ভরসা নেই রাজ্য পুলিশে, তাই কি কেন্দ্রীয় বাহিনীর নিরাপত্তা কর্মীদের বেষ্টনীতে থাকতে চাইছেন রাজ্যের সাংবিধানিক প্রধান জগদীপ ধনকড়? জানা যাচ্ছে, এবার থেকে কলকাতা পুলিশ নয়, রাজ্যপালের নিরাপত্তায় থাকতে চলেছে সিআরপিএফ। এমন প্রস্তাবই দিয়েছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক। তবে রাজ্যপালের এই নয়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে ফের তোলপাড় বঙ্গ রাজনীতি। রাজ্যপালের নিরাপত্তার এই সিদ্ধান্তে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে রাজনৈতিক মহলে। প্রবীণ তৃণমূল নেতা তথা পঞ্চায়েত মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় বলেন, "আমি পঞ্চাশ বছরের বিধায়ক, এর আগে কোনও দিন শুনিনি কোনও রাজ্যপাল নিরাপত্তার অভাব বোধ করেছেন। উনি তো নিজেই সাংবিধানিক প্রধান। চাইলেই এখানে সবরকম নিরাপত্তা পেতে পারেন। কেন যে দিল্লিতে গিয়ে ওভারটেক করে এটা করলেন তা উনিই বলতে পারবেন।"
আরও পড়ুন: রাজ্যপালের নিরাপত্তা নিয়ে নজিরবিহীন সিদ্ধান্ত
এদিকে রাজ্যপালের নিরাপত্তার সিদ্ধান্ত নিয়ে খুশি রাজ্য বিজেপির সভাপতি দিলীপ ঘোষ। গান্ধী সংকল্প যাত্রার পদযাত্রা থেকেই দিলীপ ঘোষ বলেন, "আমাদের মুখ্যমন্ত্রী রেলমন্ত্রী থাকাকালীন এবং তার পরেও পাঁচ বছর আরপিএফের নিরাপত্তা নিয়েছিলেন। রাজ্যপালকে যদি কেন্দ্রীয় সুরক্ষা দেওয়া হয়, খুবই ভালো। এখানকার পুলিশের উপর যদি মুখ্যমন্ত্রীর ভরসা না থাকে তো রাজ্যপালকে কীভাবে সুরক্ষা দেবে? যাদবপুরে যা হয়েছে, যেভাবে অপমান করা হয়েছে রাজ্যপালকে, তা আমরা সবাই দেখেছি। এরকম একজন সম্মানীয় ব্যক্তির অবশ্যই কেন্দ্রীয় সুরক্ষার প্রয়োজন আছে।"
একই সুর শোনা গেল বিজেপি নেতা মুকুল রায়ের গলাতেও। তিনি বলেন, "বাংলায় কোনও গণতন্ত্র নেই, গণতন্ত্রকে হত্যা করা হচ্ছে এখানে। বাংলায় কোনও মানুষের কোনও নিরাপত্তা নেই। এই রাজ্যে রাজ্যপালকে ডেকে অপমান করা হয়। কেন্দ্রীয় সরকার এই সিদ্ধান্ত নিয়ে ঠিকই করেছে।"
আরও পড়ুন: অর্জুন-গড় হাতানোর হুঁশিয়ারি মমতা বাহিনীর, ভাটপাড়া পুনর্দখলের পথে তৃণমূল!
রাজ্যপালের এই নয়া নিরাপত্তা ব্যবস্থার সিদ্ধান্তে রাজ্যের আইন শৃঙ্খলা নিয়ে তোপ দেগেছেন কংগ্রেস সাংসদ প্রদীপ ভট্টাচার্য। প্রশ্ন তুলেছেন সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা নিয়ে। প্রবীণ এই রাজনীতিক বলেন, "রাজ্যের যিনি প্রধান, তাঁকে যদি কেন্দ্রীয় পুলিশ বাহিনীকে রক্ষা করতে হয়, তার মানে এটাই প্রমাণিত হয় যে রাজ্যের আইন শৃঙ্খলা, বিচারব্যবস্থার উপর রাজ্যপালের কোনও আস্থা নেই। এখন রাজ্যপালেরই যদি আস্থা না থাকে তাহলে রাজ্যের সাধারণ মানুষদের আস্থা থাকবে কীভাবে? এ রাজ্যে আইন শৃঙ্খলা চরমভাবে ভেঙে গুঁড়িয়ে গেছে, এর থেকে বড় নিদর্শন আর কিছুই হতে পারে না।" এরপরই মমতা সরকারকে নিশানা করেন বর্ষীয়ান এই কংগ্রেস নেতা। তিনি বলেন, "আমি এটা বুঝতে পারছি না, রাজ্যপালকে বাঁচানোর জন্য কেন্দ্রীয় বাহিনী পাঠাচ্ছে কেন্দ্র সরকার, কিন্তু বাংলার মানুষকে বাঁচানোর জন্য কেন কেন্দ্রীয় বাহিনী পাঠানো হচ্ছে না?"
অন্যদিকে, সিপিআইএম নেতা মহম্মদ সেলিম বলেন, "মমতাও তো দীর্ঘদিন কেন্দ্রীয় পুলিশ নিয়েছিলেন। এরা একই বইয়ের আলাদা পাতা মাত্র। বিজেপির খাতায় নাম তুলেই সবাই কেন্দ্রীয় বাহিনী নেয়। মমতা খাতায় নাম না তুলেও কেন্দ্রীয় বাহিনী নিয়েছিলেন। আমাদের রাজ্যের দুর্ভাগ্য।"