লোকসভা ভোটের পর বাংলায় যখন নিজেদের ভিত শক্ত করতে উঠেপড়ে লেগেছে বিজেপি, সেই সময়েই ঘাসফুলে শিকড় মজবুত করতে এবার ময়দানে নামলেন দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মধ্যমগ্রামে প্রশাসনিক বৈঠকের পর আজই ফের নজরুল মঞ্চে দলীয় কর্মী এবং নেতাদের নিয়ে বৈঠক ডাকেন মমতা। দলের নিচু তলার কর্মীদের মাধ্যমে জনসংযোগ বৃদ্ধি এবং দলকে আন্দোলনমুখী করার বার্তা দিতেই আজ বৈঠক ডাকেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সরাসরি 'দিদির' সঙ্গে কথা বলার জন্য এদিন একটি মোবাইল নম্বর ও একটি ওয়েবসাইট চালু করেন তিনি। তৃণমূল নেত্রী বলেন, "জনগণের সঙ্গে জনসংযোগ, সোজাসুজি তাঁদের কথা আমাকে জানবার জন্য, একটা ফোন নম্বর দিচ্ছি। সেটি হল- ৯১৩৭০৯১৩৭০ এবং ওয়েবসাইটটি হল- www.didikebolo.com। কোনো কথা বলার থাকলে এই নম্বরে বলুন"।
I am happy to announce that @AITCofficial has launched @DidiKeBolo , a new initiative to reach out to & connect with every citizen of West Bengal. If you have any message for me, call the number 9137091370. You can also reach out to us through the website https://t.co/cXWdQidkE9
— Mamata Banerjee (@MamataOfficial) July 30, 2019
আরও পড়ুন- অনেক তৃণমূল নেতাই এবার দুর্গাপুজো দেখতে পাবেন না: রাহুল সিনহা
এদিন শুধু নম্বর দিয়েই থেমে থাকেননি মমতা, জনপ্রতিনিধিরা কীভাবে কোন কোন জায়গায় কাজ করবেন সে বিষয়েও নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, "আগামী ১০০ দিনের মধ্যে আমাদের দলের জনপ্রতিনিধিরা এবং পদাধিকারীরা বিভিন্ন জেলায় গিয়ে স্থানীয় মানুষদের সঙ্গে যোগাযোগ করবেন। তাঁদের অভাব অভিযোগের কথা শুনবেন এবং সেই গ্রামে রাত কাটাবেন। তাহলে সরাসরি অনেক পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করা সম্ভব হবে"। এদিকে মমতার আজকের এই বৈঠককে কেন্দ্র করে বুথ স্তরে চার জন করে হোলটাইমার রাখার বিষয়ে জল্পনা ছড়িয়েছিল রাজনৈতিক মহলে। সেই প্রসঙ্গে এদিন তৃণমূল সুপ্রিমো বলেন, "হোলটাইমার রাখার পয়সা নেই আমাদের। আমরা গরিব দল। বিজেপির মতো আমরা বড়লোক নই। একটা ভোট আসলেই খরচের কথা ভেবে আমাদের মাথা থেকে পা পর্যন্ত ম্যালেরিয়ার মতো জ্বর আসে। আমরা হোলটাইমার রাখার কথা ভাবতেও পারি না"।
আরও পড়ুন- মুকুল রায়কে নোটিস কলকাতা পুলিশের
বৈঠকে জনপ্রতিনিধিদের কাজ নিয়ে মমতা বলেন, "জনপ্রতিনিধিরাও এই নম্বরটি সম্পর্কে জনসাধারণকে সচেতন করবেন। জনসংযোগ যে যার নিজের জেলার মধ্যে করবে। তবে কে কোন গ্রামে যাবে তা ঠিক করবে দল। জনপ্রতিনিধিদের কাজ হবে সাধারণ মানুষ, এলাকার বিশিষ্ট মানুষদের সঙ্গে কথা বলা, এলাকার কর্মীদের সঙ্গে বৈঠক করা"। এমনকি বুথ কর্মীদের বাড়িতে গিয়ে একসঙ্গে খাওয়ার এবং গ্রাম ছাড়ার আগে তৃণমূল কংগ্রেসের পতাকা উত্তোলন করার নির্দেশও দেন মমতা। তৃণমূল নেত্রী বলেন, "বুথ স্তরের কর্মীদের যোগাযোগ করার নতুন প্রক্রিয়া শুরু হল এবার থেকে। গ্রাম পঞ্চায়েত, জেলা পরিষদ সবার সঙ্গে যোগাযোগও স্থাপন হবে। আমরা আধুনিকতম ব্যবস্থা নিয়ে তাঁদের কাছে পৌঁছে যাব এবং তাঁদের মতো করে তাঁদের কথা শোনা হবে এবার থেকে"।
আরও পড়ুন- অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় চোর, বিস্ফোরক সৌমিত্র খাঁ
তবে রাজনৈতিক মহলে চলতে ভোট প্রচারের গুঞ্জনে কার্যত জল ঢেলে ঘাসফুল শিবিরের প্রধান জানান, "এখনই আমরা ভোটের প্রচারে যাচ্ছি না। এখন শুধু উন্নয়নের কাজ করে যাব। আমরা পুরসভাতেও জনসাধারণের অভিযোগ জানানোর জন্য ফোন নম্বর চালু করেছি। নাগরিকদের একটা ডিজিট্যাল প্ল্যাটকর্ম দিচ্ছি যেখানে তাঁরা তাঁদের অভিযোগ আমাদের জানাতে পারবেন। এখন সবটা করা সম্ভব হবে না। যেখানে যতটা সম্ভব সেই কাজগুলো করে দেব।" কিন্ত, রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে জনগণের জন্য চিফ মিনিস্টার গ্রিভান্সেস সেল তো রয়েছে, তারপরও এই পদক্ষেপ কেন? সাংবাদিকদের এই প্রশ্নের উত্তরে মমতার জবাব, "আমরা ওটা সরকারিভাবে শুরু করেছি। আর এটা আমি দলের জন্য তৈরি করলাম। দলের প্রধান হয়ে এটা চালু করাটা জরুরি মনে করছি। ইতিমধ্যেই আমি দলের সব স্তরের কর্মীদের সঙ্গে বৈঠক করেছি। স্থানীয় কোনও সমস্যা হলে তাঁরাও এই নম্বরে সমস্যার কথা জানালে আমি সমাধান করার চেষ্টা করতে পারব"। এদিন কোনও রাজনৈতিক বার্তা সরাসরি না দিলেও বিধানসভা ভোটের কথা মাথায় রেখেই যে মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ বৃদ্ধির চেষ্টা করছেন তৃণমুল নেত্রী বৈঠকের পর তা স্পষ্ট।