কপিল সিব্বল, পি চিদাম্বরমের পর এবার দলের নেতৃত্বের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিলেন প্রবীণ কংগ্রেস নেতা তথা রাজ্যসভার সাংসদ গুলাম নবি আজাদ। দলীয় সংগঠনের সব পদে নির্বাচনের দাবিতে মুখ খুলেছেন তিনি। এই দাবিকে ‘বিদ্রোহ’ না বলে ‘সংস্কারের আর্জি’ বলে জানিয়েছেন গুলাম নবি আজাদ। দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে আজাদ বলেছেন, 'কংগ্রেসের অবস্থা ভালো নয়, কিন্তু তা ভালো করার বিষয়টি আমাদের হাতেই রয়েছে।' তাঁর অভিযোগ, 'দলের নেতারা মানুষের সঙ্গে সংযোগ হারিয়েছেন।'
বিহার ও বিভিন্ন উপনির্বাচনে হার কংগ্রেসের অবস্থা নিয়ে উদ্বেগ কয়েকগুণ বাড়িয়েছে বলে দাবি প্রাক্তন কেন্দ্রীয়মন্ত্রী আজাদের। তবে এর জন্য দলের শীর্ষ নেতৃত্বকে দোষ দিতে নারাজ তিনি। তবে তাঁদের আরও পরিশ্রমি হতে হবে বলে স্মরণ করিয়েছেন আজাদ। তাঁর কথায়, 'ব্লকস্তর থেকে রাজ্য, প্রদেশ কমিটি পর্যায় পর্যন্ত নির্বাচন না হলে কোনও রাজ্যেই ভাল ফল করতে পারবে না কংগ্রেস। পোক্ত সংগঠনের লক্ষ্যে প্রথম দিন থেকেই দলের মধ্যে নির্বাচনকে প্রাধান্য দিয়েছি আমরা। প্রতিটি স্তরে কাজের ধরন না পাল্টালে কংগ্রেসের হাল ফিরবে না। শীর্ষ নেতৃত্বকে পার্টির জন্য কর্মসূচি ঠিক করতে হবে। সমস্ত পদে নির্বাচন করাতে হবে।'
আরও পড়ুন- ‘নেতৃত্বে কোনও সঙ্কট নেই, সবাই জানে সেটা’, সোনিয়ার হয়ে সরব প্রবীণ নেতা
দলের বেশিরভাগ নেতার 'পাঁচতারা সংস্কৃতি'র বিরুদ্ধেও সরব গুলাম নবি আজাদ। তিনি বলেছেন, 'দলের নেতারা সবাই বিলাসবহুল জীবনযাত্রায় অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছেন। টিকিট পেলেই তাঁরা পাঁচতারা হোটেলে চলে যান। রাস্তা খারাপ থাকলে সেদিকে যেতে চান না। এই সংস্কৃতিকে না পালটালে আমরা কখনই ভোটে জিততে পারব না। যেকোনও আঞ্চলিক দল বা বিজেপির মতো ব্লকস্তর পর্যন্ত জনসংযোগ রাখতে হবে, নেতাদের নিচের তলার কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলতে হবে। হোটেলে সময় কাটানোর বদলে মাঠে-ময়দানে ঘুরতে হবে। তা না হলে চরম বিপদ হবে।'
গত অগস্টে গুলাম নবি-সহ কংগ্রেসের ২৩ জন ‘বিক্ষুব্ধ’ নেতা সনিয়া গাঁধীকে চিঠি লিখে কংগ্রেস নেতৃত্বে সক্রিয়তার দাবি তুলেছিলেন। সংগঠনের সব স্তরে নির্বাচনের দাবিও তোলেন তাঁরা। তাঁদের দাবি মেনে কংগ্রেসের সভাপতি পদে নির্বাচনের আয়োজন শুরু হয়েছে। কিন্তু কংগ্রেসের ওয়ার্কিং কমিটি বা নিচু তলার সংগঠনে নির্বাচন হবে কি না, তা এখনও স্পষ্ট নয়।
আরও পড়ুন- ‘কিছু করুন, না হলে আত্মবিশ্লেষণের কোনও মূল্য নেই’, এবার সিব্বলকে তোপ অধীরের
সংগঠনের সব স্তরে নির্বাচনের দাবি তুলে গত অগস্টে গুলাম নবি-সহ কংগ্রেসের ২৩ জন নেতা সনিয়া গাঁধীকে চিঠি লিখে কংগ্রেস নেতৃত্বে সক্রিয়তার দাবি তুলেছিলেন। এরপরই তাঁদের ‘বিক্ষুব্ধ’ বলে দেগে দেওয়া হয়। এ প্রসঙ্গে আজাদ বলেছেন, 'আমরা বিক্ষুব্ধ নই। বিক্ষুব্ধরা বর্তমান নেতৃত্বকে সরিয়ে নিজেরা ক্ষমতায় আসতে আগ্রহী। কিন্তু আমরা সংস্কারের কথা বলছি। সংগঠন পোক্ত করার জন্যই এই ধরণের সংস্কার প্রয়োজনীয়।'
গুলাম নবির সতর্কবার্তা, 'বুথ থেকে পিসি, এআইসিসি পর্যন্ত নির্ভাচন না হলে জাতীয়স্তরে নেতৃত্ব বদলে কোনও লাভ হবে না। রাজীব গান্ধীর মৃত্যুর পর থেকে দলের মধ্যে এই নির্বাচন ব্যবস্থা লোপ পেয়েছে।' কিন্তু অগাস্টে তাঁরা যে দাবি করেছিলেন তা কি দল শুনেছে? বর্ষীয়ান কংগ্রেস নেতার জবাব, 'পাঁচটা দাবি ছিল। দল মেনে নিয়েছে। কোভিডের কারণে তা সম্পূর্ণ বলবৎ করা যায়নি। তবে জদলের সব পর্যায়ে নির্বাচন ছাড়া কোনও কিছুই সম্ভব নয়।' যদিও করোনা কতকাল থাকবে, তার জন্য কি আদৌ কিছু আটকে থাকবে কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তিনি।
Read in English
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন