ক্ষণেক্ষণে গান্ধী মূর্তির পাদদেশে গিয়ে রাজনৈতিক নেতা-নেত্রীদের বসে পড়ার ঐতিহ্যের দীর্ঘদিনের সাক্ষী শহর কলকাতা। এবার তার সাক্ষী রইল দেশের রাজধানী দিল্লি। কেন্দ্রীয় এজেন্সির ব্যবহার নিয়ে রাজনৈতিক কোন্দলে গত ক'দিন ধরেই দিল্লি উত্তাল। সেই ছবিটাই বৃহস্পতিবার ঘুরে গেল গান্ধী শরণে। রাজঘাটে মহাত্মা গান্ধীর স্মৃতিসৌধে গিয়ে শ্রদ্ধা জানাল আপ। উদ্দেশ্য, বিজেপি দেশের গণতান্ত্রিক কাঠামো ভাঙছে। যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো ভাঙছে। এই অভিযোগে স্ট্যাম্প মেরে অহিংসার নীতিতে প্রতিবাদ। হাল ছাড়ার পাত্র নন বিজেপি নেতারাও। কেজরিওয়ালরা সরতেই তাঁরা এলেন। গঙ্গাজল ছিটোলেন রাজঘাট চত্বরে।
বৃহস্পতিবার আপের এই প্রতিবাদের সূত্রপাত হয়েছিল দিল্লিতে অরবিন্দ কেজরিওয়ালের বাসভবনে। আম আদমি পার্টি (আপ) কর্মীরা তখন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী এবং পার্টি সুপ্রিমো অরবিন্দ কেজরিওয়ালের বাসভবনের বাইরে একটি কলম এবং কাগজ নিয়ে অপেক্ষা করছিলেন। সেখানে তাঁদের কেবল একটিই প্রশ্ন ছিল– কতজন দলীয় বিধায়ক এসেছেন?
বুধবার আপ অভিযোগ আনে, তাঁদের চার বিধায়ককে বিজেপিতে যোগ দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। প্রত্যেককে ২৫ কোটি টাকা করে ঘুষ দেওয়া হবে। অবশ্য অভিযোগ অস্বীকার করে বিজেপি আপকে প্রমাণ দিতে বলে। এরপরই আপের নয় সদস্যের রাজনৈতিক বিষয়ক কমিটি বৃহস্পতিবার বৈঠক ডাকে। কেজরিওয়ালের বাড়িতে বিধায়কদের সবাইকে আসতে বলে দেয়।
আরও পড়ুন- রুশদির ওপর হামলা নিয়ে সাবধানী মোদী সরকার, ১৩ দিন পরও রেখেঢেকে নিন্দা
কিন্তু, বৃহস্পতিবার বৈঠক শুরুর কয়েক ঘণ্টা আগে, আপ নেতারা অভিযোগ করতে থাকেন, তাঁদের ৬-৭ জন বিধায়ককে ফোনে ধরতে পারছেন না। বৈঠকের কথা ছিল সকাল ১১টায়। সময় যতই এগোতে থাকে, আপ শিবিরে ততই বাড়তে থাকে উদ্বেগ। আপ নেতৃত্ব দাবি করেন, তাঁদের এক-তৃতীয়াংশ বিধায়ক বৈঠক আসেননি। অভিযোগ ওঠে, মহারাষ্ট্রের কায়দায় দিল্লিতেও বিরোধীদের সরকার ফেলার তোড়জোড় শুরু করেছে বিজেপি।
শেষ পর্যন্ত অবশ্য তেমনটা কিছু বৃহস্পতিবার হয়নি। দুপুরে আপ নেতারা জানিয়ে দেন, তাঁদের সমস্ত বিধায়কই সভায় যোগ দিতে কেজরিওয়ালের বাড়িতে পৌঁছেছেন। দিল্লির আপ সরকারও স্থিতিশীল। তাঁদের মধ্যে কয়েকজন শহরে না-থাকায় অবশ্য বৈঠকে পৌঁছতে পারেননি। তবে, তাঁদের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা গিয়েছে।
ওখলার বিধায়ক আমানতুল্লাহ খান, 'ট্র্যাফিক জ্যামে আটকে' থাকায় পৌঁছতে পারেননি। তবে তিনি কেজরিওয়ালের সঙ্গে ভিডিও কলে কথা বলেছেন। এমনটাই জানিয়েছেন আপের সর্বভারতীয় মুখপাত্র এবং গ্রেটার কৈলাসের বিধায়ক সৌরভ ভরদ্বাজ।
আপ এসব বলার পরই বিজেপি অভিযোগ করে, কোটি কোটি টাকার দুর্নীতি থেকে নজর ঘোরাতেই কেজরিওয়াল এই সব নাটক করেছেন। দিল্লি সরকারের আবগারি নীতিতে কোটি কোটি টাকা নয়ছয় হয়েছে। যার দায়ে অভিযুক্ত আপের সেকেন্ড-ইন-কমান্ড তথা দিল্লির উপমুখ্যমন্ত্রী মণীশ সিসোদিয়া। এমনকী, কেজরিওয়াল নিজেও অভিযুক্ত। সেখান থেকে নজর ঘোরাতেই বিধায়ক কেনাবেচার মিথ্যে অভিযোগ তুলে নাটক করলেন কেজরিওয়াল।
অবশ্য বিজেপির অভিযোগ গায়ে না মেখে বাড়ির বৈঠক শেষ করেই ৫০ জন দলীয় বিধায়ক নিয়ে কেজরিওয়াল হাঁটা দেন রাজঘাটে, গান্ধী সৌধের কাছে মৌন প্রতিবাদ জানাতে। সেখানে দলীয় বিধায়কদের নিয়ে তাঁকে প্রার্থনা করতেও দেখা যায়।
Read full story in English