাননি মুকুল রায়।
কেন বার বার নিজের রাজনৈতিক অবস্থান নিয়ে ধোঁয়াশা বাড়াচ্ছেন বাংলা রাজনীতির সাম্প্রতিকালের 'চাণক্য', এই প্রশ্নই এখন বঙ্গ রাজনীতিতে শোরগোল তুলছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশের মতে, বিধায়ক পদ খারিজ, পিএসি চেয়ারম্যান বিতর্ক তুঙ্গে। এই আবহে প্রকাশ্যে কোনও কিছু স্পষ্ট করতে নারাজ মুকুল। আপাতত ধোঁয়াশা বাড়িয়ে বিভ্রান্তির চেষ্টা করে চলেছেন পোড়খাওয়া এই রাজনীতিবিদ। এ রাজ্যের রাজনীতিতে যা নতুন মাত্রা যোগ করেছে।
আরও পড়ুন- “মায়ের মৃত্যুর ধাক্কা সামলে উঠতে পারেনি বাবা”, মুকুলের বেফাঁস মন্তব্যের ব্যাখ্যা শুভ্রাংশুর
তবে এর আগে মুকুল রায়ের বিভ্রান্তিকর মন্তব্যের জন্য তাঁর পুত্র শুভ্রাংশু বলেছিলেন, "মা চলে যাওয়ার পর সেই ধাক্কা সামলে উঠতে পারেনি বাবা। শরীরে তার প্রভাব পড়েছে। সোডিয়াম-পটাশিয়ামের ভারসাম্য নষ্ট হয়েছে। অনেক কথাই মনে করতে পারছেন না। সাম্প্রতিক ঘটনা ভুলে যাচ্ছেন। আবার কিছুক্ষণের মধ্যে সম্বিত ফিরছে তাঁর। এই অবস্থায় তাঁর কোনও মন্তব্যকে ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে না দেখাই উচিত।"
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন