দেবশ্রী রায়ের বিজেপিতে যোগদান নিয়ে যেন 'নাটক' থামছেই না। শোভন-বৈশাখীর আপত্তি সত্ত্বেও টলিউডের একদা জনপ্রিয় নায়িকাকে 'দলে নিয়ে নেব' বলে বৃহস্পতিবার জানিয়ে দিলেন স্বয়ং বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। এদিন সাংবাদিক বৈঠকে দিলীপ বলেন, ‘‘উনি (দেবশ্রী) কী চাইছেন, আর আমরা কী চাইছি, সেটা ঠিক হয়ে গেলে দলে নিয়ে নেব’’। একইসঙ্গে দিলীপের ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য, ‘‘কাকে কখন নেওয়া হবে, আমরা ঠিক করব’’। দিলীপ ঘোষের এহেন মন্তব্যের পর রায়দিঘির তৃণমূল বিধায়ক দেবশ্রীর বিজেপিতে যোগদান এখন কেবল সময়ের অপেক্ষা বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল। ফলে, দেবশ্রীর বিষয়ে শোভন-বৈশাখীর আপত্তি শেষ পর্যন্ত ধোপে টিকবে না বলেই অনুমান রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশের।
এক্সক্লুসিভ শোভন: মমতাকে তৈরি করতে সব নষ্ট করে জীবন দিয়েছিলাম, আর উনিই রাজনীতি করলেন
১৪ অগাস্ট দিল্লিতে বিজেপির সদর দফতরে শোভন চট্টোপাধ্যায় ও বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়ের যোগদানের দিনই ঘটনাক্রমে নাটকীয় প্রবেশ ঘটে দেবশ্রী রায়ের। দেবশ্রীকে দেখেই তীব্র আপত্তি জানান একদা দেবশ্রীর ‘বন্ধু’ শোভন চট্টোপাধ্যায়। শোভন-বৈশাখী এই ঘটনায় এতটাই ক্ষুব্ধ হন যে বিজেপি নেতৃত্বকে হুঁশিয়ারি দিয়ে শোভন জানিয়ে দেন, দেবশ্রী রায় যেদিন যোগ দেবেন, সেদিনই তাঁর (শোভন) বিজেপিতে শেষ দিন হবে। এরপর 'স্বাভাবিকভাবেই' সেদিন আর দেবশ্রীর বিজেপিতে যোগদান সম্ভব হয়নি। সেই থেকেই বঙ্গ রাজনীতিতে দেবশ্রী রায়কে ঘিরে জোর চর্চা শুরু হয়। তবে এই ঘটনায় রহস্য জিইয়ে রেখে কার্যত ‘উধাও’ হয়ে যান বরাবর দক্ষ অভিনেত্রী হিসাবে প্রশংসিত দেবশ্রী রায়। সেদিনের পর থেকে দেবশ্রীর মোবাইল ফোনও বন্ধ। কিন্তু, কে বা কারা সেদিন দেবশ্রীকে বিজেপি দফতরে নিয়ে গিয়েছিল, সে প্রশ্নের উত্তর এখনও নেই। এ নিয়ে যখন তুমুল আলোচনা চলছে রাজ্য রাজনীতিতে, ঠিক সেই আবহেই বুধবার রাত ১০টা নাগাদ সল্টলেকে দিলীপ ঘোষের বাড়িতে হাজির হন দেবশ্রী, এমনটাই দাবি করেছিল কয়েকটি সূত্র। জানা যায়, দিলীপের বাড়ির সামনে প্রায় ৪০ মিনিট গাড়িতে বসে থাকেন এই অভিনেত্রী। শেষমেশ সংবাদমাধ্যমের ভিড় দেখে দিলীপের সঙ্গে সাক্ষাৎ না করেই নাকি ফিরে যান তিনি। এর পরপরই সল্টলেকের বাসভবনে ফেরেন দিলীপ ঘোষ। এ ব্যাপারে ‘কিছু জানা নেই’ বলেই গত রাতে মন্তব্য করেন মেদিনীপুরের সাংসদ।
আরও পড়ুন: মমতাকে ‘আমন্ত্রণ’ মুকুলের, ‘তবে মুখ্যমন্ত্রী একই থাকবে, এর কোনও মানে নেই’!
আরও পড়ুন: বিচ্ছেদের ইঙ্গিত? বিজেপি-র সাংগঠনিক নির্বাচনে গরহাজির শোভন-বৈশাখী
তবে বুধবার রাতে 'জানা নেই' বললেও এ প্রসঙ্গে বৃহস্পতিবার সাংবাদিক বৈঠকে দিলীপ বলেন, ‘‘আমিও শুনেছি দেবশ্রীদি এসেছিলেন, দেখা হয়নি। পরে একজন ফোনে কথা বলিয়েছেন। জিজ্ঞাসা করতে বললেন, এসেছিলেন’’। এরপরই দিলীপ বলেন, ‘‘কারও আপত্তি নেই। তবে যোগ দেওয়ার জন্য যে পরিবেশ দরকার হয়, সেটা এখনও হয়নি। দরজা সবসময় খোলা রয়েছে। উনি (দেবশ্রী) কী চাইছেন, আর আমরা কী চাইছি, সেটা ঠিক হয়ে গেলে দলে নিয়ে নেব’’।
আরও পড়ুন: শোভন-বৈশাখী ও বিরিয়ানির খুশবু
এদিকে, বুধবার রাতে দেবশ্রী রায় যখন দিলীপের বাড়ির সামনে অপেক্ষা করছিলেন, তখনই আবার শোভন-বৈশাখীর ফ্ল্যাটে যান রাজ্য বিজেপির সহ-পর্যবেক্ষক অরবিন্দ মেনন ও জয়প্রকাশ মজুমদার। এ প্রসঙ্গে শোভন চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বিভিন্ন বিষয়ে মত বিনিময় হয়েছে’’। এরপরই দেবশ্রী প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে শোভন বলেন, ‘‘আমাদের আপত্তির কথা আগেই জানিয়েছি। উনি (দেবশ্রী) কী কারণে ১৪ তারিখ দিল্লিতে বিজেপি দফতরে গিয়েছিলেন, বা গতকাল কেন উনি গেলেন, সেটা উনিই বলতে পারবেন। রাজনৈতিক পর্যটন যদি কেউ করে থাকেন সেটা তিনিই বলতে পারবেন’’। অধ্যাপিকা তথা শোভনের বান্ধবী বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘দেবশ্রী রায় তেমন গুরুত্বপূর্ণ কেউ নন, যে তাঁকে নিয়ে আলোচনা করতে হবে’’।