আগামী ৩ ও ৪ মে মেঘালয়ে যাচ্ছেন তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। ওই রাজ্যে কংগ্রেসের ১২জন বিধায়ক তৃণমূলে যোগ দেওয়ায় সেখানে ঘাসফুল এখন প্রধান বিরোধী দল। ২০২৩-এ মেঘালয়ে বিধানসভা নির্বাচন। সংগঠন বিস্তারে মেঘালয়ে যাওয়ার কথা ঘোষণা করলেও ত্রিপুরার নাম মুখে আনেননি তৃণমূলের যুবরাজ। দীর্ঘ দিন তিনি ত্রিপুরায় যাননি। রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় ত্রিপুরায় তৃণমূলের দায়িত্বে রয়েছেন। তবে ত্রিপুরায় বিধানসভা নির্বাচন কড়া নাড়লেও এখনও ঘর গুছিয়ে উঠতে পারছে না তৃণমূল। রাজ্য কমিটি এখনও ঘোষণা হয়নি। হয়নি রাজ্যদফতরও । সেখানে দলের বড় অংশ হাত গুটিয়ে বসে রয়েছে।
তৃণমূল কংগ্রেসের কাছে ত্রিপুরার মসনদে বসা কী শুধু স্বপ্নই হয়ে থাকবে? ২০২৩ বিধানসভাকে পাখির চোখ করে ২০২১-এ যে ভাবে ত্রিপুরায় ঝাঁপিয়ে পড়েছিল তৃণমূল। তখন রাজ্যের মন্ত্রী, সাংসদ ও বিধায়করা কলকাতা-আগরতলা ডেলিপ্যাসেঞ্জারি করছিলেন। দল সিদ্ধান্ত নিয়েছিল সাংসদ-বিধায়করা নিয়মিত ত্রিপুরা যাবেন। সেই উদ্যোগ এখন উধাও। অথচ এক বছরও দেরি নেই ত্রিপুরায় বিধানসভা নির্বাচন। অলস সময় কাটাচ্ছেন ত্রিপুরা তৃণমূলের একাংশ।
একেই ত্রিপুরার পালস ধরতে পারছে না তৃণমূল। তাছাড়া বাংলার রাজনীতির কৌশল দিয়ে ত্রিপুরা জয় সম্ভব নয় বলেই তাঁরা মনে করছেন। এমনকী এমাসের গোড়ায় আগরতলায় তৃণমূলের মহামিছিলেও তাবড় তৃণমূল নেতৃত্ব হাজির ছিলেন না। ত্রিপুরায় তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্বের বড় অংশকে কোনও রাজনৈতিক কর্মসূচিতে দেখা যাচ্ছে না। তাঁরা কী পরিকল্পনা করছে সেটাই এখন বড় প্রশ্ন। ত্রিপুরায় রাজ্য স্তরে যাঁরা দায়িত্বে রয়েছেন তাঁদেরকেই না-পসন্দ দলের ওই অংশের। একাধিকবার দলবদল করায় নেতৃত্বের ওপর ভরসা রাখছেন না তাঁরা। সোশ্যাল মিডিয়ায় তা ঘোষণা করছেন কেউ কেউ।
দলের একাংশের ক্ষোভ বিজেপির হাতে মারধর খেয়েও কোনও খোঁজ নেয়নি তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব। রাজনৈতিক মহলের মতে, বিপদে-আপদে দল যদি পাশে না থাকে তাহলে স্থানীয় নেতা-কর্মীদের মনোবল তলানিতে ঠেকে যায়। এমনকী মারধর খেলেও হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর দলের প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি আশিসলাল সিংয়ের খোঁজও নেওয়া হয়নি বলে জানা গিয়েছে। দলের ওই অংশের দাবি, কলকাতার নেতৃত্ব মার খেলেই তার ব্যাপক প্রচার হয়েছে। এসএসকেএম হাসপাতালে দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গিয়ে তাঁদের দেখে এসেছেন। ত্রিপুরার স্থানীয় নেতৃত্বের খোঁজ না নেওয়া অথচ কলকাতার নেতা-নেত্রীদের কিছু হলেই ব্যাপক প্রচার হওয়ায় অসন্তুষ্ট দলের নেতা-কর্মীরা।
আরও পড়ুন- ‘রাজ্য নেতৃত্ব অপরিণত’, দল হারতেই তোপ সৌমিত্র খাঁর, বহিষ্কৃতদের দলে ফেরানোর আর্জি
অন্যদিকে, জনজাতিদের গুরুত্ব না দিলে ত্রিপুরায় সেই দলের ক্ষমতায় আসা প্রায় অসম্ভব বলেই মনে করে ত্রিপুরা তৃণমূলের বড় অংশ। আশিসলাল সিং দলের কাছে দীর্ঘ দিন ধরে দাবি জানিয়ে আসছেন ত্রিপুরায় আদিবাসী সম্প্রদায় থেকে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী করুক দল। আদিবাসীদের সমর্থন পেলে সেখানে সরকার গড়া সহজ হবে বলেই তাঁর ধারনা। নচেৎ সরকার গড়ার কথা না ভাবাই ভাল।
কিন্তু ত্রিপুরায় তৃণমূলের সেভাবে নড়ন-চড়ন না দেখে অসহায় হয়ে পড়েছেন দলের একাংশ। বিজেপি থেকে তৃণমূলে যোগ দিলেও প্রাক্তন বিধায়ক আশিস দাসকে তৃণমূলের কোনও কর্মসূচিতে অংশ নিতে দেখা যাচ্ছে না। মহামিছিলে তিনিও হাঁটেননি। ত্রিপুরা তৃণমূলের একাংশ আবার ত্রিপ্রা মথার সংগঠনের শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলেছেন বলে খবর। তাঁরা তাকিয়ে রয়েছেন দলের শীর্ষ নেতৃত্ব সংগঠন সাজাতে কাদের ওপর দায়িত্ব দেয় সেদিকে।