২০১৯ লোকসভা নির্বাচনে এ রাজ্যে ১৮টি আসনে জয় পেয়েছে বিজেপি। কিন্তু কলকাতায় দাঁত ফোটাতে পারেনি গেরুয়া বাহিনী। মহানগরে দুটি আসনেই বিপুল ভোটে জয় পেয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। কলকাতায় দুর্গাপুজো কমিটিগুলোতে এবারও আধিপত্য বজায় রেখেছে ঘাসফুল। তবে গেরুয়া শিবিরের দাবি, বেশ কয়েকটি দুর্গাপুজোর উদ্বোধনে বিজেপি নেতৃত্ব হাজির থাকবেন।
জনসংযোগের জন্য দুর্গাপুজোয় বরাবর ঘুরিয়ে অংশ নেয় সিপিএম-ও। অতীতে এমন কোনও বড় পুজো মন্ডপ ছিল না, যেখানে তারা বইয়ের স্টল দিত না। কলকাতায় বাম আমলে অধিকাংশ পুজোকমিটির মাথায় থাকতেন কংগ্রেস নেতারা। তারপর তৃণমূল কংগ্রেস গঠিত হওয়ার পর বিশেষত ২০১১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে রাজ্যে পরিবর্তনের হাওয়ায় কলকাতার অধিকাংশ বড় পুজো কমিটির কর্তৃত্ব চলে যায় রাজ্যের মন্ত্রী বা তৃণমূল নেতৃত্বের হাতে। এবার বিজেপি অনেক চেষ্টা করেও মহানগরে পুজো কমিটিতে থাবা বসাতে পারেনি। তৃণমূল মনে করছে, রাজনীতির সঙ্গে পুজোকে গুলিয়ে ফেলা ঠিক নয়। আমবাঙালী তা মেনে নেবে না।
আরও পড়ুন: সল্টলেক থেকেই পুজোর লড়াই শুরু বিজেপির
একডালিয়া এভারগ্রিনের পুজোতে রয়েছেন পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়, নাকতলায় শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়, সুরুচি সংঘে ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস, চেতলা অগ্রণীতে পুরমন্ত্রী ও কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম, এভাবেই দীর্ঘ দিন ধরে কলকাতায় পুজোর আয়োজন চলছে। প্রবীণ তৃণমূল নেতা সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের দাবি, "দুর্গাপুজোতে রাজনীতির রং দিতে চাইছে বিজেপি।" তিনি বলেন, "আমি মনে করি দুর্গাপুজো এমন একটা পুজো যা দখল করা যায় না। রাজনীতির দিক থেকে আমরা পুজো করি না। আমাদের মধ্যে কে কোন পার্টি করে, সেটা আমরা পুজোর সময় ধরি না, দেখিও না। আমাকেও ওভাবে কেউ দেখে না। হঠাৎ এরকম সংকীর্ণ রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গী কেন নিয়ে এল জানি না।"
এবার দুর্গাপুজোর দখল নিয়ে কালিঘাট এলাকার এক ক্লাবে সংঘর্ষ পর্যন্ত হয়েছে। শহরে এর আগে এমন ঘটনা কবে হয়েছে তা কেউই মনে করতে পারছে না। কলকাতায় বেশিরভাগ পুজোর উদ্বোধন করছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অন্য় দিকে বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সল্টলেকে একটি পুজো মন্ডপের উদ্বোধন করেন। সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের মতে, "উনি একটা পুজো উদ্বোধন করবেন বিজেপির পুজো বলে। সবকিছুকে ছোট করে দিচ্ছেন। উনি পুজো উদ্বোধন করতে আসতেই পারেন।"
আরও পড়ুন: বিজেপিতে যোগ দিয়েই শাহ-স্পর্শ সব্যসাচী দত্তের
বামফ্রণ্ট সরাসরি পুজোর সঙ্গে যুক্ত থাকতো না। তবে জনসংযোগে ত্রুটি রাখতো না। এই প্রবীণ নেতার বক্তব্য, "বামফ্রন্ট কোনও দিন পুজো কমিটি দখলের রাজনীতি করেনি। পুজো কমিটি দখলের লড়াই নেই। ওঁরা এই ভুলটা কেন করল জানি না। পুজোর সঙ্গে রাজনীতির কোনও সম্পর্ক নেই। কখনও বাঙালী এটা নেবে না।"
তবে বিজেপির রাজ্য সম্পাদক সায়ন্তন বসুর কথায়, "পুজো কমিটি দখলের বিষয় নয়। কিন্তু সব কিছু জোর করে দখলে রাখব, প্রয়োজনে মারধর করব এটা ঠিক না। কালিঘাটে আমাকে আটকাতে মুখ্যমন্ত্রীর পরিবারকে কেন নামতে হয়েছিল? এতটা আতঙ্কতি কেন তৃণমূল? আমিও তো বাগবাজারের দুটি দুর্গাপুজোর উদ্বোধন করব। কলকাতায় দলের অন্য নেতারাও অনেক পুজোর উদ্বোধন করবেন।"