২০১৮-তে রামনবমীর দিন অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠেছিল আসানসোল শিল্পাঞ্চল। গোষ্ঠী সংঘর্ষে প্রাণ গিয়েছিল তিনজনের। আসানসোলের এক মসজিদের ইমাম মৌলানা ইমদাদুল্লাহ রশিদি হারিয়েছিলেন তাঁর ১৬ বছরের তরতাজা সন্তানকে। পুত্রশোকে কাতর হয়েও সংঘর্ষ বন্ধের আর্জি জানিয়েছিলেন আসানসোলবাসীকে। তখন আসানসোলে সাংসদ ছিলেন বিজেপির বাবুল সুপ্রিয়। ইমাম রশিদি বলেছিলেন, দু'পক্ষকে নিয়ে সাংসদ বৈঠকে বসলে সমস্যা মিটে যেত।
বাবুল সুপ্রিয় শিবির বদল করতেই বিরোধী পক্ষ নানা তোপ দাগছে। কেউ বলছেন সুবিধাবাদের রাজনীতি, কেউ বলছেন চাওয়া-পাওয়ার 'ডিল' হয়েছে। বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূলের বিরুদ্ধে ভোটরাজনীতির থিম সং গেয়েছিলেন গায়ক সাংসদ বাবুল। রাজনীতি ছাড়লেও তৃণমূলে যাবেন না, এমন নানান কথা তিনি নিজেই ঘোষণা করেছিলেন। এসব বিষয় নিয়ে সমালোচনা চলছেই। কিন্তু কী বলছেন দাঙ্গায় পুত্রহারানো আসানসোলের ইমাম?
বাবুল বিজেপি ছেড়ে তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দেওয়া নিয়ে মৌলানা ইমদাদুল্লাহ রশিদি ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলাকে বলেন, 'মানুষ যেখানে খুশি যেতে পারে যেখানে খুশি থাকতে পারে। এই নিয়ে আমার বলার কিছু নেই। যে রাজনীতি করে তাঁর কোনও নীতি নেই। আজ এই পার্টি তো কাল ওই পার্টি। ট্রেনের বগির মতো, আজ এই বগিতে কাল ওই বগিতে। আমার তো কারও সঙ্গে ঝগড়া বা লড়াই নেই।'
আরও পড়ুন- বোনের বিরুদ্ধে প্রচারে নামবেন না দাদা বাবুল, আশায় ভবানীপুরের বিজেপি প্রার্থী
২০১৮-এর মার্চে ছেলেকে হারানোর পর দাঁতে দাঁত চেপে আসানসোল শহরে শান্তির জন্য লড়াই করেছিলেন এই ইমাম। ছেলের বদলা নিলে তিনি শহর ছেড়ে চলে যাবেন বলেও জানিয়ে দিয়েছিলেন। সেদিন বাবুল সুপ্রিয় ছিলেন মোদি মন্ত্রীসভার সদস্য ও আসানসোলের সাংসদ। সাংসদের দায়িত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন ইমাম রশিদি। আসানসোলের দু'বারের সাংসদ মন্ত্রিত্ব খুইয়ে এখন ঘাসফুল শিবিরে যোগ দিয়েছেন।
ইমদাদুল্লাহ রশিদি বাবুলের বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে যাওয়া নিয়ে এবারও সরাসরি কোনও আক্রমণ করেননি। তবে পরোক্ষে বুঝিয়ে দিয়েছেন অনেক না-বলা কথা। তিনি বলেন, 'আমরা সাধারণ মানুষ বোকা। যাঁরা রাজনৈতিক নেতা তাঁদের রাজনীতিতে আমরা জড়িয়ে পড়ি। দেখুন নেতারা ভিতরে সব একই। যেই হোক। তাঁরা আসলে কেউ আলাদা আলাদা নয়। শুধু ওপরে ওপরে আলাদা।'
পুত্রশোকে মুহ্যমান হয়েও আসানসোল শহরে শান্তিস্থাপন করতে বিশেষ ভূমিকা নিয়েছিলেন ইমাম ইমদাদুল্লাহ। সেদিন সাংসদের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলতে ছাড়েননি ইমাম। বাবুলের দলবদল নিয়ে বেঙ্গল ইমামস অ্যাসোসিয়েশনও সুর ছড়িয়েছে। সংগঠনের চেয়ারম্যান মহম্মদ ইয়াহিয়া বলেছেন, 'দাঙ্গার ক্ষেত্রে বাবুল সুপ্রিয়র ভূমিকা নিয়ে আইনি লড়াই চলবে।'
আরও পড়ুন- ‘দলের বিরুদ্ধে বড় প্রতিশোধ’, বাবুল খুইয়ে দাবি বঙ্গ বিজেপির
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন