২০১৯ এর পর ২০২৪। ফের ৪২-এ-৪২ এর ডাক দিলেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই স্লোগানকে সামনে রেখে ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনে বাংলায় লড়াই করেছিল তৃণমূল কংগ্রেস। যদিও তখন শিকে ছেড়েনি তৃণমূলের। বরং আসন কমে গিয়েছিল, ২২জনকে সংসদে পাঠাতে সক্ষম হয়েছিল ঘাসফুল শিবির। এরাজ্য়ে বিজেপির ঝুলিতে গিয়েছিল ১৮টি লোকসভার আসন। কিন্তু কেন ফের ৪২-এ-৪২ এর কথা বললেন তৃণমূলনেত্রী? অভিজ্ঞ মহল আজকের রাজনীাতির প্রেক্ষাপটে নানান ইকুয়েশন খুঁজে বেরাচ্ছে।
একবার হয়নি বলে লক্ষ্য থেকে সরে যাওয়ার রাজনীতিক যে তিনি নন সেকথাও জানিয়ে দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়। ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনে ঢাকঢোল পিটিয়ে প্রচারে নেমেছিল তৃণমূল কংগ্রেস। মূল স্লোগানই ছিল ৪২-এ-৪২। রাজনৈতিক মহলের মতে, তখনকার বাংলার রাজনৈতিক পরিস্থিতির সঙ্গে এখন রাজনৈতিক আবহে বিস্তর ফারাক রয়েছে। চলতি রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনা করলে রাজ্যে ভবিষ্যতের নির্বাচনে তৃণমূলের ফায়দাই দেখছে অভিজ্ঞ মহল। তবে বেশ কিছু কিন্তুও রয়ে গিয়েছে।
২০১৮ পঞ্চায়েত ভোটকে কেন্দ্র করে বিস্তর অশান্তির অভিযোগ উঠেছিল। ভোটের দিন বহু সাধারণ নাগরিককে গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ করতে না দেওয়ারও অভিযোগ উঠেছিল রাজ্যের নানা প্রান্ত থেকে। তার পরের বছরই ছিল লোকসভা নির্বাচন। সেই পরিস্থিতিতে ভোট হওয়ায় বাড়িত ফায়দা পেয়েছিল গেরুয়া শিবির। অনেক কেন্দ্রেই ঘাসফুল শিবির থেকে মুখ ঘুরিয়ে নিয়েছিল ভোটাররা। তাছাড়া মোদী হাওয়াও অনেকটা প্রভাব ফেলেছিল। ২০১৯ লোকসভাকে টার্গেট করে রথযাত্রা নিয়েও হইচই বাঁধিয়ে দিয়েছিল গেরুয়া শিবির। যদিও সেই রথযাত্রা বন্ধ রাখতে হয়েছিল। তবে গত বছর বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির ভোটের রথ সেভাবে দাগ কাটতে পারেনি।
আরও পড়ুন- ‘রাজ্যপাল ফোন করেন?’, মমতার কড়া নজরে শুভেন্দুর জেলার পুলিশ সুপার
রাজনৈতিক মহলের মতে, গত লোকসভা নির্বাচনে দলের অন্দরের বিভীষণদের সনাক্ত করতে পারেনি তৃণমূল কংগ্রেস। দলের বহু নেতা-নেত্রী গেরুয়া শিবিরে যোগ না দিয়েও তাঁদের সাহায্য করেছিল বলে অভিযোগ। তৃণমূল থেকে বিজেপিতে যোগ দিয়ে ব্যাপক সক্রিয় ছিলেন তৃণমূলের একসময়ের সেকেন্ড ইন কমান্ড মুকুল রায়। তাঁকেই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল নির্বাচন পরিচালনা করার। রাজনৈতিক মহলের একাংশের মতে, তৃণমূল থেকে বিজেপিতে যোগ দিতে চাওয়া নেতৃত্বকে বলা হয়েছিল দল বদলানোর দরকার নেই। ওখানে থেকেই ভোট করালে সব থেকে ভাল। সকলে দল বদলালে চিহ্নিত হয়ে যাবে। তৃণমূল সতর্কতা অবলম্বন করতে পারবে না। অভিজ্ঞ মহলের মতে, তার ফল যা হওয়ার হয়েছিল। এবার অন্তত সেই পরিস্থিতি নেই বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
২০২১ বিধানসভা নির্বাচনের আগে তৃণমূল থেকে বিজেপিতে যাওয়ার হিড়িক পড়ে যায়। কে কোন দলের প্রার্থী হচ্ছেন বোঝাই দায় হচ্ছিল। চার্টার্ড ফ্লাইটের দৌরাত্ম্য প্রত্যক্ষ করেছে এই রাজ্য। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বাংলা যা কোনও দিন দেখেনি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সর্বময় নেত্রী হলেও অভিষেকের বিরুদ্ধে দলের একাংশের ক্ষোভ জমতে থাকে। পিকের টিমের বিরুদ্ধাচারণও শুরু হয় প্রকাশ্যে। দলের অন্য়তম নেতা শুভেন্দু অধিকারী বিজেপিতে যোগ দেন। কার্যত তৃণমূলে মমতা ও অভিষেকের বিরুদ্ধে দলের বাইরে বা ভিতরে বলার লোক আর নেই। ব্যক্তিগতভাবে আক্রমণ শানানোর পর দলের নির্দেশে মুখবন্ধ করতে হয়েছে শ্রীরামপুরের সাংসদ কল্যান বন্দ্যোপাধ্যায়কে। দল এখন পুরোপুরি কালীঘাট মুখী।
বিভীষণরা না থাকলে সাধারণ ভাবে কোনও লড়াই করা সহজ না হলেও আতঙ্ক থাকে না। তবে চলতি বছরের শতাধিক পুরসভা ও ২০২৩ পঞ্চায়েত নির্বাচনে কী পরিস্থিতি তৈরি হয়, তা ফের ফ্যাক্টর হতে পারে বলে রাজনৈতিক মহল মনে করছে। বিজেপির সাংগঠনিক হাল দেখে ফের ৪২-এ-৪২ স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে তৃণমূল। উত্তর পেতে অপেক্ষা করতে হবে ২ বছর।