নন্দীগ্রামে নির্বাচনী জনসভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে বলেছিলেন শুভেন্দুর থেকে মুকুল ভাল ছেলে। কথার সঙ্গে ছিল মুচকি হাসিও। ভোটের ফলপ্রকাশের দেড় মাসের মধ্যে তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ধরে সপুত্র তৃণমূলে ফিরে আসেন মুকুল রায়। রবিবার প্রথা মেনে রাজভবনে হাজির হয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী, সাংসদ দিলীপ ঘোষসহ অনেকেই৷ ওই সান্ধ্য উৎসবে মমতা-শুভেন্দু সৌজন্য বিনিময় হলেও একটু বেশি আলাপ-আলোচনা চলেছে মমতা-দিলীপের মধ্যে। যার পিছনেও কৌশল দেখছে রাজনৈতিক মহল।
জানা গিয়েছে, রবিবার সন্ধ্যায় রাজভবনে বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের প্রাতভ্রমণের প্রসঙ্গ তুলে নিজের হাটাার কথা বলেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মেদিনীপুরের সাংসদকে নবান্নে যাওয়ার জন্য আমন্ত্রণও জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। হাসিমুখে দুজনে ভাব বিনিময় করেছেন। অন্যদিকে পূর্ব মেদিনীপুরের অধিকারী পরিবারের সঙ্গে শুধু রাজনৈতিক নয় একটা পারিবারিক সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল মমতার। এদিন দিলীপ ঘোষকে আলাপচারিতায় সময় দিলেও শুভেন্দুর সঙ্গে প্রথামাফিক সৌজন্যেই আটকে থেকেছেন মমতা।
আরও পড়ুন- গ্রেফতার দিলীপ-শুভেন্দু, কেন্দ্রীয় বাহিনী-পুলিশ ধস্তাধস্তি, মেয়ো রোড ধুন্ধুমার
রাজনৈতিক মহল এই বিষয়টাকে কৌশল হিসাবেই দেখছে। এরাজ্যে বিধানসভা নির্বাচনের ফলপ্রকাশের পর দেখা গিয়েছে পদ্ম শিবিরের প্রকাশ্যে কাদা ছোড়াছুড়ি। দলীয় কোন্দলে একাধিক শিবিরে বিভক্ত হয়ে যায় পদ্মশিবির। মুকুল রায়ের বিজেপিতে যোগদানের দিন থেকে বনিবনা ছিল না দিলীপের। প্রকাশ্য বিবৃতিতে তা বুঝেছিল রাজনৈতিক মহল। প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ও আসানসোলের সাংসদ বাবুল সুপ্রিয়র সঙ্গে বিজেপি রাজ্য সভাপতির বাকযুদ্ধ, বিষ্ণুপুরের সাংসদ সৌমিত্র খাঁয়ের সঙ্গে তর্কবিতর্ক প্রত্যক্ষ করেছে রাজ্যের মানুষ। বাবুল তো দল ছাড়ার ঘোষণা করে ফেসবুক বিপ্লবও করে ফেলল। মাঝেমধ্যেই টুইটে দলীয় নেতৃত্বের একাংশকে কটাক্ষ করেন প্রাক্তন রাজ বিজেপি সভাপতি তথাগত রায়। সেদিক থেকে এই মুহূর্তে রাজ্য বিজেপিতে যুযুধান গোষ্ঠীর সংখ্যা কমেছে বলে মনে করছে অভিজ্ঞ মহল। এরই মধ্যে একই অনুষ্ঠানে দিলীপ ঘোষকে শুভেন্দুর তুলনায় বাড়তি গুরুত্ব দিলেন মমতা!
আরও পড়ুন- তৃণমূলের খেলা হবে দিবসে গোল করলেন দিলীপ ঘোষ
স্বাধীনতা দিবসে রাজভবনে দিলীপ ঘোষকে একটু বেশি গুরুত্ব দিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শুভেন্দুকে কি বার্তা দিলেন? তা নিয়েই চর্চা চলছে বঙ্গ রাজনীতিতে। রাজনৈতিক মহলের মতে, এটাও একটা বড় রাজনৈতিক কৌশল। বিরোধী দলনেতাকে 'হায়-হ্যালো' আর বিরোধী দলের সভাপতির সঙ্গে খোস মেজাজে কথা বলা। এ যেন এক ঢিলে দুই পাখি!
শুভেন্দু বক্তব্য রাখতে গিয়ে প্রায়শই বলেন, 'বালু মাটির শুভেন্দু ও লাল মাটির দিলীপ। দুজনেই মেদিনীপুরের।' বিজেপির অন্যদের মতো তাঁরা প্রকশ্যে বিবৃতি যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েন না। এই মুহূর্তে দিল্লীর নেতৃত্বের কাছে শুভেন্দু ও দিলীপের গুরুত্ব রয়েছে তা রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে স্পষ্ট। রাজভবনের ঘটনার পর পরিস্থিতির ওপর নজর রয়েছে রাজনৈতিক মহলের।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন