সম্প্রতি রাজনীতির কতগুলি ঘটনা পাশাপাশি রাখলে যে কেউ ভিমরি খেতে বাধ্য। ভারতের রাজনীতিতে হচ্ছেটা কী? কোনটা রাজনীতির কূটকৌশল আর কোনটা গটআপ তত্ব? তা নিয়ে রীতিমতো শোরগোল পড়ে গিয়েছে রাজনৈতিক মহলে। I.N.D.I.A জোট হওয়ার পর এইসব ঘটনা বাড়তি মাত্রা পেয়েছে।
বুধবার বিকেলে দিল্লিতে NCP নেতা শরদ পাওয়ারের বাড়িতে I.N.D.I.A জোটের সমন্বয় কমিটির গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক। তখন তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় সল্টলেকে সিজিও কমপ্লেক্সে ইডির মুখোমুখি। শিক্ষা নিয়োগ দুর্নীতিতে তৃণমূলের সেকেন্ড ইন কমান্ডকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের দুঁদে গোয়েন্দারা। তদন্তে হাজির অথচ কড়া পদক্ষেপও করা যাবে না! অন্যদিকে তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্পেন সফরে। তাঁর আগে দিল্লিতে জি ২০ বৈঠকের ফাঁকে কেন্দ্রীয় স্বারাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগীর সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথোপকথনের ছবিও দেখা গিয়েছে। বিজেপি বিরোধী জোটের বৈঠকে তৃণমূলের কোনও প্রতিনিধি হাজির না থাকাও বিশেষ কৌশল বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল। অভিষেকের হয়ে ব্যাট ধরেছেন জোটের নেতা সঞ্জয় রাউত।
প্রতিটি ঘটনার সঙ্গে আরেকটি ঘটনার কি কোনও মিল আছে? এই প্রশ্ন রয়েছে রাজনৈতিক মহলেও৷ কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার বিরুদ্ধে তৃণমূলের হয়ে যাতে ইন্ডিয়া জোটের নেতৃত্ব গলা ফাটিয়ে বিরোধিতা করবে, এই আশঙ্কাই করছিলেন এরাজ্যের কংগ্রেসের একাংশ৷ অভিজ্ঞ মহলের মতে, ইন্ডিয়া জোটে থাকার তৃণমূল কংগ্রেসের এটা পজিটিভ দিক। আবার অমিত শাহদের সঙ্গে মমতার বৈঠক নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিয়েছে এরাজ্যের সিপিএম ও কংগ্রেস। রাজ্য সিপিএম তো মনেই করে বিজেপি-তৃণমূলের গট-আপ রয়েছে পুরোপুরি। অথচ ওই জোটেই আছে এই তিন দল।
আবার অভিষেককে ইডি তলব করল ১৩ সেপ্টেম্বর, বুধবার। একেবারে I.N.D.I.A জোটের দিল্লির বৈঠকের দিন। এক দিন আগেও তো তলব করতে পারত, অভিমত অভিজ্ঞ মহলের। তৃণমূল দাবি করছে, দিল্লির বৈঠকে অংশ নেওয়া আটকাতেই এই তলব। কিন্তু ভিন্ন প্রশ্নও উঠছে রাজনৈতিক মহলে। আবার গ্রেফতার হওয়ার কোনও সম্ভাবনা নেই। অতএব ইডির ডাকে সাড়া দেওয়া বেশি গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেছে তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্ব। অভিষেককে এদিনের জিজ্ঞাসাবাদে ভরসা নেই শুভেন্দু অধিকারীরও। একদিকে যখন দিল্লিতে জোটের সমর্থন পাচ্ছেন অভিষেক পাশাপাশি সিজিওর বাইরেও নিজের সমর্থনে বলার সুযোগ থাকছে। এই সময়েই দুবাই হয়ে স্পেনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। উল্লেখ্য, রাজীব কুমারের বাড়িতে সিবিআই হানা দেওয়ায় ধর্মতলায় ধরনায় বসেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী।
রাজনীতির হালচাল সহজে সোজা অঙ্কে মেলে না, এখন তো রাজনীতির কারবার দেখে ভিমরি খেতেই হবে। কখন যে কি হচ্ছে তা বোঝার আগেই যেন খেলা ঘুরে যাচ্ছে। এখন বঙ্গ রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, 'খেলা হবে' বাংলাদেশ থেকে এই বঙ্গে কামাল করেছে। এবার কি দিল্লির ময়দান কাঁপাতে চলেছে 'খেলা হবে'? যদিও কথায় আছে দিল্লির লাড্ডু। খেলেও পস্তাবে না খেলেও পস্তাবে।