প্রথমে দলের মতুয়া বিধায়কদের গোপন বৈঠক, বৈঠকের শেষে রীতিমতো রণংদেহী মূর্তি কেন্দ্রীয়মন্ত্রীর, পরের পর্যায়ে পিকনিকের মেজাজে বিদ্রোহ, বৈঠক ও পিকনিকে হাজির রাজ্য কমিটি থেকে বাদ যাওয়া একাধিক নেতা। এবার জঙ্গলমহলে অশান্তির ছায়া গেরুয়া শিবিরে। রাজ্য বিজেপির নতুন সাংগঠনিক কমিটি ঘোষণার পর নেতা-কর্মীদের উজ্জীবিত হওয়া দূরের কথা বরং দলের ভিতরে-বাইরে ক্ষোভ-বিক্ষোভ বেড়েই চলেছে। এদিকে চার পুরনিগমের নির্বাচন দুয়ারে, তারপরই রাজ্যের বাকি শতাধিক পুরসভার নির্বাচন। রাজনৈতিক মহলের মতে, দলের এই ক্ষোভ-বিক্ষোভের প্রভাব যে স্থানীয় নির্বাচনে পড়বে তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই।
দুয়ারে উত্তরপ্রদেশ, উত্তরাখণ্ড, গোয়া, পঞ্জাব ও মণিপুরে নির্বাচন। বিজেপির কাছে সব থেকে বড় চ্যালেঞ্জ উত্তরপ্রদেশের বিধানসভা নির্বাচন। ৪০৩ বিধানসভা আসনের উত্তরপ্রদেশে ক্ষমতা ধরে রাখতে পারলে ২০২৪ লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির মনোবল বাড়বে বলেও ধারনা রাজনৈতিক মহলের। মনে করা হচ্ছে এখন বাংলার দিকে তাকানোর সময় নেই দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের। মতুয়া সমস্যা নিয়ে এখনও কেন্দ্রীয় স্তরে কোনও আলোচনা হয়নি। মতুয়াদের সঙ্গে দলীয় পরিস্থিতি নিয়ে একাধিক বৈঠক করেছেন রাজ্য কমিটি থেকে বাদ যাওয়া বিজেপির পরিচিত নেতারা। এরই মধ্যে জঙ্গলমহলের দুই জেলায় নেতৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিলেন দলীয় বিধায়করা।
এরাজ্যে বিজেপির মূল শক্তি উত্তরবঙ্গ ও জঙ্গলমহল। তারপর ছড়িয়ে ছিটিয়ে কিছুটা উত্তর ২৪ পরগনা ও নদিয়ার মতুয়া অধ্যুষিত অঞ্চল। ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনে জঙ্গলমহলের আসনগুলিতে তৃণমূলকে রীতিমতো ধরাশায়ী করে দিয়েছিল বিজেপি। গতবছর বিধানসভা নির্বাচনে উত্তরবঙ্গের পাশাপাশি কিছুটা মান রেখেছে বাঁকুড়া ও পুরুলিয়া। বিষ্ণুপুরের সাংসদ সৌমিত্র খাঁ গতবছর রাজ্য নেতৃত্বের বিরুদ্ধে সরাসরি ফোঁস করেছিলেন। সূত্রের খবর, এবার জেলার সাংগঠনিক দুর্বলতা নিয়ে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের হস্তক্ষেপ চেয়েছেন বাঁকুড়া ও পুরুলিয়া জেলার অধিকাংশ বিজেপি বিধায়ক। দলের কাছে স্বস্তির বিষয় এখনও উত্তরবঙ্গ বিজেপিতে অশান্তির ছায়া দেখা যায়নি।
২০১৯ লোকসভা ভোটের ফলাফলের প্রেক্ষিতে ও লক্ষ্য অনুযায়ী বিধানসভা ভোটে আশানুরূপ ফল করতে পারেনি বিজেপি। বরং কংগ্রেস-সিপিএমকে নিঃস্ব করে তৃণমূল কংগ্রেস বিপুল সংখ্যক বিধায়ক নিয়ে রাজ্যে ক্ষমতায় এসেছে। কলকাতা পুরসভা নির্বাচনে বিজেপি ৩ আসন জয় পেয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে বিজেপিকে। যদিও তাঁরা ভোটে ছাপ্পা-রিগিংয়ের অভিযোগ করেছে। বিধানসভা ভোটপরবর্তী হিংসায় বিজেপি কর্মীদের ওপর অত্যাচারের অভিযোগ তুলেছিলেন দলীয় নেতৃত্ব। এদিকে বিজেপির একাংশের দাবি, অত্যাচারিত কর্মীদের পাশে দাঁড়াননি নেতৃত্বের একটা বড় অংশ। অভিযোগ ফোন পর্যন্ত ধরেননি অনেক নেতাই। রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় দলীয় কর্মীদের এখন ধরে রাখাই বিজেপি নেতৃত্বের মুশকিল হচ্ছে বলে মনে করছে অভিজ্ঞ মহল। স্থানীয় স্তরেও দলের নেতা-কর্মীরা তৃণমূলে ভিড়ে গিয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে এখন চার নগরনিগমের নির্বাচন, তারপর বাকি পুরসভার ভোট। যে ভাবে দলের ঘরে-বাইরে ক্ষোভ-বিক্ষোভ তৈরি হয়েছে তাতে পুরনির্বাচনে একতরফা ফায়দা পেয়ে যাবে তৃণমূল, এমনটাই মনে করছে রাজনৈতিক মহল।