নুইয়ে পড়া কংগ্রেসের পুনরুজ্জীবনে গান্ধী পরিবারের বাইরের কাউকে দলের সভাপতি করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন প্রশান্ত কিশোর? পিকে-র নাম করে কংগ্রেস নেতৃত্বকে দেওয়া এমনই একটি উপস্থাপনা সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘুরে বেড়াচ্ছে। যা নিয়ে তুঙ্গে বিতর্ক। যদিও পিকে নিজে অবশ্য এই উপস্থাপনাটিকে পুরনো ও জাল বলে দাবি করেছেন। সাম্প্রতিক সময়ে কংগ্রেসের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে তাঁর যে আলোচনা চলছে তার সঙ্গে প্রাচীন এই দলটির পুনরুজ্জীবনে যে উপস্থাপনার কথা বলা হচ্ছে তার কোনও মিল নেই বলে দাবি করেছেন ভোটকুশলী প্রশান্ত।
৮৫ পাতার একটি উপস্থাপনা বৃহস্পতিবার সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘুরে বেড়িয়েছে। সেই উপস্থাপনা অনুযায়ী, ভোটকুশলী প্রশান্ত কিশোর নাকি কংগ্রেসের নেতাদের জানিয়েছিলেন, দল বাঁচাতে গান্ধী পরিবারের বাইরের কাউকে কংগ্রেসের সভাপতি করা উচিত। যদিও বিষয়টি নিয়ে দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস যোগযোগ করেছিল খোদ প্রশান্ত কিশোরের সঙ্গেই। তাঁর নামে যে উপস্থাপনাটি সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘুরছে সেটি জাল বলে দাবি করেছেন পিকে। তিনি বলেন, ''একটি পুরনো জাল উপস্থাপনা। এখন যে আলোচনা চলছে তার সঙ্গে ওই উপস্থাপনার কোনও সম্পর্ক নেই।"
যদিও প্রশান্ত কিশোরের নামে প্রকাশিত সেই উপস্থাপনা নিয়ে মন্তব্য এড়িয়েছে কংগ্রেস। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কংগ্রেসের এক নেতা বলেন, ''আমরা এমন কোনও উপস্থাপনা দেখিনি।'' দলের অন্য এক নেতা বলেন, ''এটি পুরনো বা নকল হতে পারে।'' কংগ্রেসের একজন সিনিয়র নেতা দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলেন, ''প্রশান্ত কিশোর গত বছর কংগ্রেস নেতৃত্বের কাছে একটি উপস্থাপনা পেশ করেছিলেন। বর্তমানে তিনি যে উপস্থাপনাটি পেশ করেছেন সেটি আগেরটিরই সংস্করণ।'' তবে সূত্র মারফত জানা গিয়েছে, পিকে-র পেশ করা উপস্থাপনায় গান্ধী পরিবারের বাইরের কাউকে সভাপতি করা নিয়ে কিছু বলা হয়নি।
অনেক কংগ্রেস নেতা অবশ্য জানিয়েছেন, প্রশান্ত কিশোর ব্যক্তিগত স্তরে কথাবার্তায় অনেককেই গান্ধী পরিবারের বাইরের কাউকে কংগ্রেসের সভাপতি পদের দায়িত্ব দেওয়ার কথা বলেছেন। তবে লোকসভায় রাহুল গান্ধীকেই দলের নেতা হিসেবে বরাবর চেয়ে এসেছেন পিকে।
আরও পড়ুন- জাহাঙ্গিরপুরীতে যাচ্ছে তৃণমূলের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিটি
উল্লেখ্য, সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশ্যে আসা ওই উপস্থাপনায় ১৯৮৫ থেকে কংগ্রেস কীভাবে ধীরে-ধীরে ক্ষয়িষ্ণু হতে শুরু করে তার একটি ধারমা দেওয়া হয়েছে। ওই বছরের লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেসের ভোটের ভাগ কমে যাওয়ার বিষয়টিও তুলে ধরা হয়েছে। কংগ্রেসের পতনের একাধিক কারণের উল্লেখ রয়েছে ওই উপস্থাপনায়। দলের ভার উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়ার ফলে স্বাভাবিক একটি অসুবিধা ছিল বলে উল্লেখ করা হয়েছিল উপস্থাপনাটিতে।
এছাড়াও সংগঠিতভাবে চারটি ক্ষেত্রে জনগণের দলের বিরুদ্ধে মত তৈরি (জেপি আন্দোলন, বোফর্স কেলেঙ্কারি এবং তার পরবর্তী ঘটনা, মণ্ডল আন্দোলন এবং রাম মন্দির আন্দোলন এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে ভারত এবং মোদীর উত্থান)ও দল ক্ষয়িষ্ণু হওয়ার পিছনে অন্যতম একটি কারণ ছিল বলে দাবি করা হয়েছে। একইসঙ্গে কংগ্রেসের কাঠামোগত দুর্বলতা এবং জনগণের সঙ্গে সংযোগের অভাবের দিকটিও ওই উপস্থাপনায় তুলে ধরা হয়েছিল।
ওই উপস্থাপনায় উল্লেখ করা হয়েছে, কংগ্রেস 'বয়স্ক নেতৃত্ব'-এর অধীনে থেকে ক্রমেই দুর্বল হয়েছে। গত ২৫ বছরে একবারও দেশব্যাপী সদস্য সংগ্রহ অভিযানে নামেনি দলটি। এছাড়াও কংগ্রেসের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের ১১৮ জনের মধ্যে মাত্র ২৩ জন নির্বাচিত সদস্য। কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির ৬৬ জনের মধ্যে মাত্র দু'জনের বয়স ৪৫-এর কম। এই সব বিষয়গুলি তুলে ধরে কংগ্রেসের দুর্বল হওয়ার কারণগুলি ব্যাখ্যা করা হয়েছে ওই উপস্থাপনায়।
Read full story in English