হাথরাসে গণধর্ষণ ও নির্মম অত্য়াচারে দলিত তরুণীর মৃত্য়ুর ঘটনায় বিজেপির 'ফেস লেস' হয়েছে, একথা বলছেন পদ্মশিবিরের সাংসদেরাই। যোগীরাজ্য়ে দলিত পরিবারের কন্য়াকে গণধর্ষণের ঘটনা ঘিরে তোলপাড় জাতীয় রাজনীতি। কংগ্রেস-সহ বিরোধীদের আক্রমণের তির সামাল দিতে রীতিমতো হিমশিম গেরুয়া শিবির। এই প্রেক্ষাপটে বিজেপির দলিত সাংসদদের গলায় কার্যত দলের 'আত্মসমালোচনার' সুর শোনা গেল।
গভীর রাতে পরিবারকে না জানিয়েই হাথরাসের নির্যাতিতার শেষকৃত্য় করা হয়েছে বলে পুলিশের বিরুদ্ধে মারাত্মক এই অভিযোগ এ ঘটনায় ঘৃতাহুতি করেছে। সেই প্রসঙ্গ টেনে কৌশাম্বির সাংসদ বিনোদ কুমার সোনকর বললেন, পুলিশের এহেন আচরণ 'নিন্দনীয়'। বিজেপির এসসি মোর্চার মাথা সোনকরের কথায়, ''এ ঘটনায় নিশ্চিতভাবে রাজ্য় ও সরকারের ভাবমূর্তি ধাক্কা খেয়েছে। রাজনৈতিকভাবে আমাদের ক্ষতি হচ্ছে। এটা আমাদের জন্য় ফেস লস। কিন্তু পররিবারটি যাতে সুবিচার পায়, সেটার জন্য় আপ্রাণ চেষ্টা করে চলেছে রাজ্য় সরকার''।
পুলিশের ভূমিকায় 'অসন্তোষ' প্রকাশ করে তিনি আরও যোগ করেছেন, ''এটা এমন কোনও ইস্য়ু নয় যে গত কয়েক বছর ধরে তৈরি হয়েছে। এটা কিছু সময় ধরেই রয়েছে। এ রাজ্য়ে পূর্বতন সপা ও বসপা সরকার জাতের নামে পুলিশ ও আমলা স্তরে পদ বিলিয়েছে। এমনকি, আমাদের মধ্য়ে কয়েকজন মুখ্য়মন্ত্রীকে জানিয়েছেন যে, যাঁরা এখনও ওই দলগুলোর আনুগত্য়ে রয়েছেন, তাঁরা বিজেপি ও সরকারের বদনাম করছেন''।
আরও পড়ুন: হাথরাসে জারি ১৪৪ ধারা, নির্যাতিতার পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছেন রাহুল-প্রিয়াঙ্কা
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক দলিত সাংসদ বলেছেন, বিহার নির্বাচনের মুখে হাথরাসের ঘটনায় দলের প্রত্য়াশা হোঁচট খেতে পারে। উত্তরপ্রদেশ পুলিশের বিরুদ্ধে সরাসরি অভিযোগ জানিয়ে মোহনলালগঞ্জের সাংসদ কওশল কিশোর বলেছেন, ''দলিত ও গরিবদের হেনস্থা করছে পুলিশ। এই পুলিশকর্মীদের শাস্তি দেওয়া উচিত সরকারের। আমার দৃঢ় বিশ্বাস যে এই সরকার অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করবে''।
বারাবাঁকির সাংসদ উপেন্দ্র সিং রাওয়াতের গলাতেও নিন্দার সুর। তিনি বলেছেন, ''এ ঘটনা নিন্দনীয়। এটা শুধুমাত্র একটা দলিত মেয়েকে নিয়ে নয়, এমনটা কারও সঙ্গেই হওয়া কাম্য় নয়। আমি নিশ্চিত যে, সরকার কাউকে রেয়াত করবে না। সে পুলিশকর্মী হোক বা অন্য় কেউ''। তাঁর আরও সংযোজন, ''যখন নির্যাতিতা একজন দলিত বা নিচুজাতের হয়, তখন বিচার পাওয়া বা পদক্ষেপ করা অনেক সময় বিলম্বিত হয়। কারণ, তাঁরা দুর্বল। যদি অভিযুক্তরা শাস্তি না পয়, তাহলে সরকারের ফেস লস হবে''।
আরও পড়ুন: “আমরা দলিত, এটাই আমাদের অপরাধ”
আরেক সাংসদ অশোক কুমার রাওয়াত বলেছেন, ''অভিযুক্তদের শাস্তি হোক, সে পুলিশ হোক বা অন্য় কেউ। আমাদের জানা দরকার, কেন ও কীভাবে এমনটা ঘটল''।
হাথরাসের ঘটনাকে হাতিয়ার করে ইতিমধ্য়েই পথে নেমেছেন রাহুল গান্ধী, প্রিয়াঙ্কা গান্ধীরা। উত্তেজনার আঁচ পেয়েই বুধবার এ ঘটনায় বিশেষ তদন্তকারী দল (সিট) গঠনের কথা ঘোষণা করেছেন যোগী আদিত্য়নাথ।ফাস্ট-ট্র্য়াক কোর্টে দ্রুত মামলার শুনানি শুরুরও নির্দেশ দিয়েছেন যোগী। 'হাথরাসে গণধর্ষণকাণ্ডে দোষীদের কঠোর সাজা দেওয়া হবে', বুধবার ভিডিও কলের মাধ্য়মে নির্যাতিতার বাবার সঙ্গে কথা বলে এমন আশ্বাসই দিয়েছেন উত্তরপ্রদেশের মুখ্য়মন্ত্রী। পাশাপাশি, নির্যাতিতার পরিবারকে ২৫ লক্ষ টাকার আর্থিক সাহায্য়, একটি বাড়ি ও পরিবারের একজনকে চাকরি দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছে যোগী সরকার।
Read the full story in English
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন