ভোটেরর ফলাফল প্রকাশের কয়েক ঘন্টা পর থেকেই রাজ্য বিজেপিতে ভাটার টান। তৃণমূল থেকে পদ্মবনে নাম লেখানো অধিকাংশ নেতা-নেত্রীরাই 'বেসুরো'। যে গতিতে তাঁরা ভোটের আগে ফুল বদল করেছিলেন, তার দ্বিগুণ গতিতে এবার ফিরতে চাইছেন তৃণমূলে। আর সবাইকে ছাপিয়ে গিয়েছেন মুকুল রায়। গত শুক্রবারই সপুত্র তাঁর ঘরওয়াপসি ঘটেছে। শনিবার মুকুল অনুগামী বিজেপি বিধায়ক, নেতারাও আকারে-ইঙ্গিতে গেরুয়া শিবির ত্যাগের জল্পনা উস্কে দিয়েছেন। জেট ফ্লাইটে দিল্লিতে গিয়ে বিজেপিতে যোগ দেওয়া রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়েও শনিবার তৃণমূল রাজ্য সম্পাদকের সঙ্গে দেখা করেছেন। ক্রমেই অস্বস্তি বাড়ছে বিজেপির। এই পরিস্থিতে তৃণমূলের বিরুদ্ধে দল ভাঙানোর অভিযোগ করেছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। কড়া হুঁশিয়ারি তাঁর গলায়। বললেন, 'বাংলায় দলত্যাগ বিরোধী আইন কার্যকর করবই। আইন মেনেই দলবদল করতে হবে।'
কী বলেছেন শুভেন্দু অধিকারী?
মুকুল রায়ের দল বদল প্রসঙ্গে বলতে গিয়েই রাজ্য সরকার ও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিশানা করেন শুভেন্দু অধিকারী। তৃণমূল ও মমতা অন্য দল ভাঙানোর চেষ্টা সবসময় করেন বলে অভিযোগ তাঁর। এই পদক্ষেপকে তৃণমূলের 'রোগ' বলেও দেগে দেন বিরোধী দল নেতা। শুভেন্দুর অভিযোগ, মুখ্যমন্ত্রী ও রাজ্য সরকার গণতন্ত্র মানে না। বাংলায় বিরোধীদের অস্তিস্ত সহ্য করতে পারেন না তৃণমূল। তবে মুকুল রায়ের দল বদলে বিজেপির কোনও ক্ষতি হবে না বলেও জানিয়েছেন শুভেন্দু। তিনি বলেছেন, 'বিজেপি ব্যক্তিকেন্দ্রিক নয়, বিচারধারা ও আদর্শে কেন্দ্রীক দল। তাই ক্ষতির কোনও প্রশ্নই ওঠে না। আমি চিন্তিত নই। এ নিয়ে দলের তরফে দিলীপ ঘোষ, জয়প্রকাশ মজুমদার যা বলেছেন। সেটাই দলের সবার মত।'
আরও পড়ুন- মুকুলের পর তৃণমূলে রাজীব? জল্পনা বাড়িয়ে কুণালের বাড়িতে বিজেপি নেতা
এরপরই দলত্যাগ নিয়ে কার্যত হুঁশিয়ারির সুর শুভেন্দুর গলায়। তিনি বলেছেন, 'কে যাবে না যাবে সেটা বড় কথা নয়। মাননীয়া ও তাঁর দল শুনে রাখুন স্পিকার হাতে থাকায় দলত্যাগ বিরোধী আইন কার্যকর হয়নি। আমি বিরোধী দলনেতা হিসেবে দায়িত্ব নিয়ে বলছি, পদ্ধতি জানি। আমি কার্যকর করে দেখাব। ২-৩ মাস লাগতে পারে। দলত্যাগ বিরোধী আইন মেনে দলবদল করতে হবে।'
দলবদল প্রসঙ্গে তৃণমূলের অতীত ও বর্তমান টার্গেট নিয়েও সরব শুভেন্দু। তাঁর কথায়, '২০১২ সাল থেকে বিধায়ক ভাঙানো ও বিরোধী দলকে শেষ করা শুরু করেছেন মাননীয়া। আগে কংগ্রেস ও সিপিএম টার্গেট ছিল। আর এখন টার্গেট বিজেপি। ওটা ওঁর দীর্ঘদিনের রোগ। মাননীয়া তাঁর রাজত্বে কোনও বিরোধী শক্তিকে রাখতে চান না। গণতন্ত্র মানেন না। সে জন্য স্কুল পরিচালন কমিটি, কলেজের ছাত্র সংসদ নির্বাচন তুলে দিয়েছেন। ১১০টা পুরসভায় নির্বাচন হয়নি। পঞ্চায়েত ভোটে নামে প্রহসন ও লুঠ হয়েছিল।' বিরোধী দলনেতার প্রশ্ন, মানস ভুঁইয়ার মতো যাঁরা দলত্যাগ করে তৃণমূলে নাম লিখিয়েছিলেন কেন তাঁদের বিরুদ্ধে দলত্যাগ বিরোধী আইন কার্যকর হয়নি?
আরও পড়ুন- ‘আমরা কী গরু-ছাগল, কিছুই বুঝি না’, রাজীব-কুণাল বৈঠক প্রসঙ্গে বিস্ফোরক কল্যাণ
ক্ষমতায় আসার পর গত ১০ বছরে বাম ও কংগ্রেসের টিকিটে নির্বাচিত হয়েও একাধিক বিধায়ক তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। কিন্তু বিধানসভায় তাঁরা পদত্যাগ করেননি। ফলে খাতায় কসমে তাঁরা থেকে গিয়েছেন পুরনো দলের বিধায়কই। তৃতীয়বার তৃণমূল ক্ষমতায় আসতেও শুরু হয়েছে বিধায়কদের দলবদল। মুকুল রায় এখনও বিধানসভায় পদ্ম ফুলের বিধায়ক। ইস্তফা দেননি তিনি। দলবদলের এই পদ্ধতি নিয়েই এবার তৃণমূলের বিরুদ্ধে তোপ দাগতে মরিয়া শুভেন্দু অধিকারীরা।
শুভেন্দুর হুঁশিয়ারির পরই এই ইস্যুতে মুখ খুলেছেন তৃণমূলে রাজ্য সম্পাদক কুণাল ঘোষ। তিনি বলেছেন, 'শিশির অধিকারী সংসদে তৃণমূলে সাংসদ, কিন্তু যোগ দিয়েছেন বিজেপিতে। তিনি কেন পদত্যাগ করেছেন না? আগে সেই প্রশ্নের উত্তর দিন শুভেন্দ অধিকারী।'
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন