আইএনটিটিইউসির কতৃত্ব নিয়ে বিরোধ দীর্ঘ দিনের। তৃণমূল কংগ্রেসের শ্রমিক সংগঠনের নেতৃত্ব নিয়ে ধোঁয়াশা ছিল বরাবরই। এই সংগঠনের অন্তর্কলহ ভয়ঙ্কর স্তরে পৌঁছে রক্তারক্তি পর্যন্ত হয়েছে। ২১ জুন নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে দলনেত্রী স্পষ্ট নির্দেশ দিয়েছেন, শ্রমিক সংগঠনের দায়িত্ব সামলাবেন সাংসদ দোলা সেন। বাকিদের এই নিয়ে না ভাবলেও চলবে। ইঙ্গিত ছিল একেবারে পরিস্কার। তখনই সভাস্থলে গুঞ্জন শুরু হয়ে গিয়েছিল।
বিদ্যুৎমন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়কে বৃহস্পতিবার ও পঞ্চায়েত মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়কে শুক্রবার তৃণমূল ভবনে বসতে বলেছেন দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজনৈতিক মহলের ধারণা, এই দুই নেতার ক্ষোভ প্রশমিত করতেই তাঁদের এই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তবে আদৌ আইএনটিটিইউসির গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব মিটবে কী না তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েই গিয়েছে।
দলনেত্রীর নির্দেশে বৃহস্পতিবার তৃণমূল ভবনে গিয়েছিলেন শোভনদেব। এদিন তিনি বলেন, "সাধারন ভাবে প্রয়োজনের তাগিদে অনেক মানুষ তৃণমূল ভবনে আসেন। তাঁদের সমস্যার কথা শুনে তা মিটিয়ে ফেলার কথা বলেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।"
এদিকে সুব্রতবাবুকে শুক্রবার তৃণমূল ভবনে বসতে বলেছেন দলনেত্রী। সুব্রতবাবু বলেন, "আমাকে প্রতি শুক্রবার দলীয় কার্যালয়ে যেতে বলেছেন। সময় অনুযায়ী আগামীকাল সেখানে যাব।"
আরও পড়ুন: ২১ জুলাই সফল করতে ফেসবুক প্রোফাইল পিকচারে ঝড় তুলতে মরিয়া তৃণমূল
একথা সর্বজনবিদিত যে দীর্ঘদিনের শ্রমিক সংগঠনের অভিজ্ঞতা রয়েছে সুব্রত এবং শোভনদেবের। বিদ্যুৎমন্ত্রীর পরিচিতি মূলত শ্রমিক নেতা হিসেবেই। দুই নেতাই বিভিন্ন সংস্থার শ্রমিক সংগঠনের দায়িত্ব সামলেছেন। তাঁদের সরিয়ে দেওয়া নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব তাঁরা এড়িয়ে গিয়েছেন। কিন্তু আড়ালে আবডালে অনেকেই বলছেন, ওই সিদ্ধান্তে শ্রমিক নেতৃত্বের একাংশ খুশি নয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শ্রমিক নেতা বলেন, চাকরি না করে বা শ্রমিক না হলে প্রকৃত ট্রেড ইউনিয়ন নেতা হওয়া কঠিন। অনেক ক্ষেত্রে নেতা চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে। আইএনটিটিইউসির একাংশের ক্ষোভ, "পূর্ণাঙ্গ রাজ্য কমিটি তৈরি না করে সংগঠন চালাচ্ছেন নতুন সভাপতি।"
আইএনটিটিইউসিতে পূর্ণাঙ্গ রাজ্য কমিটি বা নতুন কমিটি গঠন করবেন না বলে জানিয়ে দিয়েছেন নয়া সভাপতি দোলা সেন। তিনি বলেন, "আমি কেন আলাদা করে কমিটি গঠন করব? মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আইএনটিটিইউসির কমিটি করে দিয়েছিলেন ২০০৯ সালের ৪ সেপ্টেম্বর। রাজ্যের কোর কমিটির সদস্য ও জেলার সভাপতি তিনিই ঠিক করে দিয়েছিলেন। ঘটনাচক্রে তাদের পারফর্মেন্স ভাল ছিল। তোলাবাজির মধ্যে তাঁরা থাকেন না। তাই ২০০৯ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত কাউকে পরিবর্তন করেননি। ওই কমিটিটাই চলবে।"
তবে তৃণমূল শ্রমিক সংগঠনের একাংশের বক্তব্য, "২০০৯ সাল থেকে একটি কমিটি দায়িত্বে আছে। এখন পর্যন্ত কোনও প্রতিষ্ঠিত সংস্থায় সিপিএম বা বিজেপির ইউনিয়নকে হঠাতে পারেনি। রিজার্ভ ব্যাঙ্ক বা অন্য ব্যাঙ্ক, রেল, এসব জায়গায় তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠন কোনও দাগ কাটতে পারেনি। রাজ্যে কেন্দ্রীয় সরকারের যে সংস্থাগুলি আছে সেখানে সংগঠনের বিস্তার হয়নি। বাম ও বিজেপির শ্রমিক সংগঠনকে সরাতে পারছে না, অথচ কিছু ক্ষেত্রে নিজেদের মধ্যে কামড়াকামড়ি করছে।"
আরও পড়ুন: জনসাধারণের টাকায় বিলাসিতা নয়, নবান্নের বৈঠকে বার্তা মমতার
তৃণমূল শ্রমিক সংগঠন যে এখনও ব্যাঙ্কিং সহ অনেক ক্ষেত্রেই নিজেদের বিস্তার করতে পারেনি, তা স্বীকার করেছেন দোলা সেন। তাঁর কথায়, "আইএনটিটিইউসি সেন্ট্রাল ট্রেড ইউনিয়ন তো নয়। ব্যাঙ্কিং সেক্টর বা রেলে সংগঠন বাড়ানোর চেষ্টা চলছে। রেলে ঠিকা শ্রমিকরা অনেকেই এখন আমাদের সংগঠনের সদস্য। সবে দায়িত্ব পেলাম, এক বছর তো সময় লাগবে।"
সংগঠনের অন্তর্দ্বন্দ্ব আসলে বড় করে দেখানো হয় বলে দাবি নয়া রাজ্য সভাপতির। তিনি বলেন, "১০ হাজার ইউনিয়ন থাকলে ১০ জায়গায় বিবাদ ছিল। সেটাই প্রচার চলত। এখন কোনও সমস্যা নেই। মুকুল রায় দায়িত্ব নিয়েছিলেন ব্যাঙ্ক ও রেলে সংগঠন করে দেবেন বলে।"
সুব্রত এবং শোভনদেবের ভবনে বসা নিয়ে চর্চা শুরু হয়েছে দলের অন্দরে। আলোচনা প্রসঙ্গে আইএনটিটিইউসি থেকে তাঁদের সরানোর বিষয়টি উঠে আসছে। তবে দোলা সেনের দাবি, "তৃণমূল ভবনে বসার সঙ্গে আইএনটিটিইউসির কোন সম্পর্ক নেই। সোম, মঙ্গল ও শুক্রবার আমি ভবনে যাই। দলের অনেক নেতা নিয়মিত যান না। তাই বাকি সকলকে নিয়ম করে যেতে বলেছেন নেত্রী।"