বিজেপির মেরুকরণের রাজনীতির সঙ্গে লড়তে 'বাঙালি অস্মিতা'র পথই ধরলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নৈহাটিতে ঘরছাড়াদের ঘরে ফেরাতে গিয়ে বাঙালিদের উদ্দেশে তৃণমূল সুপ্রিমোর প্রশ্ন, "আপনারা এত ভিতু কেন"? এরপরই 'জয় শ্রীরাম' ধ্বনী তুলে তাঁর গাড়ির ওপর 'হামলাকারী'দের উদ্দেশে মমতার গর্জন, "যাদের খাওয়াই, পড়াই তারাই বিজেপির টাকা নিয়ে আমার গাড়ির সামনে হামলা করতে এসেছিল! আমি তাদের বলে দিতে চাই, আদিম হিংস্র মানবিকতার যদি আমি কেউ হই স্বজনহারানো শ্মশানে তোদের চিতা আমি তুলবই"।
বৃহস্পতিবার নৈহাটির অবস্থান বিক্ষোভে মমতা আগাগোড়াই জঙ্গি মেজাজে বক্তৃতা করেছেন। উত্তর চব্বিশ পরগনা বরাবরই রাজ্যের শাসকের সঙ্গে থেকেছে। একদা বাম গড় হিসাবে পরিচিত এই জেলা পরবর্তী সময়ে সবুজে রেঙে উঠেছে। তবে লোকসভার ফল ঘোষণার পর দেশের সর্বোচ্চ জনসংখ্যার জেলার দুটি কেন্দ্রে পদ্ম ফুটেছে। আর এতেই রাতের ঘুম উড়েছে তৃণমূলের। রাজ্যের শাসক দলের কাছে এ মুহূর্তে সম্মানের লড়াইয়ের প্রেক্ষিতে সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে ব্যারাকপুর লোকসভা কেন্দ্রটি। এমনিতেই মুকুল রায়ের হাত ধরে অর্জুন সিং-এর বিজেপিতে যোগদান এবং লোকসভায় হারের ফলে ব্যাকফুটে তৃণমূল। এর ওপর নির্বাচন পরবর্তী হিংসায় অশান্ত নৈহাটি-কাঁকিনাড়া শিল্পাঞ্চল। তৃণমূলের অভিযোগ, অর্জুনবাহিনীর দাপাদাপিতেই ঘরছাড়া ঘাসফুল কর্মীরা। এদিন সেই ঘরছাড়াদের ঘরে ফেরাতেই অবস্থান বিক্ষোভে বসেছে মমতার দল। সেই মঞ্চ থেকে এদিন আগুনে মেজাজে বক্তৃতা রাখলেন মমতা।
আরও পড়ুন: জয় শ্রীরাম বলাচ্ছেন অনুব্রত, কী করবে বিজেপি?
কী বললেন মমতা?
*আমি গুলির বিরুদ্ধে লড়াই করে বেঁচে থাকি। আমাকে সেন্ট্রাল গভর্নমেন্ট দেখাবেন না। বিজেপির দয়ায় আমরা এখানে নেই। ওরাও নির্বাচিত, আমরাও নির্বাচিত। আগামী দিনের ভরাডুবিটা চোখে দেখবেন এবার। এখনও শপথ নেননি, তার আগেই মানুষের উপর অত্যাচার! তাহলে শপথের পর কী হবে? ওরা ভাবছে, বাংলাটা গুজরাট হবে। আমি বলছি, হবে না...হবে না...হবে না।
*যারা গদ্দারদের গ্যাস খেয়ে বাড়ির মেয়েদের হাত ধরে টেনে নিয়ে গিয়েছে, হাসপাতাল বন্ধ করে দিয়েছে, তাদের সাবধান করে দিচ্ছি।
*পুলিশ এই ক’দিন (নির্বাচন ঘোষণা হওয়ার পর থেকে) আমার আওতায় ছিল না। নির্বাচন কমিশনের নিয়ন্ত্রানাধীন পুলিশ কোনও কাজই করেনি। ৪০০ এফআইআর হয়েছে, ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। পুলিশের ভূমিকাকে তিরস্কার করছি। নির্বাচন কমিশনের চাকরি বাঁচাতে গিয়ে আপনারা মানুষকে বিপদে ফেলে দিয়েছেন। আমি দুঃখিত। গতকাল থেকে আইন-শৃঙ্খলা আমার হাতে এসেছে। এবার একটাও অত্যাচার দেখলে সেই পুলিশের বিরুদ্ধে আমিও ব্যবস্থা নেব। কাল থেকে নতুন ব্যবস্থা তৈরি করে দিয়েছি। কত টাকা পকেটে নিয়েছেন? সবাই নেয়নি, কিন্তু, কেউ কেউ নিয়েছে। আমি ভয়ঙ্কর লোক, এসব ভয় পাই না।
*জুটমিলের সামনে দেখলাম যাদের খাওয়াই, পড়াই তারাই বিজেপির টাকা নিয়ে আমার গাড়ির সামনে হামলা করতে এসেছিল। আমি তাদের বলে দিতে চাই, আদিম হিংস্র মানবিকতার যদি আমি কেউ হই স্বজনহারানো শ্মশানে তোদের চিতা আমি তুলবই"।
আরও পড়ুন: মমতাকে ‘গালিগালাজ’, পালটা হুঙ্কার তৃণমূল সুপ্রিমোর
*চ্যালেঞ্জ করছি, আগামী বিধানসভাতে একটাও সিট পাবে না, কাউন্সিলরও পাবে না। আমাকে আঘাত করলে আমি প্রত্যাঘাত করি। দীনেশ দা তো হারেননি। মাত্র কয়েকটা ভোটে গুন্ডামি করে হারানো হয়েছে।
*বাঙালিরা এত ভিতু কেন? কেউ হাত দিক আপনাদের গায়ে, তারপর আমি দেখব। কাউন্সিলরদের বলছি, অফিস খুলে বসুন। এরা বাঙালি আর হিন্দিভাষীর মধ্যে বিভাজন করতে চাইছে। যদি এটা হয়, তবে ভয়ঙ্কর হবে। ৪০ শতাংশ ভিন রাজ্যের লোক এখানে থাকেন। আপনি বাঙালি হিন্দু আর হিন্দিভাষী হিন্দুর মধ্যে ঝামেলা লাগাচ্ছেন। আমি শুনলাম, বাঙালি ঘরের মেয়েদের হাত ধরে টেনে নিয়ে যাচ্ছে। সাহস তো কম না! যারা ঝামেলা করছে তাদের সবার নাম পেয়ে গিয়েছি, পুলিশের হাতে নাম দিয়ে দেব।
*ওরা আরএসএস করলে, আমরা জয় হিন্দ বাহিনী গড়ব। ব্লকে ব্লকে জয়হিন্দ বাহিনী তৈরি করুন। ব্যারাকপুর থেকেই শুরু করুন। আর বঙ্গজননী কমিটি গঠন করুন। ৫০০ ব্লকে এই বাহিনী কাজ করবে। পুরুষরা সাদা পাজামা-পাঞ্জাবী পরবে এবং গঙ্গা যমুনা পাড়ের শাড়ি পরবেন মহিলারা। এই বাহিনী-কমিটির হাতে 'শান্তিনিকেতনী লাঠি' তুলে দেওয়ার নির্দেশও দিয়েছেন মমতা।
*(অর্জুন সিং-এর উদ্দেশে) আপনার তো অনেক টাকা। সরকারের ৮০০ কোটি টাকা চোট করেছেন, কাগজ পেয়ে গিয়েছি। কোথায় পালাবান এবার, ব্যাঙ্ককে? নাকি দিল্লির ভোটার হবেন? যারা দিল্লির ভোটার হয়ে গিয়েছে, তারা বাংলায় অত্যাচার করছে। উল্লেখ্য, মুকুল রায় বর্তমানে দিল্লির ভোটার।
*যাদের ঘরবাড়ি ভাঙা হয়েছে, ক্লাব ভাঙা হয়েছে, তাঁদের নামের তালিকা তৈরি করে দিন। নিয়ম অনুযায়ী, কেউ দাঙ্গা করে জোর করে ভাঙলে, সরকার গড়ার কাজে সাহায্য করতে পারে। পার্টি অফিসটা আমরা দলের পক্ষ থেকে দেখে নেব।
*১৪ জুন, কাঁচরাপাড়ার কাচরা হঠাতে বুথ স্তরের কর্মীদের সঙ্গে বৈঠক করব।