Advertisment

তৃণমূলে বাম-সংক্রমণ, থমকে ছাত্র-যুবরা, প্রকট বৃদ্ধতন্ত্রের থাবা

তরুণ-তুর্কী নেতার আগমন হলেও ক্ষমতার দম্ভে তখন নতুন প্রজন্মকে বা ধারাবাহিক নেতৃত্ব তুলে আনেনি কোনও বামদলই। একই পরিস্থিতি কী এখন তৃণমূল কংগ্রেসে?

author-image
Joyprakash Das
New Update
No violence to be Mamata Banerjees message at party meet

তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

বৃদ্ধতন্ত্র না ছাত্র-যুব প্রাধান্য। রাজনৈতিক ক্ষেত্রে আদি-নব্য়, মাদার-যুব, বয়স্ক-যুব নানান ক্ষমতাকেন্দ্রীক মতবিরোধ জারি থাকে। একটা বিতর্ক ছিলই দেহত্য়াগ না করলে পদত্য়াগ করে না। দিনের পর দিন দলীয় পদ আগলে থাকার ঘটনা প্রায় সর্বত্রই রয়েছে। দীর্ঘ দিন বামেরা শাসন করেছে এরাজ্যে। দলে বহু তরুণ-তুর্কী নেতার আগমন হলেও ক্ষমতার দম্ভে তখন নতুন প্রজন্মকে বা ধারাবাহিক নেতৃত্ব তুলে আনেনি কোনও বামদলই। একই পরিস্থিতি কী এখন তৃণমূল কংগ্রেসে? রাজনৈতিক মহলের মতে, ২০২১ বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেসের ছাত্র-যুবদের লড়াই নজর কেড়েছিল রাজনৈতিক মহলের। পরবর্তীতে ত্রিপুরা অভিযানেও তাঁদের সফল অংশগ্রহণ ছিল। সেখানে তৃণমূলের প্রচার তুঙ্গে তুলেছিল ছাত্র-যুবরা। কিন্তু শেষমেষ দলে বৃদ্ধতন্ত্রের আধিপত্য় আরও বৃদ্ধিই পেল। যদিও তৃণমূল নেত্রীর বক্তব্য়, দলে পুরনো ও নতুনরা একযোগে কাজ করবে।

Advertisment

অভিষেক বন্দ্য়োপাধ্য়ায়ের ডায়মন্ডহারবার লাইন বা ব্য়ক্তিগত মন্তব্য়ের পর তৃণমূল কংগ্রেসে ঝড় উঠেছিল। শ্রীরামপুরের সাংসদ কল্য়ান বন্দ্যোপাধ্যায় সরাসরি বলেছিলেন এটা কখনও ব্য়ক্তিগত মন্তব্য হতে পারে না। তিনি নেত্রী হিসাবে মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায়কেই মানেন, আর কাউকে না। এরপর এবিষয়ে বিতর্ক আরও বাড়তে থাকে। তৃণমূলের সমস্ত কমিটি ভেঙে শুধু জাতীয় কর্মসমিতি গঠন করেন দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই কমিটিতে কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়কে রাখা হয়নি। পরে অবশ্য সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক পদে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নামই ঘোষণা করা হয়। কিন্তু পুরনোদের ফের তাঁদের পদে ফেরানো হয়। উত্তর কলকাতায় সভাপতি পদ পান সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়।

নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক রাজ্য তৃণমূলের যুব নেতা বলেন, 'কার্যক্ষেত্রে যুবদের তেমন রাজনৈতিক কর্মসূচি হচ্ছে না। পথে নেমে আন্দোলন নেই। এমনকী সোশাল মিডিয়ায় যেভাবে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলাম, তাও আপাতত শিকেয় উঠেছে।' কল্য়ান ইস্য়ুতে দেখা গিয়েছিল একাধিক যুবনেতা ফেসবুকে কটাক্ষ করে পোস্ট করেছিলেন। কবির ভাষায় শিরদাড়া সোজা রাখার কথা বলে নিজের অবস্থানে অনড় ছিলেন শ্রীরামপুরের সাংসদ। আসানসোলে উপনির্বাচনে দেখা গেল তৃণমূল প্রার্থী বিহারীবাবুকে সঙ্গ দিচ্ছেন কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়।

২০২১ বিধানসভা নির্বাচনে সর্বশক্তি দিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল গেরুয়া শিবির। প্রতিষ্ঠিত তৃণমূল নেতাদের একটা অংশ ঘাসফুল শিবির ছেড়ে পদ্মশিবিরে যোগ দিয়েছিলেন। বিজেপি প্রার্থী হওয়ার পর তৃণমূল প্রার্থীদের কাছে গোহারা হেরেছেন বেশিরভাগ তথাকথিত প্রাক্তনী তৃণমূলী বড় নেতারা। নির্বাচন মিটতেই তাঁরা ফিরে এসেছেন ঘাসফুল শিবিরে। রাজনৈতিক মহলের মতে, বিধানসভা ভোটের কঠিন লড়াইয়ে রাস্তায় নেমে তৃণমূলকে জাগিয়ে রেখেছিলেন ছাত্র-যুবরা। বিজেপির সোশাল মিডিয়ার সঙ্গে সেয়ানে সেয়ানে টক্কর দিয়েছিলেন তৃণমূলের যুববাহিনী। দাঁতে দাঁত চিপে লড়াই করেছিল যুব শক্তি। এই মুহূর্তে তৃণমূলের যুব বাহিনীর সেই উদ্য়োগ পরিলক্ষিত হচ্ছে না। এমনকী পরশি রাজ্য ত্রিপুরায় এবার মাটি কামড়ে লড়াই করেছে সেই যুববাহিনীই। অথচ যাঁরা বিজেপি থেকে ঘরে ফিরল তাঁরা ফের নানা পদে অভিষিক্ত হয়ে গেল, দলে গুরুত্ব পেল।

সিপিএম ক্ষমতা হারানোর আরও ১০ বছর পর একঝাঁক ছাত্র-যুব নেতাদের ওপর ভরসা রাখতে শুরু করেছে। এবার রাজ্য় কমিটিতে বহু অল্পবয়সী নতুন মুখকে তাঁরা স্থান দিয়েছে। টানা তিনবারের জন্য় ক্ষমতায় এসেছে তৃণমূল কংগ্রেস। রাজনৈতিক মহলের মতে, নতুন মুখ তুলে আনার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল তৃণমূল কংগ্রেসে। ধারাবাহিক ভাবে নেতৃত্ব তৈরি না রাখলে কোনও একটা সময় সংকট দেখা দিতে পারে বলে মনে করছে অভিজ্ঞ মহল। তা হারে হারে টের পেয়েছে বামেরা। অভিজ্ঞ মহল মনে করছে, সাম্প্রতিক রাজ্যের নানান ইস্যুতে বিরোধীরা যখন চেপে ধরেছে দলকে তখন তৃণমূলের যুব শক্তি অনেকটাই নিস্পৃহ।

tmc Mamata Banerjee abhishek banerjee
Advertisment