Advertisment

'যে সিপিএম-কে হারিয়েছেন, সেই সিপিএম-কে আর ফেরত আসতে দেব না'

Exclusive Interview of Ex-Minister Leader Gautam Deb: মুকুল রায়, শোভন চট্টোপাধ্যায়, সিপিএম থেকে বহিষ্কৃত ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায় এবং কংগ্রেসের সঙ্গে জোট নিয়ে গৌতম দেবের বিস্ফোরক সাক্ষাৎকারের শেষ কিস্তি।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
Exclusive Interview of CPIM Leader Gautam Deb

ঋতব্রত যা করেছে, তাতে বহিষ্কৃত হতেই হত: গৌতম দেব। এক্সপ্রেস ফটো।

সিপিএম-এ 'ঘর ওয়াপসি' হচ্ছে এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে জেলে যেতে হতে পারে, বিস্ফোরক সাক্ষাৎকারের প্রথম অংশে এমন দাবি করার পর শেষ কিস্তিতে মুকুল রায়, শোভন চট্টোপাধ্যায়, সিপিএম থেকে বহিষ্কৃত ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায় এবং কংগ্রেসের সঙ্গে জোট নিয়ে আগুন ঝরালেন রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী তথা সিপিআই-এম নেতা গৌতম দেব। পড়ুন, গৌতম দেবের এক্সক্লুসিভ সাক্ষাৎকারের শেষ কিস্তি।

Advertisment

মুকুল রায়ের দল বদল এবং বর্তমানে তিনি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ করছেন, সে বিষয়ে আপনার প্রতিক্রিয়া কী?

মুকুল খারাপ মানুষ। বাংলার রাজনীতিতে উনি কোনও ফ্যাক্টরই না। তবে, তৃণমূলে মমতার ডান হাত ছিলেন। দলের হয়ে টাকা তুলতেন। তাই, মমতার অনেক কিছু তাঁর জানা আছে। সে কারণেই, অভিষেকের বিরুদ্ধে বিশ্ববাংলার মালিকানা বিষয়ে যেসব অভিযোগ সামনে এসেছে, তা ফেলে দেওয়া যাবে না।

মেয়র ও মন্ত্রী পদ থেকে শোভন চট্টোপাধ্যায়ের অপসারণকে কীভাবে দেখছেন?

আরে শোভনও তো সব জানে। তাই তাকে চটানো মুশকিল আছে। যে যাই করে থাকুক, মমতা কাউকে তাড়াতে পারবেন না। কারণ, মমতা প্রচুর অন্যায় করেছেন। 'শি হ্যাজ অ্যা ক্রিমিনাল বেন্ট অব মাইন্ড।' ববি হোক, অরূপ বিশ্বাস হোক বা শোভন, সকলের সঙ্গেই মমতাকে আপস করে চলতে হবে। সবাই সব জানে। ফলে, উনি কাউকে দল থেকে তাড়িয়ে দিতে পারবেন না।

আরও পড়ুন: ‘এমনও তো হতে পারে, মমতাকে জেলে যেতে হল’

সেই ২০১১ থেকে গৌতম দেব মানেই কর্মী কমরেডদের কাছে ভোকাল টনিক। কিন্তু সেই টনিক আজকাল আর পাওয়া যাচ্ছে না। না কী টনিকে টান পড়েছে, কাজ হচ্ছে না?

না...না, টনিক আছে। বরং এই মুহূর্তে তো পরিস্থিতি আরও চ্যালেঞ্জিং, তাই টনিকের দরকারও বেশি। বিভিন্ন সভায় বক্তৃতা দিচ্ছি। মানুষের মধ্যে ব্যাপক সাড়াও পাচ্ছি। আমাদের এই মুহূর্তে তিনটি উদ্দেশ্য - বিজেপিকে সরকার থেকে নামানো, কেন্দ্রে ধর্মনিরপেক্ষ সরকার গঠন করা এবং পার্লামেন্টে পার্টির আসন 'কিছুটা' বাড়ানো ('কিছুটা' শব্দে জোর দিলেন)। ভুল বোঝা মানুষদের দলে ফিরিয়ে নিয়ে আসছি। এবার তাঁদের বলছি, যে সিপিএম-কে হারিয়েছেন, সেই সিপিএম-কে আর ফেরত আসতে দেব না।

কোন সিপিএম-কে হারিয়েছিলেন মানুষ?

দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থেকে আমাদের দলের কারও কারও মধ্যে ঔদ্ধত্য চলে এসেছিল। মানুষের সঙ্গে সকলে ভাল ব্যবহার করেননি। তাই কিছু মানুষ মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। তাঁদের দলে ফিরিয়ে আনব। দলের মধ্যে এসব নিয়ে সবসময়ই কথা হচ্ছে। মানুষের প্রয়োজনে দলের নেতা-কর্মীদের পাশে দাঁড়াতে হবে, সাহায্য করতে হবে।

কী মনে হচ্ছে, আসন্ন লোকসভায় এই রাজ্যে কেমন ফল হবে আপনাদের? কটা আসন পাবেন?

আমরা তো হারব বলে ভোটে দাঁড়াব না। নিশ্চয়ই ভাল ফল হবে। কতগুলো আসন জিতব, তা এখন বলা যাবে না।

সে কী? সিপিএম তো ভোটের পাটীগণিতে বরাবর ভীষণ কৃতী। অথচ আপনার ভাষায় 'চ্যালেঞ্জিং' পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে সেই মেধা প্রয়োগ করতে পারছেন না?

বললাম তো, আমরা অনেকগুলো আসন জিতব পশ্চিমবঙ্গ থেকে।

আরও পড়ুন: 'বিজেপির থেকে ১০০ কোটি টাকা নিয়েছেন প্রকাশ কারাট'!

দশের বেশি?

হ্যাঁ, দশটার বেশি। তার থেকেও বেশি। দশ থেকে কুড়িটার মধ্যে বামেদের আসন সংখ্যা থাকবে। দমদম জেতা সম্ভব, আমি এই জেলায় রাজনীতি করি। বসিরহাট কিছুটা সম্ভব। বনগাঁ সম্ভব। পঞ্চায়েতের ফল তাই বলছে। মাত্র অল্প কিছু ভোটে ওরা আমাদের হারিয়েছে। ভোট হলে তৃণমূল কীভাবে হারবে, তা আপনারা বুঝতে পারছেন না। শুধু দেখুন...

২০১৯-এ 'ভোট হবে' বলে মনে করছেন?

ভোট হবেই। ভোট বন্ধ করতে গেলে দাঙ্গা হবে। রাস্তায় রাস্তায় গৃহযুদ্ধ হবে।

গৌতম দেব কি সাবধান করে দিচ্ছেন?

হ্যাঁ, সাবধান করে দিচ্ছি। গৃহযুদ্ধ হবে। (চরম উত্তেজিত গৌতম দেব। আবারও জোরে জোরে টেবিল চাপড়াচ্ছেন) ভারত বনধের দিন আমরা দেখিয়ে দেব, মমতা যদি ভোট বন্ধ করতে যায় তাহলে কী হবে। যেরকম আমডাঙায় আমাদের মারতে গিয়ে মরেছে, সেরকমই হবে।

আমডাঙায় কাদের মারে কে মারা গিয়েছে?

ভাটপাড়া থেকে গুন্ডা নিয়ে এসে আমাদের মারতে গিয়েছিল। গ্রামবাসীদের মারে ওরাই মারা গিয়েছে। সে রকমই হবে এবার। মমতাও বুঝতে পারছেন, তাঁর দলের অবস্থা ভাল না। কর্মীসভায় তাই তিনি বলেছেন, কর্মীদের মধ্যে সেই লড়াকু ভাব আর নেই।

আরও পড়ুন- ‘বুদ্ধিজীবীদের ওপর ভরসা করে রাজনীতি করা যায় না’

কিন্তু, সেই কর্মীসভাতেও প্রতিপক্ষ হিসাবে আক্রমণের লক্ষ্য আপনারা নন, বিজেপি...

(প্রশ্ন শেষ না করতে দিয়েই...) দরকার নেই মমতার স্বীকৃতির। আমরা জানি আমরা কী করছি। উত্তর ২৪ পরগনায় জেলা পরিষদ তো ওরা জেতেনি। একটা জায়গাতেও ভোট করতে দেয়নি। এটাকে জেতা বলে? দেখুন না, এবার কী হয়।

এটা জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের জেলা। এখানে আপনি ভাল ফল করার কথা ভাবছেন কী করে?

তাতে কী হয়েছে? জ্যোতিপ্রিয় কী করতে পারবে?

মতুয়া ভোটও তো আপনাদের সঙ্গে নেই। তাহলে কীভাবে এতটা আশা করছেন?

মতুয়ারা তো আমাদের সঙ্গেই রয়েছেন। মতুয়া ঠাকুরবাড়ির কিছু আত্মীয় মমতার সঙ্গে রয়েছেন। কেউ কেউ আমাদের সঙ্গেও রয়েছেন। কিন্তু, সাধারণ মতুয়ারা মূলত আমাদের সঙ্গেই। আমি মতুয়াদের নিউটাউনে জমি দিয়েছি। মমতা ভাবছেন, দু'-একবার জ্যোতিপ্রিয়কে পাঠালেই, টাকাপয়সা দিলেই মতুয়া ভোট পকেটে চলে আসবে, ওভাবে হয় না।

সংখ্যালঘুদের মধ্যে আপনাদের গ্রহণযোগ্যতা এখন কেমন?

সংখ্যালঘুরা অতি দ্রুত আমাদের দলে ফিরে আসছেন।

এর জন্য কি বিজেপি-কে ধন্যবাদ জানাবেন?

না, মমতাকে। আর ওই বরকতিকে। সংখ্যালঘুরা কি কুকুর বিড়াল না কী যে টাকা দিলেই চলে যাবে?

সংখ্যালঘুরা আপনাদের কেন ছেড়ে গিয়েছিলেন?

ভুল বুঝেছিলেন। পার্টির মধ্যে কথা বলেছি। তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ, কথাবার্তা কমে গিয়েছিল বলেই এটা হয়েছিল। এখন দ্রুত ফিরে আসছেন। মুসলিমদের মধ্যে আমাদের কাজ এখন আগের তুলনায় আরও ভাল হচ্ছে। এসএফআই-যুবর শীর্ষে মুসলিমদের বসাচ্ছি আমরা। মুসলিম ক্যাডার তৈরি করছি। এভাবেই ওঁদের ভুল ভাঙানো হচ্ছে। মমতা সম্পর্কে ধারণাও স্পষ্ট হচ্ছে ওঁদের।

আরও পড়ুন:‍ একা বিমান টেনে চলেছেন লাল রথ

আপনাদের নয়নের মণি ছাত্রনেতা পরবর্তীকালে সাংসদ ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম যখন যৌন কেলেঙ্কারিতে জড়াল, তখন একদা বাম ছাত্র নেতা গৌতম দেবের ঠিক কী মনে হয়েছিল?

(রীতিমতো অস্বস্তিতে গৌতম দেব। কিছুক্ষণ পর বললেন) এটুকু বলতে পারি, ঋতব্রতর ছবি যখন এক মহিলার সঙ্গে দেখলাম, আমার ভাল লাগে নি।

ঋতব্রতরও পার্টির বিরুদ্ধে বড় অভিযোগ রয়েছে। তিনি বলেছেন, পার্টি তাঁর কথা শোনেনি। ক্যাঙারু কোর্ট বসিয়ে বিচার করে বহিষ্কার করে দিয়েছে। এ ক্ষেত্রে কী বলবেন?

ঋতব্রতকে নিয়ে যে মিটিং হয়েছিল, আমি নিজে সেখানে ছিলাম। ফলে কী হয়েছে না হয়েছে, তা আমি ভালই জানি। ও যা করেছে, তাতে বহিষ্কৃত হতেই হত।

সে কী! ঋতব্রত তো দাবি করেছেন গৌতম দেব তাঁর পক্ষে। তাঁর প্রতি নরম নেতা। অথচ আপনি এ কথা বলছেন?

আমি তো ঋতব্রতকে ভালবাসতাম।

বাসতাম? এখন আর ভালবাসেন না?

না, কী করে ভালবাসব? পার্টির দিক থেকেই যোগাযোগ। সেই ভাবেই ভালবাসতাম। আমি তাকে বহু জায়গায় বক্তৃতা দিতে পাঠিয়েছি। হি ওয়াজ অ্যান ইম্পর্ট্যান্ট কমরেড। পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যপদের জন্যও তার নাম বিবেচনায় ছিল। কিন্তু পদস্খলন হলে কীভাবে ভাল বলব? ঋতব্রত এমপি হয়ে দিল্লি গেল, একা একা থাকত, একটা না দুটো মহিলার সঙ্গে ভাব ভালবাসা করছে, তাদের সঙ্গে ফূর্তি করছে...এই জিনিসগুলো কী করে আমরা মানব?

ঋতব্রতকে বহিষ্কার করার সময় সিপিএম 'অ-কমিউনিস্টসুলভ জীবন যাপনে'র কথা উল্লেখ করেছে। কিন্তু তিনি তো হঠাৎ নেতা হয়ে যাননি। নয়ের দশক থেকে ছাত্র রাজনীতি শুরু করে ধাপে ধাপে সংগঠনের শীর্ষে উঠে এসেছেন। আপনারা তাঁকে কেমন কমিউনিস্ট জীবনবোধ দিলেন যে তিনি দিল্লি গিয়ে সব ভুলে আপনার ভাষায় ফূর্তি করতে শুরু করলেন? এটা কি আপনাদের ব্যর্থতা নয়?

(ফের অস্বস্তিতে গৌতম দেব) সেসব আমি বলতে পারব না। তবে নিশ্চয়ই তার উপর নজর দেওয়া উচিত ছিল। ঋতব্রতর ঘটনাটা খুব সরল ঘটনা নয়। পার্টি নিশ্চিতভাবে এই ঘটনা থেকে শিক্ষা নেবে।

আপনি পার্টির শিক্ষা নেওয়ার কথা বলছেন, অথচ সিপিএম-এ তো 'MeToo' প্রবাহ থামার কোনও ইঙ্গিতই নেই। ঋতব্রতর রেশ কাটতে না কাটতেই সৌমজিৎ রজক-সহ আরেক এসএফআই নেতার নামে ফের একই অভিযোগ।

(গৌতম দেব এই প্রশ্নের কোনও উত্তর দিলেন না। বরং বললেন) এই তো গতকাল সভা করতে গেলাম, আমার পাশে এসএফআই-এর সর্বভারতীয় সম্পাদক, রাজ্য সম্পাদক এবং উত্তর ২৪ পরগনার জেলা সম্পাদক ছিল। তরুণ, উজ্জ্বল ছেলে, দারুণ বক্তব্য রাখল সবাই।

ঋতব্রতও তো উজ্জ্বল ছিলেন। বা বলা ভাল, উজ্জ্বলতর ছিলেন। কী পরিণতি হল?

দেখুন, পার্টি সব ঘটনা থেকেই শিক্ষা নেয়। এই ঘটনা থেকেও শিক্ষা নেবে নিশ্চিতভাবে।

জেএনইউ-এর এসএফআই নেতা প্রসেনজিৎ বোস রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রণব মুখোপাধ্যায়কে সমর্থনের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে দল থেকে সরে গেলেন। একেবারে মতদর্শগত তাত্ত্বিক প্রশ্ন তুলেছিলেন তিনি। আর অন্যদিকে, ঋতব্রতর নামে এই কেলেঙ্কারির অভিযোগ। এই যদি আপনার ছাত্র সংগঠনের দুই শীর্ষ নেতার পরিণতি হয়, তাহলে ছাত্ররা এসএফআই করবে কেন?

আপনি এসে দেখুন না। আমাদের ছাত্রনেতারা কীভাবে জানপ্রাণ দিয়ে লড়ছে। দলে দলে ছেলে-মেয়েরা আসছে। কালী পুজোর সময় স্টলে বই বিক্রি করছে।

আচ্ছা, তা নয় মেনে নিলাম। কিন্তু বলুন, প্রসেনজিৎকে কেন দলে ধরে রাখতে পারলেন না?

তাঁকে নিশ্চই কেউ গ্যাস খাইয়েছিল। দলে সকলের কথাই শোনা হয়, প্রসেনজিৎ-এর কথাও শোনা হয়েছিল।

আপনাদের শেষ পার্টি কংগ্রেসে নজিরবিহীনভাবে কংগ্রেসের সঙ্গে এক লাইনে হাঁটার কথা বলা হয়েছে। রাজ্যের কংগ্রেস নেতৃত্বও জোটসঙ্গী হিসাবে তৃণমূলের চেয়ে আপনাদেরই বেশি পছন্দ করছে। তাহলে কি কংগ্রেসের সঙ্গে জোট হচ্ছে?

আমাদের পার্টি কংগ্রেসে যা কথা হয়েছে, তাতে কংগ্রেসের সঙ্গে এক লাইনে যেতে কোনও সমস্যা নেই। ফলে জোট হলে হতেই পারে।

আরও পড়ুন- ‘আমার অমিত শাহকে ফোন করার প্রয়োজন পড়ে না’

কিন্তু কংগ্রেসের সঙ্গে জোট করেই তো ২০১৬ সালের বিধানসভায় ভরাডুবি হল। আবার জোট করবেন?

২০১৬-তে ভরাডুবি হয়েছে বলেই ২০১৯-এও হবে, এর কি কোনও মানে আছে?

২০১৬-র ভরাডুবির কারণ কী বলে আপনার মনে হয়?

হিমশৈল গলে গেলে যেমন হয়, ২০১৬ সালে সিপিএমের ভোটও সেভাবে কমে গিয়েছিল। সিপিএম এত বড় পার্টি এবং ভোটও এত বেশি যে তাদের ভোটে ধ্বস নামলে, কংগ্রেসের পক্ষে তা সামলানো সম্ভব না। ২০১৬ সালে এবং লোকসভাতেও এটাই হয়েছিল।

হিমশৈল এভাবে গলে গেল কেন?

সেকথা আমরা পার্টির অন্দরে আলোচনা করেছি। আমাদের পার্টির নথিতে তা লেখা হয়েছে। তাই এবার আমরা যত বেশি সম্ভব ভোট পাওয়ার চেষ্টা করছি। আমরা বেশি ভোট পেলেই, স্বাভাবিকভাবে সবার (পড়ুন, জোটের) ভোট বাড়বে।

আপনারা যাই বলুন, সাধারণ বাম ভোটাররা কিন্তু অন্য কথা বলছেন। এক মালা গলায় বুদ্ধবাবু ও রাহুল গান্ধীকে তাঁরা মেনে নিতে পারেননি। আর তাই এই পতন।

না...না। এত আবেগ দিয়ে রাজনীতি হয় না।

কী বলছেন, আবেগ থাকবে না? এই কংগ্রেসের বিরুদ্ধে লড়েই তো '৭৭ সালে ক্ষমতায় এসেছিলেন। আর আজ এক মালা গলায় দিলে আবেগের দোষ?

আমরা কি কংগ্রেসকে অতীতে সমর্থন করিনি? এটা কি নতুন? ব্যাঙ্ক জাতীয়করণের জন্য ইন্দিরা গান্ধীকে সমর্থন করিনি? ভি.ভি. গিরিকে রাষ্ট্রপতি করার জন্য কংগ্রেসকে সমর্থন করিনি?

এই ধরনের সমর্থন আর কলকাতায় এক মালার ভিতর বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য ও রাহুল গান্ধী, দুটিকে এক বলছেন?

আরে, পার্লামেন্টে ফ্লোর কো-অর্ডিনেশন করছি, সনিয়া গান্ধির বাড়িতে জলখাবার খাচ্ছি, সারাদিন বৈঠক করছি কংগ্রেসের সঙ্গে। এসব কি নতুন না কি?

তাহলে আপনি বলছেন, কংগ্রেসের সঙ্গে জোট করে কোনও ক্ষতি হয়নি?

দু-একটা ভোট হয়ত কমেছে। বড় ক্ষতি কিছু হয়নি। আমাদের পার্টির মধ্যেও বেশ কিছু মানুষ কংগ্রেস বিরোধী। তাতে কিছু করার নেই। সেটা ভাল। অনেকদিন ধরে বিরোধিতা করেছি, এটা তো হবেই। সবাইকে বোঝাতে হবে ব্যাপারটা। কারণ, দেশকে বাঁচাতে আমাদের এখন বিজেপিকে ঠেকাতে হবে। সে জন্যই কংগ্রেসের হাত ধরা।

সাড়ে তিন দশকের শাসনে আপনারা পশ্চিমবঙ্গে একটা অসাম্প্রদায়িক বাতাবরণ আনতে পেরেছিলেন বলে অনেকে বলেন। কিন্তু, রাজ্যের ক্ষমতা থেকে বামেদের সরে যাওয়ার এত অল্প সময়ের মধ্যে গেরুয়া রাজনীতি এতটা মাথাচাড়া দিল কীভাবে?

দেখুন, কিছুই ফাঁকা পড়ে থাকে না। রাজনীতিতেও তাই। রাজ্যে তৃণমূল শাসক দল। সিপিএম বিরোধী দল। এই জায়গা থেকে আমাদের ক্ষয় হয়েছে বলেই, বিজেপি ঢুকতে পেরেছে। আর সে জন্যই বিজেপির ভোট কমাতে আমরা এবার উঠে পড়ে লেগেছি।

আরও পড়ুন: “আমাদের তো মোদী আছেন, ওদের?”

যাক, এ ক্ষেত্রে আপনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মূল্যায়ণ মেনে নিলেন। রাজ্যে বিজেপির উত্থান প্রসঙ্গে তাঁর বিশ্লেষণও এটাই।

মতা ব্যানার্জির কথায় কী যায় আসে? মমতা ব্যানার্জিকে তাড়াব। উনি আর কত দিনই বা আছেন ক্ষমতায়? ওঁকে সরিয়ে, যা ব্যবস্থা করার আমরা করব। উনি এই ভোটেই বুঝতে পারবেন। ২০২১ পর্যন্ত রাজ্যে ক্ষমতায় থাকতে পারবেন কী না ঠিক নেই।

রাজারহাট-নিউটাউনের সঙ্গে আপনি অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। জ্যোতি বসুর নামে নাম রাখতে চেয়েছিলেন। কিন্তু বর্তমান সরকার সেই নাম রাখল না। কেমন লাগে?

নাম রাখব তো। ক্ষমতা থেকে সরিয়ে নাম রাখব। মা, ভাইপো, কাকা - এসব নাম চলবে না। রাস্তা করলাম আমি, আর উনি নাম দিচ্ছেন বিশ্ববাংলা সরণি। ওসব নাম ভেঙে দিয়ে, কী নাম দিতে হয়, আমি দেখিয়ে দেব মমতাকে। ইয়ার্কি হচ্ছে? এসব নাম দিয়ে অন্য সরকারের করা কাজের কৃতিত্ব নিতে চাইছেন উনি। এটা বিরাট অন্যায়। মমতা আরও অনেক অন্যায় করছেন। আমরাই তাঁকে এর উচিত শিক্ষা দেব।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার যে বিজেপির রথ আটকাল, সেজন্য প্রশংসা করবেন না?

রথ আটকেছে এখনই বলবেন না। যা করার আদালত করছে। শেষ পর্যন্ত কী হয়, দেখুন। আইন-শৃঙ্খলা খারাপ হবে সে কথা কেবল একজন এসপি বলছেন, বাকি এসপি-রা বলছেন না কেন?

আপনার প্রবল অনিচ্ছা সত্বেও মমতা পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হলে কি চাইবেন তাঁর থেকে?

তৃণমূলেও কেউ এমন কথা কল্পনা করছে না। তবু যদি বলতে বলেন, তাহলে বলব, মিথ্যা কথা কম বলুন।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের শুধু সমালোচনাই করে গেলেন। এবার তাঁর একটা গুণের কথা বলুন।

অনেকের নাম মনে রাখতে পারেন।

আরও পড়ুন: কী বললেন ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়?

সাক্ষাৎকারের শেষ লগ্নে একটা ছোট্ট Rapid Fire, আপনার কাকে পছন্দ সোজাসুজি বলুন:

জ্যোতি বসু না বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য?

জ্যোতি বসু

অনিল বিশ্বাস না বিমান বসু?

অনিল বিশ্বাস

প্রকাশ কারাট না সীতারাম ইয়েচুরি?

সীতারাম ইয়েচুরি

CPIM
Advertisment