ঘটনার পর পেরিয়ে গিয়েছে এক সপ্তাহ। গুলিতে মৃত দুই নিথর দেহ শায়িত রাখা হয়েছে নদীর পাশে। কোনরকমে কবরস্থ করা হয়েছে। কবে সেই দেহের ফরেন্সিক তদন্ত হবে, সেই অপেক্ষায় রয়েছেন মৃতদের পরিবার এবং দাড়িভিটের গ্রামবাসীরাও। শুধু তাই নয়, গ্রামবাসীরা রাতদিন পালা করে তীর-ধনুক নিয়ে আগলে রাখছেন দুই যুবকের মৃতদেহ। তাঁদের আশঙ্কা, পুলিশ কবর থেকে তুলে নিয়ে যেতে পারে মৃতদেহ। রাতে গ্রামে পুলিশ ঢুকলেই তাই সতর্ক থাকছেন তাঁরা। প্রয়োজনে সিসিটিভি বসানো হবে বলেও স্থির করেছেন গ্রামবাসীদের একাংশ।
বৃহস্পতিবার গ্রামে ঢুকতেই দেখা গেল, অধিকাংশ চোখেমুখেই এখনও আতঙ্কের ছাপ স্পষ্ট। খণ্ডযুদ্ধের রেশ বিন্দুমাত্র কাটেনি। তবে রাজেশ সরকার ও তাপস বর্মণের মৃত্যুর প্রতিবাদ জানাতে এককাট্টা গ্রামের মানুষ। বাড়ির লোকেরাও জানিয়ে দিয়েছেন, অন্ত্যেষ্টি নয়, আগে মৃতদেহের ময়নাতদন্ত হোক। পুলিশ ঘটনার রাতে যেভাবে ময়নাতদন্ত করেছে, তার ওপর স্পষ্টতই ভরসা নেই গ্রামবাসীদের।
আরও পড়ুন: খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে ছন্দে ফিরছে ইসলামপুর, কিন্তু আন্দোলনের হুমকি ব্যবসায়ীদের
তাপস বর্মনের মা মঞ্জু বর্মন এখনও বারেবারে মূর্ছা যাচ্ছেন। তবু তাঁর দাবি, "এখনই সৎকার করার প্রয়োজন নেই। ছেলের দেহ পরীক্ষা করে দোষীদের উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা করুক সরকার। আমাদের অর্থের কোনও প্রয়োজন নেই, চাই শুধু দোষীদের শাস্তি।" তাপসের বাবা বাদল বর্মণ এবং বোন ডলিও চাইছেন, দোষীদের শাস্তি হোক। রাজেশের বাবা নীলকমল সরকারও চাইছেন অর্থ নয়, শাস্তি। তাই ধরা পড়ে থাকলেও ছেলের অন্ত্যেষ্টি চাইছেন না রাজেশের পরিবারও। গ্রামবাসীদেরও স্পষ্ট বক্তব্য, "আর্থিক সাহায্য বা চাকরি নয়, চাই অভিযুক্তদের সাজা।"
আদালতের রায়ের অপেক্ষায় বা সিবিআই তদন্তের আশায় মৃতদেহ কবরে রাখার ঘটনা এই দেশে সম্ভবত নজিরবিহীন। এই আশাতেই এখন চঞ্চলা নদীর একেবারে ধারে দুই যুবকের দেহ পাহারা দিচ্ছেন গ্রামবাসীরা। গ্রাম থেকে নড়বড়ে বাঁশের সেতু দিয়ে নদী পার হতে হয়। দুই মৃত যুবককে পাশাপাশিই কবরস্থ করা হয়েছে।
তীর-ধনুক হাতে আদিবাসীরা তাক করে বসে রয়েছেন। কেউ কবর স্পর্শ করলেই ছুটবে তীরের ফলা। গ্রামের বাকি মানুষও সারাক্ষণ নজর রাখছেন। উর্দিধারী পুলিশ শুধু নয়, নদীর পারে যে কোনও অচেনা মানুষের যাতায়াতের ওপরও নজর রাখছেন গ্রামবাসীরা। তাঁদের বক্তব্য, পুলিশ সাদা পোশাকেও নদীর পার থেকে মৃতদেহ নিয়ে চম্পট দিতে পারে। তারপর দাহ করে দেবে। তাহলে সঠিক তদন্ত সম্ভব হবে না। দোষীরাও অধরা থেকে যাবে। গ্রামবাসী রাজু হেমব্রম জানালেন, "স্কুলে পুলিশের গুলিতে দুজন মারা গিয়েছেন। এখন অবধি একজন দোষীও ধরা পড়েনি, কিন্তু গ্রামের কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। যখন তখন এই দুটি দেহ নিয়ে যেতে পারে পুলিশ, তাই আমরা পালা করে পাহারা দিচ্ছি।"